Monday, March 16, 2009

# ছেলেগুলো ভালো তো হলোই না, নষ্ট হওয়াও শিখলো না...


ছেলেগুলো ভালো তো হলোই না, নষ্ট হওয়াও শিখলো না...
রণদীপম বসু

আগের দিন সুমেরু দা’র ফোন পেলাম। যদিও তারও আগেরদিন পান্থ’র মোবাইল ওয়েভেই জেনে গেছি যে ১৪ মার্চ ‘বন্দুকের নলই ক্ষমতার প্রকৃত উৎস’, সুমেরু মুখোপাধ্যায়ের বইটার প্রকাশনা উৎসবের কথা। অনুষ্ঠানের আরেকটা চমৎকার আকর্ষণের বিষয় ছিলো প্রিয় শিল্পী কফিল আহমেদের ‘একটা ঘাড়ভাঙা ঘোড়ার ওঠে দাঁড়ানো’র আয়োজন। তবে অনিবার্য সমস্যা না থাকলে যে কারণে অনুষ্ঠানটা মিস করার কোন উপায় ছিলো না, বাদাইম্যা সচলদের মুখদর্শন।


কী আশ্চর্য ! কতকগুলো আউলাইন্যা ছেলেপেলে আর কিছু ছিটগ্রস্ত বুড়োর চেহারায় মুখে কী এমন মধু মাখা হয়ে আছে যে এদেরকে কিছুটা সময় কাছে পাওয়ার আকর্ষণে বৌ-বাচ্চা ফেলে আমাকে ওখানে যেতে হবে ! দু’একজনের চেহারায় অবশ্য উত্তম কুমার মার্কা গুলগুইল্যা আভাস দেখা গেলেও বেশিরভাগের অবস্থাই তো এই বাদুড়ে ঠোকড়ানো আমার চে’ও ভয়াবহ ! তাহলে কেন যেতে হবে ওখানে ?


শেষপর্যন্ত এই উত্তরের খোঁজেই বেরিয়ে পড়লাম ‘দৃক’ গ্যালারির উদ্দেশ্যে। সঙ্গি হবার ফিফটি ফিফটি সম্ভাবনার পান্থও দেখি আগেভাগেই হানড্রেড পারসেন্ট লক্ষ্য নির্দিষ্ট করে ফেলেছে উত্তরার দিকে। মানে যাবার পথে আমাদের সাথে নাই ! উত্তরা থেকেই সে অনুষ্ঠানে আসবে। বুঝলাম পান্থটা সত্যি সত্যি বড় হয়ে যাচ্ছে। অফ ডে’তে আজকাল তাঁর উত্তরাতেও প্রোগ্রাম থাকে ! শেষপর্যন্ত সঙ্গি রইলো শাহরিয়ার মামুন, যাঁকে কেউ কেউ অতন্দ্র প্রহরী, আবার কেউ কেউ বিডিআর নামে চিনে।


এর আগে কখনো ‘দৃক’ গ্যালারিতে যাওয়া হয় নি। তাই অন্ধের যষ্টি বিডিআরই সম্বল ! কিন্তু ‘মাই লাইন’ টাউন সার্ভিস থেকে রাসেল স্কয়ারে নেমেই সে স্কয়ার হাসপাতালের দিকে যেভাবে হাঁটা দিলো, কিছুতেই ভেবে পাচ্ছিলাম না যে এতোবড় ধানমণ্ডি এলাকাটা বিনা ঘোষণায় রাস্তা পেরিয়ে এদিকটাতে চলে এলো কবে ! বেশি দূর হাঁটতে হলো না। তার আগেই সে তাঁর বন্ধু-বান্ধবীদের বিশাল কোন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে দিগদর্শন পেয়ে গেলো হয়তো। আচমকা এবাউট টার্ন নিয়ে ফের উল্টোমুখি হাঁটা ধরলো।


আমি ব্যাকডেটেড হাবাগোবা মানুষ, মারাত্মক গুডবয় চেহারাধারী এ যুগের আইকনের পেছন পেছন হাঁটতেই থাকলাম। সাপের মতো এচিয়ে-পেঁচিয়ে এ-গাড়ি-ও-গাড়ির আশপাশ চাপাচিপা সামনা-পেছন দিয়ে কখন কিভাবে যেন আমাকে নিয়ে ব্যস্ত-ভয়ঙ্কর রাস্তাটা পেরিয়ে গেলো সে ! যখন সম্বিৎ পেলাম, দেখি বসে আছি রিক্সায় ! যাক্ বাবা, চেহারায় ভাজা মাছটি উল্টে খেতে না জানলে কী হবে, ছেলেটা সাংঘাতিক করিৎকর্মা বোঝা গেলো !


দৃক গ্যালারির তেতলার ধবধবে তকতকে হলরুমের বাহুল্যবর্জিত এবং মার্জিত পরিবেশে মনটা জুড়িয়ে গেলো শুরুতেই। সামরান হুদা মানে শ্যাজা’দি আর দীর্ঘদেহী সুমেরু দা’র স্বাগত সম্ভাষণ পেরিয়ে হলের এক কোণায় মেধাবি মুখ মুজিব মেহদীর এলিয়ে দেয়া শরীরটার দিকে চোখ পড়তেই দৃষ্টিটা ফসকে ঠেকলো গিয়ে পাশের বিশাল বপুধারী সুদর্শন ব্যক্তিটির দিকে। যাঁরা এখনো এরকম ধারণা পোষণ করেন যে বাড়ন্ত শরীর তার সমস্ত সীমানা ভেঙ্গে ফেললে শেষপর্যন্ত বুদ্ধির জায়গাও খেয়ে ফেলে, শাহেনশাহ সিমন-এর বুদ্ধিদীপ্ত চোখদুটোই তাঁদের এই ভুল ভাঙানোর জন্য যথেষ্ট। তাঁর বুদ্ধির মারপ্যাঁচে পড়ে আমার মতো টুপি খুলে বিরলকেশ মুণ্ডুটা দেখানোর প্রয়োজন হবে না আর।


ফর্মাল অথবা ইনফর্মাল অথবা কোনোটাই না, এরকম অনুষ্ঠানে শুরু বা শেষের কোন সীমানা দেয়াল থাকে না। কেননা অভ্যাগত সবাই-ই এ অনুষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এবং যে যখন আসে বা যাই করে তাই এই অনুষ্ঠান কিংবা অনুষ্ঠানহীনতার এক সংশ্লেষমুখরতায় উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। নানান মডেলের নানান ডিজাইনের এক একটা মুখ আর শরীর। কেউ বিখ্যাত, কেউ অখ্যাত। আমার মতো কুখ্যত কেউ আছেন কিনা জানি না। তবে রায়ান কামাল বেনামে এনকিদুর মতো দুষ্টু ছেলেমেয়েদের আনাগোনাও কম ছিলো না।


নইলে বইয়ের প্রকাশনার পাশাপাশি অন্যান্যরাসহ কফিল আহমেদের মন মাতানো পারফর্ম্যান্সের সাথে দর্শক শ্রোতারাও যখন একেকজন সহযোগী শিল্পী হয়ে হলটাকে মুখরিত করে তুললো, এই আবহের আলোছায়া ধরে রাখতে আনাড়ি হাতে ২ মেঃপিঃ মোবাইল ক্যামেরার বাটন টিপেও মনমতো কম্পোজিশন না পেয়ে লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে আমি না হয় মেঝেতে শুয়েই গেলাম।


তাই বলে দুষ্টু ছেলেগুলো ডিজিটাল মেমোরিতে আমাকে এভাবে মেঝেতে শুইয়েই রাখবে ! আর মামুন মানে প্রহরী বা বিডিআর কিনা তাঁর অবুঝ ক্যামেরাটা দিয়ে সহজ সরল নারী জাতির কাছে আমার ইজ্জত সম্মানের বারোটা বাজিয়ে সোফার আড়ালে ঠেশে ধরবে ! আমি হতাশ ! ছেলেগুলো বড় হয়ে যাচ্ছে অথচ যোগ্য সাবজেক্ট নির্বাচন করাটাই এখনো শিখলো না ! আমি বড়ই চিন্তিত এদের ভেজিটেবল মার্কা নিরম্বু আগামী নিয়ে !


অনুষ্ঠানে কতকিছুই তো হয়েছে। ফাঁকেফুকে খেতে গিয়ে ব্রাত্য রাইসু, সুমন রহমান, ভাস্কর দা কিংবা মুজিব ভাই বা অন্য কাউকে শ্রোতা বানিয়ে অন্ধকারে আরিফ জেবতিকের অনলবর্ষী বক্তৃতা, অথবা অনুষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ শ্রোতা হিসেবে মহামতি মাহবুব লীলেনের হঠাৎ ভাব ধরে বুদ্ধিজীবীসুলভ নীরবতা পালন, কিংবা বিপ্লব রহমানের সাঙ্গু নদীর উৎস সন্ধান বা রূপবান-রূপবতী অভ্যাগত দর্শক-শ্রোতাদের লাবণ্যময় হাতে শিল্পী ছেলেমেয়েদের মোহন আল্পনা আঁকা,


অথবা হঠাৎ করে শ্যাজাদি’র সুন্দর চেহারায় ব্যাপক ঔজ্জ্বল্য ঝিলিক দিয়ে ওঠা বা নুপুর ভাবীর নিধিমণিটার শিল্পী হয়ে ওঠা এরকম আরো কতকিছু কতকিছু ! কিন্তু যেসব ছেলেপেলেরা ভালো তো হলোই না, নষ্ট হওয়াও শিখলো না তাঁদের নিরম্বু আগামীর দুশ্চিন্তা মাথায় নিয়ে এসব জ্ঞানের কথা লেখায় মনোযোগ রাখা কি সম্ভব ! জ্ঞানীদের জন্যই সেটা তোলা থাক না হয়।
(more pcs)

[sachalayatan]

No comments: