Thursday, March 5, 2009

# ম্যালা কথা বইমেলায়। ০২। প্রকাশক প্রোফাইল।


ম্যালা কথা বইমেলায়। ০২। প্রকাশক প্রোফাইল।
রণদীপম বসু

[চলমান সতর্কবাণী ঃ এই সিরিজের পর্বে পর্বে বর্ণিত চরিত্রে কিংবা ঘটনাচিত্র প্রবাহে কেউ কোনরূপ সাদৃশ্য বা মিল খুঁজিয়া পাইলে তাহা ব্যক্তির স্বেচ্ছাকল্পিত অতি সৃজনশীলতা বলিয়া গণ্য হইবে]


দেশের বাইরে থেকে মেলায় প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ করতে না পেরে প্রবাসী যাঁরা এবারের মেলা নিয়ে খুব আগ্রহী ও কৌতূহলী ছিলেন, তাঁদের মনোযাতনা কিছুটা হলেও আঁচ করা গেছে সকল কীর্তি-অপকীর্তির উৎস ইন্টারনেটের কল্যাণে। অন্তর্জালিক কলাগাছ চিবিয়ে যেটুকু পানি বা রস পেয়েছেন তার মধ্যেই হয়তো এরা কদলীর স্বাদ ও গন্ধ খোঁজার চেষ্টা করেছেন প্রাণপণে। আহা, নিরীহ নাকটা তাঁদের কখন যে দুর্দম রসের খোঁজে আগ বাড়তে বাড়তে এডওয়ার্ড লিয়রের নাকের মতোই হস্তিসূরাকৃতি ধরে ফেলেছে তা হয়তো এরা নিজেরাও জানেন না ! নইলে এরা প্রকাশনা জগতের আগামী নক্ষত্র মহামহিম আহমেদুর রশিদ টুটুল ওরফে আমাদের টুটুল ভাইয়ের ‘বইমেলা প্রতিদিন’ নামের এমন মন-কচলানো সিরিজ পোস্ট থেকে এতো রস পেলেন কী করে !


সবার মতো আমিও টুটুল ভাইয়ের এই প্রতীক্ষা জাগানো সিরিজ পোস্টগুলোতে হরদম ঢু মেরেছি আর পোস্টের কষ এড়িয়ে রসে টইটম্বুর আমাদের প্রবাসী সচলদের হাজারে বিজারে রসালো কমেন্টসগুলোতেই আরামসে লাফঝাপ করেছি ! কিন্তু রসের খোঁজে এসে আমাদের এই প্রবাসী সচলরা যে নিজেদের রসটুকুই ছাড়তে ছাড়তে উল্টো আমাদেরকে ভাসিয়ে দিয়েছেন তা কি জানেন তাঁরা ? জানেন না। জানলে কি আর টুটুল ভাই’র চিবাইন্না কলমের কিংবা কীবোর্ডের প্যাঁচে পড়েন !


বিশ্বাস হচ্ছে না ! তাহলে এবার সবাই একটু মনে করার চেষ্টা করুন তো, টুটুল ভাই কিন্তু প্রায় পোস্টেই হাহাকার করেছেন বিক্রি নাই বিক্রি নাই বলে ! অথচ আমি জানি, রমণী উৎপাতকারী নজুভাই’র মতো দুএকজন সচল বাদে মেলায় আগত বাকি সব সচলরাই আমার সপক্ষে পারলে দুটো হাতই তুলে ধরবেন। এমনও দেখা গেছে, বিকেলে কোন লেখকের বইটি হয়তো শুদ্ধস্বরের স্টলে এসেছে। অথচ সন্ধ্যায় মোড়ক উন্মোচনের জন্য দেখা গেলো কোন বই আর অবশিষ্ট নেই, এমন ঘটনা হরদম ঘটেছে ! শেষ পর্যন্ত কোন্ পাপে বই কিনেও হ্যাবলার মতো দাঁড়িয়ে ছিল এমন নিরীহ গোছের কোন পাঠক-ক্রেতাকে জলজ্যান্ত ছিনতাই করেই মোড়ক উন্মোচনের কাজ সারা হয়েছে। আশা করি এরকম ভুক্তভোগী ক্রেতা সচলরা জাতির মহৎ প্রয়োজনে সাড়া দিয়ে কমেন্টে নিজেকে উন্মোচিত করে অশেষ নেকী হাসিল করবেন। এতেও যদি কেউ তা না করেন, বুঝতে হবে ষড়যন্ত্রের হাত ইতোমধ্যেই অনেক গভীরে পৌঁছে গেছে। আজ এনকিদুটা নিরুদ্দেশ আর আমাদের মুস্তাফিজ ভাইয়ের হাত দুটো যদি হাসপাতালের বেডে বাঁধা না পড়তো তাহলে আমাকে এসব প্রমাণের জন্য ভাঙা থালা হাতে নিয়ে সচলদের দ্বারে দ্বারে কড়া নাড়তে হতো না ! সে ক্ষেত্রে কী আর করা ! অনিবার্য আমাকেই উন্মোচিত হতে হবে।


এইতো সেদিনের ঘটনা। হঠাৎ দেখি আমাদের রমণীমোহন আনিস ভাই বেশ রাজকীয় ভঙ্গিতে মেলায় হাজির। কিভাবে যেন বিষয়টা তিনিও কদিন যাবৎ সন্দেহ করে আসছেন। কিন্তু তাঁরও পেটে পেটে যে এতো দুরভিসন্ধি ছিলো বুঝবো কী করে ! আচমকা দেখি শুদ্ধস্বরের টেবিলে বিছানো সবগুলো বই মুহূর্তেই জড়ো করে কী এক তুমুল দক্ষতায় বোঝা-বান্ডিল করতে লাগলেন ! কী আশ্চর্য, একটা বইও অবশিষ্ট রইলো না আর ! তাঁর এই স্বৈরাচারী ঘটনায় নিমেষেই জনঅসন্তোষ যে বাড়তে লাগলো, তিনি সেদিকে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপও না করে মুচকি মুচকি হাসছেন !


সপ্তাহের শুক্র-শনিবার ছাড়া আমার মতো কামলা-সচলদের মেলাতে আসার কোন সুযোগই নেই। এরকম অপ্রত্যাশিত ঘটনায় হতাশা-আক্রান্ত হয়ে ভাঙামন নিয়ে ফিরে যাবো ভাবছি, ওমা এ কী ! ওই দূরে এক কোণায় বসে কড়কড়ে নোটের বান্ডিল গুনছে কে ? টুটুল ভাইয়ের মতো লাগছে না ! কৌতুহলী হয়ে এগিয়ে গেলাম। ততক্ষণে গোনা শেষ করে পরম তৃপ্তি নিয়ে মুখ তোলে তাকালেন তিনি ! টাকাগুলো তখনো হাতে ধরা।

এবার আপনারাই বলুন তো, তখন কী করতে ইচ্ছে হচ্ছিলো আমার...!!!
(০৫/০৩/২০০৯)

[sachalayatan]

No comments: