Friday, May 15, 2009

# ছেঁড়া ঘুড্ডি। ০৩। শেষ মুহূর্তের আগে...


শেষ মুহূর্তের আগে...
রণদীপম বসু

০১.
বুকের ভেতরে কোথায় যেন একটা পাথর আটকে গেছে ! শ্বাস নিতে পারছি না। ভয়ঙ্কর হাসফাস হচ্ছে। আগুনের তীব্র হল্কায় ভেতরে ঝলসে যাচ্ছে সব। কী হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছি না। খাড়া করা দড়ির মতো ভারসাম্যহারা শরীরটা মুহূর্তেই লুটিয়ে পড়লো মাটিতে। এরপর যা ঘটতে লাগলো, অবিশ্বাস্য, আরো ভয়ঙ্কর ! চোখ দুটো বুজে এসেছে প্রায়। কিন্তু এ কী দেখছি আমি ! এক তীব্র অজানা আতঙ্কে সিটিয়ে যাচ্ছি ক্রমশই। ব্যায়ামপুষ্ট তরতাজা শরীরটা শুকনো ফোটা পাকা আমের বাকলের মতো এমন অদ্ভুত কুঁকড়ে যেতে লাগলো, খলবলে পেশীবান ভেজা উরুটা দেখতে দেখতেই চিপসে অর্ধেক হয়ে গেলো ! ধনুকের ছিলার মতো তারুণ্যের উজ্জ্বল টানটান চামড়া যেন সহস্রভাঁজে ঝুলে পড়েছে। কে বলবে এটা বিরানব্বই বছরের পুষ্টিহীন কোন অশীতিপর বার্ধক্য আক্রান্ত উরু নয় ! মাংসপেশীগুলো জমে পাথর হয়ে যাচ্ছে সব। গোটা শরীরটাই কি এমন বীভৎস হয়ে গেলো !

একটা বিকৃত কদাকার পাথর-শরীর চৈতের কাঠফাটা আগুনে পোড়া মাঠের মধ্যে অসহায় তড়পাচ্ছে কেবল। প্রচণ্ড বিশ্বাসী এই শরীরের অস্বাভাবিক রূপান্তরে হতবাক আমি আকুল হয়ে ওঠার সময় পেলাম কিনা জানি না, তার আগেই সব কিছু ঝাপসা হয়ে আসতে লাগলো। মাঠভর্তি হৈ-হল্লা চিৎকার চেচামেচি গুঞ্জন সব মন্থর থেকে মন্থর হয়ে আসছে। এবং আশ্চর্য ! হঠাৎ করে তীব্রতম সব অস্বস্তি, কষ্ট, ভোগান্তি, যন্ত্রণা স-ব একে একে বেমালুম মুছে যাচ্ছে ! আহ্ কী শান্তি ! অদ্ভুত এক ঘোরের মধ্যে ডুবে যাচ্ছি। এক বিশাল শূন্যতা বুঝি ধেয়ে আসছে আমার দিকে। বুঝলাম, সময় নেই। তবে কি মারা যাচ্ছি আমি ! আহা, কারো কাছে ক্ষমাটুকু চেয়ে নেয়ার ফুরসতটাও পেলাম না ! ভীষণ আফসোস হলো, হায়, কেন যে এমন হঠকারি কাজটা করতে গেলাম ! প্লীজ, আমাকে মাফ করে দিয়ো, বন্ধুরা...সবাই...

০২.
...গভীর এক নৈঃশব্দের মধ্যে কতোকাল ধরে শরীরটা দুলছে ! গাড়িতে চড়লে কি এমন হয় ! পৃথিবীর অন্ধকার অতল কোন গহ্বর থেকে অসম্ভব মৃদু কিছু গুঞ্জন, ভাসছে... বাড়ছে..!

০৩.
ছেলেটা ঠিক মা’র চেহারা পেয়েছে ! দেখলেই ওর মায়ের মুখটা ভেসে ওঠে।
ঠিকই।
তবে হ্যাঁ, এই ছেলেরা কিন্তু ভাগ্যবান হয় !
হাহ্ ! ভাগ্যবান ! ........
.....................
যাহ্, তোর সাথে আর খেলমু না !
কেন, খেলবি না কেন ?
তুই খালি চুরি করস ! দে আমার মারবেলগুলা দে !
কিসের মারবেল তোর ! এইগুলা সব আমার। যা ভাগ্ !
দেখ্, ভালো হইবো না কইলাম !
ইহ্, ভালো হইবো না মানে ! কী ভালো হইবো না !...
ও মাগো... আমারে মাইরা ফালাইলো গো.......
...............................
এই আমারে একটা হাওয়াই মিঠাই দে।
দশ পইসা কিন্তু !
ইশ্, দশ পইসা ! পাঁচ পয়সা দিমু, দে !
না...!
আইচ্ছা ঠিক আছে যাহ্, দশ পয়সাই। দে একটা দে। পয়সা কাইল ইস্কুলে আইয়া নিস্।
না, আম্মায় বাকি দিতে মানা করছে ! বাকি দিমু না আমি।
কী ! দিবি না ! দাঁড়া দেখাইতাছি......!
আ..আ..আ..., আমার বাক্স গেলাস ভাইঙ্গা ফালাইছে...আ..আ..আ.......
................................
গর্দভের দল ! ইস্কুলটা কি ফাজলামী করার জায়গা ! বেয়াদ্দপ কোথাকার ! এই, এদিকে আয় ! পড়া আনিস নি কেন ? কানে ধইরা এইখানে পঞ্চাশবার উঠবস কর ! এই তুইও এদিকে আয়। দাঁড়াইয়া দাঁড়াইয়া তুই গুনতে থাকবি...। ... আচ্ছা গতকাল আমরা কত পৃষ্ঠায় শেষ করছিলাম ?...
ফটিকরে তার মামায় আইসা লইয়া গেছে...
এক..দুই..তিন......নয়..দশ......পনের..ষোল......একত্রিশ..বত্রিশ......পঁচিশ..ছাব্বিশ...
দেখ্, ভালা হইবো না কইলাম !
রবীন্দ্রনাথ এখানে বলতে চেয়েছেন যে...
...উনত্রিশ..ত্রিশ......বাইশ..তেইশ...
ওই, ফাইজলামি করস ! চল্লিশরে বাইশ গনতাছস ! কেলাশ শেষে শালা তোর নাকের বদনাটা ফাটাইছি আইজ !...
এই বয়েসটার মতো এমন বালাই আর নেই কেন ? ...এই হইছে তোদের !
জ্বী.. তিরিশবার হইছে স্যার !
না স্যার ! এই হালার পুতে মিছা কইতেছে ! আমার পঞ্চাশবার পুরা হইছে...
চুপ ! কত্তোবড়ো বেয়াদপ ! এই যা তো, অফিসরুম থাইকা লম্বা বেতটা নিয়া আয়..!......
................................
ইশশিরে ! এইমাত্র না তারে গাছে দেখলাম ! ওই আগায় বইসা কী জানি খাইতেছিল। হঠাৎ এমোন পাকনা তালের মতো...
আরে ভাই আগে তোলা দিয়া পুকুরে নেন...
আরে আরে কথা কইতে পারতেছে না তো ! এই ধর ধর...
না না এইভাবে না ! পানিতে বুকটারে চুবাইয়া বসান তাড়াতাড়ি...গোঙানি বাইর হইলে হাসপাতালে নিয়া ......
................................
এই ছেলে ! বেয়াক্কেলের মতো স্টেজে এতো পা কাঁপাচ্ছিলে কেন এ্যাঁ ? আর কী আশ্চর্য ! একই ডায়লগ বারবার বলছিলি কেন শুনি !
জ্বী স্যার, মানে.....
................................!
তোরা যে আইজকাইল কী হইছস না ! থাকিস হুস্টেলে ! মাস-দু’মাসেও কি বাড়িতে একটা চিঠি লেখা যায় না ! পোস্ট অফিস থাইকা একটা পোস্টকার্ড নিয়া কিচ্ছু তো লেখাও লাগে না ! ভালো আছি এই কথাটা লেইখাই ছাইড়া দিলে হয় !
ঠিক আছে, দিমু।
প্রতিবারই তো ঠিক আছে বইলা যাস্ ! বুঝবি কেমনে ! যেদিন বাবা হইবি, সেদিন বুঝবি বাবারা কেন এইরকম কথা কয় !......
................................
কী ব্যাপার, কাঁদছো কেনো ?
কই, কাঁদছি না তো ! ইউনিভার্সিটিতে কতো সুন্দর সুন্দর মেয়ে আছে ! সেইখানে গিয়া কি আমারে আর মনে থাকবো তোমার !
দূর পাগলি ! এই বুকটারে যেইভাবে জুইড়া রাখছো তুমি, তোমারে না দেইখা আদৌ কি হলে থাকতে পারমু ! শেষপর্যন্ত লেখাপড়া শিকায় তুইল্যা ম্ক্তুকচ্ছ হইয়া তোমার এই দিওয়ানা মজনু রাস্তায় রাস্তায় লাইলী কই লাইলী কই কইয়া দৌঁড়তে থাকে কিনা কে জানে !
যাও, তুমি কী যে কও না !
তাইলে এবার কও, চিঠি পাবো তো ? সেইরকম...মাখানো ?
দ্যাখো ......
................................
গ্ল্যাড টু মিট য়্যু ! আমি... ম্যান অব কুমিল্লা, আপনি ?... আমি সিলেট। ......দোস্ত, বাগান থেকে অরিজিনাল চা-পাতা চাই। ...... আপনাকে না খুব জলি মনে হয়!....লজ্জা পাইলাম....আপনার মতো মেয়ের কাছে এলে পাথরও ফুল ফোটাতে শুরু করে যে !.......কী যে বলেন, আপনারা জুয়েল স্টুডেন্ট, তার উপরে...... এই দোস্ত, তুমি তো ব্যায়ামবীর মানুষ, নাম দিবা নাকি কম্পিটিশনে ?......কী ব্যাপার কবিতার কুস্তি হবে নাকি !...... আরে নাহ্.এথলেটিকস।......
... হাই দোস্ত, ফার্স্ট হওয়া চাই কিন্তু ! শাটল ট্রেন ভইরা ডিসি হিল যামু।.. প্রমিজ, তেয়ারি ফ্রি !...লিসেন টু মি...প্রথম চক্করে কেউ ট্র্যাক চেঞ্জ করতে পারবে না......বাঁ দিক দিয়ে ওভারটেক করলে ডিসকোয়ালিফাইড !......সাড়ে বারো চক্করে পাঁচ হাজার মিটার হবে...ঠিক আছে ?... প্রথম বাঁশি এলার্ট, দ্বিতীয় বাঁশি গো !
...... সাব্বাশ দোস্ত, আরো জোরে !......আগ বাড়ো দোস্ত আগ বাড়ো, সুবর্ণার কসম কইলাম !...... ইশ্, কী রোদ !...... দোস্ত, এই নাও, দাঁতে চাইপ্যা রাখো !...... এই এই পানি মার, পানি মার !...... আর মাত্র তিন চক্কর...... সাইড দিবা না দোস্ত ! কোনোমতেই......জোরসে জোরসে ! আর একটু বাকি !......আইসা গেছো দোস্ত, আইসা গেছো.....হ হ... হুররে......সেকেন্ড সেকেন্ড !......না না থার্ড হইছে...... আরে আরে কী হইছে দেখ্ তো !...... এই ধর ধর !...... অ্যাম্বুলেন্স লাগবো, অ্যাম্বুলেন্স !...... আরে ! এ তো শক্ত হইয়া গেছে !...... ম্যাসেজ ম্যাসেজ...... ইমার্জেন্সী ! ইমার্জেন্সী !......
প্রেশার ? ...স্যার আর্জেন্ট স্যালাইন পুশ করে দেই ?... না ! সাথে সাথেই প্যাসেন্ট এক্সপায়ার করবে !...কিছুতেই স্যালাইন পুশ করা যাবে না ! ... সিভিয়ার সান-স্ট্রোক !... র‌্যাপিড স্যালাইন মেসেজ, অল ওভার দ্য বডি, কুইক ! ......এই, ভিসিকে ফোন করো ! এদেরকে মার্ডার কেসে দেয়া উচিৎ !... থার্টি এইট ডিগ্রী সেলসিয়াসে এই আহাম্মক ছেলেপেলেগুলারে মারতে নামাইছে !... জানাইয়া দাও, থার্ড টাইম কোন প্যাসেন্ট রিসিভ করবো না আমি... সোজা চিটাগাং রেফার করবো !...ওয়ার্থলেস এইসব খুনের দায় আমি কেন নেবো ! রাবিশ ! ......

০৪.
পৃথিবীটা খুব দ্রুত কোলাহলময় হয়ে ওঠতে লাগলো। আশে পাশে ঠুংঠাং, ধুপধাপ, ক্যাচকোচ কতো রকমের শব্দ-স্রোত। কথাবলার আওয়াজও পাচ্ছি। দুই ঠোঁটের ফাঁকে কাপড় বা তুলা জাতিয় কিছু গুঁজে দেয়া হয়তো। হালকা নোনা স্বাদ আঠালো মুখটাতে ছড়িয়ে আছে। মুখে কি মাক্স লাগানো ? পায়ের আঙুল থেকে হাঁটু উরু কোমর পেট বুক হাত বা পিঠের ধারে কিরকম ঘষাঘষি টের পাচ্ছি যেন। চোখ খুলে সাথে সাথে বন্ধ করে নিলাম। অসহ্য ঝাঁঝালো আলো ! আবার খুললাম, এবারে চোখে সয়ে এসেছে। উৎকণ্ঠিত সহপাঠি বন্ধুদের মুখ। চিৎ হয়ে শোয়া আমাকে সমানে ম্যাসেজ করে যাচ্ছে ওরা। হঠাৎ চোখ খুলতে দেখেই হয়তো উজ্জ্বল হয়ে ওঠলো তাদের মুখ। মানে এবারের মতো বেঁচে গেলাম আমি ! আশপাশে তাকিয়ে বুঝতে পারছি এটা ইউনিভার্সিটি হেলথ ক্লিনিক, যেখান থেকে আমরা হলের ছাত্ররা প্রায়ই ফালতু রোগ সাজিয়ে বিনে পয়সার ঔষধ নিয়ে যাই।

সংজ্ঞাহীন হবার আগমুহূর্তটা মনে পড়ে গেলো। শিরশির করে সেই আতঙ্কটাই চেপে বসছে আবার ! চোখ খুলতেই ভয় হচ্ছে এবার। কী না কী দেখবো ! না না, এমন বীভৎস শরীর চেহারা নিয়ে বেঁচে থাকার অভিশাপ কী করে বইবো আমি ! এর চেয়ে তো মৃত্যুই ভালো ! নিজের বালসুলভ হঠকারিতা, গোয়ার্তুমি, হতাশা, দুঃখে বুকটা ভেঙে হা হা করে কান্না আসছে। কুড়ি বছরের তরতাজা বয়সে থুত্থুরে কোঁচকানো অশীতিপর পরিত্যক্ত একটা দেহ নিয়ে কার কাছে যাবো আমি ! নিজের গড়া এই দুঃসহ নিয়তিই কি শেষপর্যন্ত সঙ্গি হলো আমার ! নাহ্, এর একটা সুরাহা তো আমার নিজেকেই করতে হবে ! নিয়তির মুখোমুখি হতে এবার মরিয়া হয়েই চোখ খুললাম, তাকালাম পায়ের দিকে। ওমা এ কী ! এ তো আমার সেই আগের পা ! আগের শরীরই ! ক্ষাণিকটা মলিন তবু আহ্, কী সুন্দর ! হুড়মুড় করে উঠে বসলাম। রে রে করে ওঠলো সবাই- আস্তে, আস্তে ! কিন্তু কে শোনে কার কথা ! অসম্ভব সুন্দর একটা পৃথিবীতে তখন অবস্থান করছি আমি !

পরনে সেই শর্টস, যেটা পড়ে পাঁচ হাজার মিটার দৌঁড়ের আন্ত-হল কম্পিটিশনে নেমেছিলাম। কিনিক ইন-চার্জ ডাক্তারের সামনে যেতেই নিগ্রোমার্কা বিশাল শরীরটার উপরে ঘাড় ধরে বসানো ছোট্টখাট্ট মাথাটা একটু উপর দিকে তুলে পিটপিট করে তাকালেন। খসখস করে একটা প্যাডে কী যেন লিখে বাড়িয়ে দিলেন আমার দিকে- সোজা হলে গিয়ে শাওয়ারের তলে মিনিমাম আধা ঘণ্টা !
মাথা চুলকে বললাম, কিন্তু স্যার, আমি যে দশ হাজার মিটারেও নাম দিয়েছি !
হোয়াট ! ফাজলামী করছো ! দুর্বাসার দৃষ্টিতে কটমট করে বিদ্রূপ মাখানো হুঙ্কার - তখন আর এতো কষ্ট করে এখান পর্যন্ত আসতে হবে না ! ... গেট লস্ট !
টুপ করে বেরিয়ে পড়লাম আমি। তাঁর বাজখাই গলা তখনো কিনিক জুড়ে গমগম করছে।

অ্যাম্বুলেন্স থেকেই উচ্ছ্বাসে-উৎসবে আন্দোলিত মাঠটা দেখা যাচ্ছে। রেজিস্টার বিল্ডিং-এর টিলাটার ঢাল বেয়ে চলে যাওয়া বৃত্তাকার সরু পাকা রাস্তাটার পাশেই বেশ নিচে বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠটা। মাঠের এক কোণায় কিনিকের সামনে থেকে শ্যামলে সবুজে পাহাড়ে টিলায় ঘেরা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার নয়নাভিরাম দৃশ্য যেটুকু চোখে পড়ছে, তা-ই আরো বেশি মনোরম হয়ে ওঠেছে আমার চোখে। অ্যাম্বুলেন্সটা বাঁক ঘুরতেই মাঠটা হারিয়ে গেলো। তবু মাইকের ছড়ানো আওয়াজে কোলাহলটা ঠিকই শোনা যাচ্ছে। পাশ থেকে বন্ধুটি এবার মুখ খুললো- বিশ্বাস করবি কিনা দোস্ত, যে মুহূর্তে মনে হচ্ছিল আমার প্রিয় বন্ধুটি আমার কোলেই মারা যাচ্ছে, কয়েক মুহূর্ত আমারও মনে হয় জ্ঞান ছিলো না।
বন্ধুভাগ্যে অহঙ্কারী আমি তাঁর চোখে চোখ রেখে বললাম, আমাকে মাঠ থেকে ক্লিনিকে নিয়ে আসতে কতক্ষণ লেগেছে বল তো ?
বেশি না, এই দেড় কি দু’মিনিট !
না দোস্ত, আমার তা মনে হয় না। তোরা আমাকে বিশ বছর বয়ে এনেছিস !
মানে ! সন্দিগ্ধ কণ্ঠ তাঁর।
মানে বিশ বছর ! আচ্ছা বল তো, মৃত্যুর আগ-মুহূর্তে মানুষ কি তার ফেলে আসা গোটা জীবনটাকে এক পলকে দেখে ফেলতে পারে ?
একথা কেন বলছিস ?
সত্যিই সংজ্ঞাহীন ছিলাম কিনা জানি না। তবে ওই সময়ে এক আশ্চর্য কাণ্ড ঘটে গেছে ! জীবন্ত চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে আমি আমার জীবনের গোটা সময়টা, এমনকি প্রতিটা মুহূর্ত ছুঁয়ে ছুঁয়ে এক দীর্ঘ ভ্রমণ সেরে এসেছি ! একেবারে সেই শৈশব থেকে...
কী বলছিস ! তা কী করে সম্ভব ! এক আশ্চর্য বিহ্বলতায় আমার কথার মাঝখানেই তাঁর বিস্ময় ঝরে পড়লো।
আদৌ তা সম্ভব কিনা, সে প্রশ্নটা এখন শুধুই অবান্তর আমার কাছে। তবু পৃথিবীতে প্রশ্নরা বুঝি অন্তহীনভাবে বইতে থাকে। যার কোন উত্তরই জানা নেই আমার। ভেতরের গুনগুন করা স্বগতোক্তিগুলো অবাধ্য এ জিহ্বাটায় নাড়াচাড়া খেয়ে ছলকে ওঠছে কেবল-
জানি না দোস্ত। খুব ছোট্ট এই জীবনে কতো মানুষকেই যে কষ্ট দিয়ে এসেছি আমি ! সেসব তো ভুলেই গিয়েছিলাম !...
অবারিত বিস্ময় নিয়ে বন্ধুটি আমার মুখের দিকে চেয়েই রইলো। সোহরাওয়ার্দী হলের গেটে এসে অ্যাম্বুলেন্সটা ব্রেক করলো ঠিকই। কিন্তু সেই বিস্ময়টা অদ্ভুত এক আচ্ছন্নতা নিয়ে আমার মাথার ভেতরে ঘুরঘুর করতে থাকলো...
Image: from internet.
(০৭/০৫/২০০৯)

No comments: