Monday, March 9, 2009

# ম্যালা কথা বইমেলায়। ০৪। যে যার তালে !


ম্যালা কথা বইমেলায়। ০৪। যে যার তালে !
রণদীপম বসু

[ চলমান সতর্কবাণী ঃ এই সিরিজের পর্বে পর্বে বর্ণিত চরিত্রে কিংবা ঘটনা প্রবাহে কেউ কোনরূপ সাদৃশ্য বা মিল খুঁজিয়া পাইলে তাহা ব্যক্তির স্বেচ্ছাকল্পিত অতি সৃজনশীলতা বলিয়া গণ্য হইবে ]


মেলা ততদিনে জমে উঠেছে। ভীড় বাড়ছে তো বাড়ছেই। আর বাড়বে না-ই-বা কেন ? নতুন বইয়ের উন্মোচনের ঠেলায় নজরুল মঞ্চ ভেঙে পড়ার অবস্থা ! আর সে জন্যে সন্ধ্যা ছুঁতে না ছুঁতে মঞ্চ দখলের সে কী পায়তাড়া সবার ! কার আগে কে দখল করবে, সেই মহড়া ! কিন্তু তাতেও কি নিশ্চিন্ত হওয়া চলে ! প্রকাশকের চাইতে লেখকদের দুঃশ্চিন্তা আরো বেশি।


তাই দেখা গেলো প্রকাশক টুটুল ভাই যখন নো চিন্তা ডু ফূর্তির মেজাজে আরেক কবি পলাশ দত্তের সঙ্গে মুখ ভেঙচানোর মশকারি করছেন, অন্যদিকে বই রেরোবে এই উচ্ছল আশায় রীতিমতো নতুন জামাই সেজে শেখ জলিল ভাই আগেভাগেই এসে পড়েছেন ঠিকই। কিন্তু প্রকাশকের ভাবগতিক সুবিধাজনক ঠেকেনি হয়তো। মুখ গোমড়া করে বসে আছেন একা। এটা দেখেই কিনা কে জানে, পলাশ দত্ত ছুটে গেলেন সান্ত্বনা জানাতে- এবার হয় নি তো কী হয়েছে ! আল্লায় বাঁচালে আগামীবার ঠিকই হবে !


এই সান্ত্বনা বাক্যে জলিল ভাই কতোটা সান্ত্বনা পেলেন তিনিই জানেন। তবে আরেকদিকে দেখা গেলো শিশু সাহিত্যিক আবু রেজা চামে চামে ছিলেন। সামরান হুদা ওরফে শ্যাজা আপুকে চেখে ধরেছেন সিঙ্গেল একটা ছবির জন্য। ক্যামেরা তাক করেছিলেন ঠিকই। কিন্তু মনিটরে চোখ রেখেই ফাপড়ে পড়ে গেলেন ! ওমা, পর্দায় যে দুজনকে দেখা যাচ্ছে ! হা হা হা ! মুজিব মেহদী ভাই কি আর এমনি এমনি পাট করা কালো পাঞ্জাবিটা ইস্ত্রির ভাজ খুলে পরে এসেছেন ! আবু রেজা সিদ্ধান্তই নিতে পারছেন না সাটার টিপবেন কি টিপবেন না !


এদিকে আরেক কাণ্ড। আদম ভুনা করে অভ্যস্ত ছড়াকার মৃদুল আহমেদকে দেখা গেলো সন্দেহজনকভাবে ফ্রেমের আড়ালে কার দিকে যেন বিশাল ক্যামেরা তাক করে ধরেছে। আমাদের সবজান্তা সব কিছু বুঝলেও মৃদুল ভাই’র কাছে ঠিকই ধরা খেয়ে গেলো। বুঝতেই পারলো না যে ক্যামেরা তাঁর দিকে নয়। ইশ্, সবজান্তার বিশেষ পোজটা এক্কেবারে মাঠে মারা গেলো।


একটু পরেই শুরু হলো আরেক কাহিনী। হঠাৎ করে দেখা গেলো আচমকা সবাই লেখক বনে গেছে। কী ব্যাপার ! বাদাইম্যা বাহিনীর উৎপাত দেখেই হয়তো মেলায় আগত বালিকারা এদিকটাকে এড়িয়ে যেতো। এ নিয়ে শুদ্ধস্বরের স্বত্বাধিকারী টুটুল ভাইয়ের সে কী মারফায়ার অবস্থা ! কিন্তু কে শোনে কার কথা ! শেষমেশ বেচারা অভিমান করে সেই যে পেছনমুখো হয়ে বসেছেন, আর তো ফিরেনই না !


ভুল করেই হয়তো কয়েকজন বালিকা এদিকে চলে এসেছিল। মুহূর্তেই সবার লেখক বনে যাওয়ার এমন ভাব দেখে একেবারে লা-জওয়াব অবস্থা ! আদমভুনাকার মৃদুল আহমেদ তো আরো এক কাঠি বাড়া। ছো মেরে কোন এক বালিকার হাত থেকে বইটা নিয়েই ভয়ঙ্করগোছের লেখক মুড ধরে সেই যে অটোগ্রাফ লেখা শুরু করলো তো করলোই, আর শেষ হয় না ! বালিকা যতই বলে না না, মৃদুল ভাই ততই হাসি বিগলিত করেন- আরে বই তো বই-ই ! আহা, কার বইয়ে কে দেয় অটোগ্রাফ ! একবার উল্টেও দেখলো না !


হঠাৎ করে বড় হয়ে যাওয়া আমাদের পান্থ’র নাকি ইদানিং বালিকা দেখলে মাথাটা কেমন এলোমেলো হয়ে যায়। বালিকাদের আনাগোনা দেখেই কিনা, শুদ্ধস্বর ভেবে পাশের স্টল থেকেই ছোঁ মেরে বই একটা তুলে ধরে যতই বুঝানোর চেষ্টা করলো- আমিও একজন ইয়ং লেখক, অবুঝ বালিকারা সেদিকে ভ্রুক্ষেপও করলো না ! ভ্রুক্ষেপ করবে আর কী ! যে ভয়াবহ লেখকের পাল্লায় পড়েছে ! তাছাড়া আমরা ভাবলে কী হবে, বালিকারা কি বুঝতে পেরেছে যে পান্থ সত্যি বড় হয়ে গেছে !


আর ওই কোণায় ? ছড়াজনীতিক আকতার আহমেদ। কেউ অটোগ্রাফ চাইলো না তো কচু হয়েছে ! সদ্য কেনা বইগুলোতে নিজেই নিজেকে অটোগ্রাফ দেয়ায় ব্যস্ত রেখে দুঃখ ভুলে থাকার দুঃসহ চেষ্টায় রত থাকলো। আহা বেচারা ! একই গোত্রের হয়েও ছায়ার মতো সারাক্ষণের সঙ্গি মৃদুল আহমেদ তাঁকে এমন দাগাটা দিতে পারলো !


এসব দেখেশোনে আমাদের কারুবাসনা অর্থাৎ সুমেরু দাদা শেষ পর্যন্ত আসল রহস্যটা বুঝে গেলেন কিনা- হায়, এই জগৎ শুধুই মায়া ! কেবল টানেই জীবন ! বাকি সব ধোঁয়া ! সব ধোঁয়া...!!


[sachalayatan]

No comments: