Friday, March 6, 2009
# ম্যালা কথা বইমেলায়। ০৩। ছিঃ ছিঃ কী লজ্জা !
ম্যালা কথা বইমেলায়। ০৩। ছিঃ ছিঃ কী লজ্জা !
রণদীপম বসু
[চলমান সতর্কবাণী ঃ এই সিরিজের পর্বে পর্বে বর্ণিত চরিত্রে কিংবা ঘটনা প্রবাহে কেউ কোনরূপ সাদৃশ্য বা মিল খুঁজিয়া পাইলে তাহা ব্যক্তির স্বেচ্ছাকল্পিত অতি সৃজনশীলতা বলিয়া গণ্য হইবে]
বেশ দীর্ঘ লাইন দিয়েই মেলায় ঢুকলাম সেদিন। ভীড়ও প্রচুর। অন্যদিনের চেয়ে বেশিই হবে। তবে নানান রঙ ও বয়েসী তরুণ-তরুণীদের সরব আধিক্য চোখে পড়ার মতো। জাতির গর্বিত নাগরিক হিসেবে খুবই আশাবাদী হয়ে ওঠলাম, বাহ্ , বইয়ের প্রতি এই তরুণরা কেবল নিজেরাই আকৃষ্ট হচ্ছে তা নয়, সঙ্গিনীকেও টেনে আনছে জ্ঞানের জগতে। আবার অন্যদিকে তুমুল তরুণীদের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।
ভাবতেই ভালো লাগছে যে আগামীতে আমাদের টুটুল ভাইদেরকে মুখ গোমড়া করে আর হায় হায় পোস্ট দিতে হবে না ! ভাবতে ভাবতে সব বাদাইম্যা সচলদের আড্ডাখানা শুদ্ধস্বরের দিকে ছুটলাম। কিন্তু এ কী ! সবগুলো স্টলই তো দেখি ফাঁকা ! বইগুলো সব তেমনি আছে কেনার মানুষ নাই !
এতক্ষণ কী ভাবলাম আর দেখছি কী ! বিষয়টা খুবই রহস্যময় মনে হচ্ছে ! আর হবে না কেন, রহস্য তো বটেই ! একটু এগোতেই চোখে পড়লো দূরে ওই কোণায়, নজু ভাই। কিন্তু সাথে এই রূপসী ললনাটা কে ? নুপুর ভাবী তো নয়ই, কিন্তু এই রূপসীকে কোথাও কি দেখেছি ? সুন্দরী বউকে ফাঁকি দিয়ে কিসের এতো ফুসুর-ফাসুর ! অজান্তেই পকেট থেকে মোবাইল ক্যামটা হাতে উঠে এলো। এটা লক্ষ্য করেই কিনা রূপসীনীকে এড়িয়ে নজু ভাই’র সে কী চোখ টাটানো ! আহা, বেচারা হাঁ-ও করতে পারছে না, না-ও করতে পারছে না ! এমন একটা ভাব দেখাতে থাকলো যেন কস্মিনকালেও আমাকে চিনবে তো দূরের কথা, দেখেই নি কখনো !
নুপুর ভাবী এদিকেই আসছিলেন হয়তো। টের পেয়েই নজু ভাই’র আরেক রূপ, ভাজা মাছটিও উল্টে খেতে জানে না ! সুড়সুড় করে ঢুকে গেলো আরিফ জেবতিকের আড্ডায়। কিন্তু আরিফ ভাই যে কী সেয়ানা মাল সেটা আমাদের দেলগীর সাহেব আগে কতোটা জানতেন কে জানে, তবে এবার ঠিকই বুঝে ফেললেন যখন সরাসরি চার্জ করে বসলো। জেবতিকও যে এই চামে চামে ছিলো সেটাই বা কে জানতো ! চাঞ্চ না দেয়ায় সৈয়দ দেলগীর ওরফে নজু ভাই’র উপর সে কী খাপ্পা ! এই খাপ্পা থামতে থামতেই জেবতিকের কপালে ফের ছাই ! হায়, সেই রূপসী তখন আরেকজনের সাথে চুটিয়ে আড্ডায় !
কিন্তু এদিকে আবার এসব কী দেখছি ! আমাদের ছোট্ট ছেলে পান্থ কখন যে দিব্যি বড় হয়ে গেছে ! অবিশ্বাস্য কারবার ! সে এখন হাটের মধ্যেই বালিকাদের চোখে চোখ রেখে অনন্তকাল দাঁড়িয়ে থাকে ! চারদিকে যা দেখতে শুরু করেছি, আমার মাথা ভনভন করে ঘুরতে শুরু করেছে তখন ! বই ভেবে কই এলাম রে !
হুমড়ি খেয়ে পড়ার দশা আমার, যখন দেখি লাজ-লজ্জার মাথা খেয়ে এক বাড়ির বুইড়া আরেক বাড়ির বুড়িটার চোখে চোখ রেখে ডুবে গেছে অচিন সাগরে ! এই সমাজ, সংসার, আড্ডা, মেলা, বই, এ সবই বুঝি তুচ্ছ ওই সাগরাক্ষির কূলে। কিন্তু এই ডুবন্ত অভাগাটা মহামতি লীলেন ছিলো কিনা শ্মশ্রু বিষয়ক নমূনাহীনতার কারণে তা নিশ্চিৎ করা যায় নি।
কিসের মেলা, কিসের বই, কিসের কী ! এদিক ওদিক যেদিকেই মাথা ঘুরাই, দেখি এ ওর চোখে, ও তার চোখে, সে এর চোখে, অমুক তমুকের চোখে, তমুক আবার সমুকের চোখে, এক আউলাখিচুরি লারেলাপ্পার মেলা ! এখন আমার কী হবে ! আর আমাদের বাদাইম্যা সচলদের এই অবস্থাই বা করলোটা কে ? কারা এমন ষড়যন্ত্র করে এদের সহজ সরল মাথাগুলারে এরকম আউলাইয়া দিলো ! আর ভাবতে পারলাম না। তার আগেই চিন্তা আচ্ছন্ন হয়ে এলো...
নিরঙ্কুশ আচ্ছন্নতা কেটে যেতেই ভড়কে গেলাম, আমার পাশে এরা আবার কারা ! বুঝতে পারছিলাম না, কে বা কারা আমাকে কখন কোথায় এভাবে নিয়ে এলো ! এবং কিছুতেই মনে করতে পারছিলাম না তখনো, দিনটা কি চৌদ্দ ফেব্রুয়ারি ?
(০৬/০৩/২০০৯)
[sachalayatan]
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment