Thursday, March 26, 2009
আবহমান...
আবহমান...
রণদীপম বসু
খোদ মহানগরীতে রাস্তার পাশে বটগাছ ! খুব একটা চোখে পড়ে না। তবু অযত্নে অবহেলায় বেড়ে ওঠা এরকম একটা অল্পবয়েসী গাছের গোড়ায় মাটি ফেলে কারা যেন অতি যত্ন করে ইট সিমেন্টের একটা গোলাকার বেদী বানিয়ে রেখেছে। অতএব পাশে একটা টং-দোকান তো নিশ্চিৎ ! চা পান সিগারেট। আর হাল আমলের মোবাইল সংস্কৃতির সলতে ধরে ফেক্সিলোডের চেয়ার টেবিল পেতে বসাটাই তো স্বাভাবিক। বেশ একটা জমজমাট অবস্থা, বিশেষ করে দুপুরের দিকে। খররৌদ্রের দাবদাহে পুড়ে ঘর্মাক্ত কপালটা গলার গামছায় মুছতে মুছতে জিরিয়ে নেয়া রিক্সাচালকটির মতো গাড়িঅলা সাহেবের অপেক্ষারত ড্রাইভার কিংবা লাঞ্চবিরতির ফাঁকে দু’টান সিগারেটের ধোঁয়ায় একটু আরাম খোঁজেন চাকুরে বাবুটিও। শ্রেণীপেশার ভেদাভেদ ভুলে বহুবিচিত্র কর্মজীবী মানুষগুলোর এই দু’দণ্ড জিরিয়ে নেয়ার ফাঁকে কোত্থেকে হাজির হলো বাউলগোছের লোকটি। কাঁধে ঝোলানো দোতারাটার দিকে চেয়ে উৎসাহী কারো অনুরোধ তুঙ্গে পৌঁছতেই ব্যাস, জমে ওঠলো মেলা !
আবহমান বাঙালির বুকের ভেতরে পোষা চিরায়ত স্রোত মুহূর্তেই ছলকে ওঠে দোতারার টান আর বাউলের সহজিয়া সুরে। ভেঙে যায় সব বাধ। খঞ্জনি হাতে কেউ একজন দাঁড়িয়েও গেলো। বাউলের কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে উদাত্ত হয়ে ওঠলো সেও। না থাক সুর, তাতে কী ! প্রাণের প্রাচুর্য তো আছে ! টং-দোকানের ফিল্টার পানির শূন্য কন্টেইনারটাই টেনে নিলো আরেকজন। শিল্পী হয়ে ওঠা শ্রমজীবী হাতের ঠুকঠাক তালে সত্যি সত্যি আসরটাই গরম হয়ে ওঠলো এবার। উৎসাহী পথচারীদের বুকেও একে একে ছড়িয়ে গেলো গ্রাম বাংলার লোকায়ত সুরের সেই চিরচেনা আহ্বান, নগরীর ইট-কাঠ-রড-সিমেন্টের তলায় চাপা পড়েও যা হারিয়ে যায় নি, হারায় না-
কই যাওরে বন্ধু তুমি আমারে ছাড়িয়া
তুমি ছাড়া জীবন যৌবন রাখি কার লাগিয়া
বন্ধু কইয়া যাও কইয়া যাওরে...।।
[sachalayatan e-book]
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment