Friday, May 15, 2009

# [রম্য-গল্প] --- চটাশ !


...চটাশ !
রণদীপম বসু

চটাশ্ !
চমকে ঘুরে তাকালাম। হতভম্ব লোকটা ডান হাত দিয়ে সম্ভবত বাঁ গালটাকে চেপে রেখেছে। অবাক হয়ে মেয়েটির দিকে এমনভাবে তাকাচ্ছে যেন বিশ্বাসই করতে পারছে না এরকম কিছু ঘটতে পারে ! তাঁর বাঁ হাতটা টেনে ধরে মেয়েটি এক ঝটকায় পাশের খালি রিক্সাটায় উঠে বসলো এবং লোকটাকে টানতে লাগলো। শাহবাগের এই জনাকীর্ণ মোড়ে জাতীয় জাদুঘরের সামনে এমন অভূতপূর্ব ঘটনায় আমার মতো কৌতুহলী দর্শকের অভাব থাকার কথা নয়। লোকটা কী বুঝলো কে জানে, আশপাশ তাকিয়ে ঝট করে সেও উঠে বসলো মেয়েটির পাশে।

কী বুঝলি ?
মামা’র দিকে তাকিয়ে আমি মাথাটা এদিক-ওদিক বার দেড়েক নাড়ালাম শুধু। অর্থাৎ কিছুই বুঝি নি।
তুই একটা গাধা !
বাসা থেকে মামা’র সাথে বেরোনোর পর বিগত ঘণ্টা-দুয়েকের মধ্যে সম্ভবত এটা আমার ছাব্বিশতম খেতাব অর্জণ ! ভীষণ বিজ্ঞ টাইপ ব্যক্তি হিসেবে মামা’কে আমার খুবই পছন্দ। পৃথিবীতে হয়তো এমন কোন বিষয়ই নেই যা জানতে চাইলে মামা তাঁর স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে এর একটা না একটা ব্যাখ্যা দেবেন না। ব্যাখ্যা তো নয়, বক্তৃতা ! জীবনে একবারই ইস্কুলের ডায়াসে উপস্থিত বক্তৃতা করতে দাঁড়িয়ে কাঁপতে কাঁপতে পড়েই যাচ্ছিলাম। সেদিনই বুঝেছিলাম, বক্তৃতা করাটা হচ্ছে পৃথিবীর কঠিনতম কাজের একটি। যার জন্য কিনা ভয়ঙ্কর বিজ্ঞতা আর যোগ্যতা থাকা অতি জরুরি। আর এই কাজটিই যখন-তখন যেখানে-সেখানে অবলীলায় করে ফেলার মতো লোক পৃথিবীতে হাতে গোনা ক’টি আছে ! তাদের মধ্যে আমার মামা যে একজন হবেনই, তাতে আর সন্দেহ কী ! অতএব তাঁর কাছ থেকে এরকম পাঁঠা, ছাগল, উল্লুক, গাধা, বলদ, খাটাশ এজাতীয় নিরীহ প্রাণীজ টাইটেল পেতে পেতে আমার যে আর একটুও খারাপ লাগে না, মামাও তা জানেন। এবং মামা যে জানেন, সেটাই হয়েছে জ্বালা ! কিন্তু মামা’র তাতে বিন্দুমাত্র সমস্যা বা বিরক্তি আছে বলে মনে হয় না। বরং অজ্ঞানকে জ্ঞান বিতরণের দাতব্য উদ্যমে মামা’র কোন ঘাটতি কখনোই দেখা যায় নি। আর এ মুহূর্তে আপন ভাগ্নের অজ্ঞানতাকে হেলাফেলা করার তো প্রশ্নই আসে না !

এটাকেই বলে প্রেম, বুঝলি !
প্রেম ! বলে কী ! আমার ছোট্ট আলজিহ্বাটা গলায় পেঁচিয়ে যাবার জোগাড় !
আরে ! এতে আশ্চর্যের কী আছে ! রামছাগলের মতো এমন হা করে আছিস কেন ?
কোথায় যেন পড়েছিলাম, ছাগলই নাকি একমাত্র দার্শনিক প্রাণী, জবাই করার আগেও যে নির্বিকার থাকে। এটা নাকি তার চোখ দেখলেই বুঝা যায়। কিন্তু মামা’র দেয়া তথ্যের সাথে সেটা যে কিছুতেই সাপোর্ট করছে না ! সেইসব তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণের আগেই মামার দ্বিতীয় পর্বের জ্ঞানদান শুরু, তাও একেবারে সাধু ভাষায়-
এই চর্মচক্ষে যাহা দেখা যায়, তাহা সত্য নহে; চক্ষের আড়ালে যাহা ঘটিয়া থাকে তাহাই সত্য ! গাধারাই কেবল যাহা দেখে তাহাই সত্য ভাবে। এই যেমন ধর্...
মামা’র জ্ঞানগর্ভ বক্তৃতার তোড় যত বাড়ছে, আমার মাথাটাও তত জোরে ঘুরতে লাগলো। এবং আফসোসের সাথে আশঙ্কাটাও পাল্লা দিয়ে বাড়তে লাগলো, সুবর্ণার সাথে বিকেলের প্রোগামটায় টাইমলি এটেন্ড করতে পারবো তো ! সে আশায় গুড়েবালি হবার সমূহ ইঙ্গিত এখনই টের পাচ্ছি। ফলে মামা’র প্রতিও বুঝি এক ধরনের অসন্তোষ ভেতরে ভেতরে তৈরি হতে লাগলো।
কীরে ! উল্লুকের মতো এমন মোচড়ামোচড়ি করছিস কেন ? কথা বিশ্বাস হচ্ছে না বুঝি ! আয় আমার সাথে...
আহ্ হা ! থাক না মামা !
কে শুনে কার কথা ! হাত ইশারায় একটা রিক্সা ডাকলেন। আমার আপত্তি অগ্রাহ্য করেই রিক্সার দিকে এগিয়ে গেলেন। ইশ্ ! কী কুক্ষণে যে মামার সাথে বেরোতে গেলাম ! এখন নিজেই নিজের চুল ছিঁড়া ছাড়া কিচ্ছু করার নেই !

মামা’কে নিয়ে এই এক বিপদ। কোথাও বেরোবে, সাথে সাথে ভাগ্নের তলব। কিন্তু আমার যে কলেজ আছে মামা !
সে কী রে ! তুই তো দেখি সত্যি সত্যি অপদার্থই রয়ে গেলি !
কেন ? একথা বলছো কেন মামা ?
বল্ তো, শিক্ষা মানে কী ? শুরু হয়ে গেলো মামা’র জেরা।
নিরীহ ছাত্রের মতো বলি- শিক্ষা মানে কিছু জানা বা শেখা !
তুই একটা মূর্খ !
ভাগ্নের অজ্ঞতায় মামা রীতিমতো তাঁর অসন্তুষ্টি ঝাড়তে লাগলেন- শোন্, শিক্ষা হচ্ছে জ্ঞানার্জনের উৎকৃষ্ট উপায় অনুসন্ধান। তুই যে কলেজে যেতে চাচ্ছিস, কেন জানিস ?
আশ্চর্য ! আমি কেন কলেজে যাবো, আমি জানবো না !
না, তুই জানিস না। তুই যেতে চাচ্ছিস জ্ঞান নয়, জ্ঞানার্জনের উপায় খুঁজতে। আর আমার সাথে এখন যে বেরোবি, তাতে কী হবে বল্ তো ? তোর অনেক উপকার হয়ে যাবে। অনেক কিছুই জানতে পারবি তুই। প্রত্যক্ষ জ্ঞান। ওই কলেজ সাত জন্মেও তোকে ওগুলো দিতে পারবে ?
এবার হয়তো কিছুটা আঁচ করতে পারছি, সেই প্রথম বয়সে কেন মামা হঠাৎ করে কলেজ যাওয়া বন্ধ করে পড়ালেখার পাটটাই চুকিয়ে দিয়েছিলেন।

তবে অসম্ভব পড়ুয়া হিসেবে মামা’র নামডাক যে-কারোর জন্যেই ঈর্ষণীয় হতে পারে বৈ কি ! অত্যাবশ্যকীয় সঙ্গি হিসেবে নানান কিসিমের বই সংগ্রহের প্রবল তাড়নায় ঘরের ধান চাল হলদি মরিচ ইত্যাদি জিনিসপত্র বেমালুম হাওয়া করে দিয়ে মাঝে মাঝেই মামা যে নানার অনিবার্য খড়ম-চিকিৎসা আর ঘাড়ধাক্কা খেয়ে দিন-কয়েকের জন্য অদৃশ্য হয়ে যেতেন, সেটা আমাদের স্কুল পড়ুয়া ভাগনেদের কাছে তখন তো খুবই রোমঞ্চকর ঘটনা হিসেবেই মর্যাদা পেতো। রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষাগুলো শেষ হতে চাইতো না, কবে মামা ফিরে এলে রোমহর্ষক অভিযানের গল্পগুলো রসিয়ে রসিয়ে জাবর কাটবো। আমাদের ঢাকার বাসার গেটে মামার হাঁক-ডাক শুনা মাত্র মা ঠিকই দরজা আগলে দাঁড়িয়ে যেতেন- শোন্, এটা তোর বাড়ি না। ঘরের একটা জিনিস এদিক-ওদিক হবে তো...
দেখ্ বুবু, তুই এখনো তোর সেই বিশ বছর আগের অপরিণত জ্ঞান নিয়ে অপরিপক্কই রয়ে গেছিস। এই অজ্ঞানতা নিয়ে তোর ঘুম আসে কী করে !
কী বললি ! আমি অপরিপক্ক ! অপরিণত ! বেরো, এক্ষুনি বেরো ! খবরদার, তুই ঘরে ঢুকবি না বলছি !

মাকে চটিয়ে দেয়া মানে সন্ধ্যায় বাবা না ফেরা পর্যন্ত বাসায় এই টর্ণেডোর ঘূর্ণি আর থামছে না, এই নিশ্চিত পূর্বাভাস সবারই জানা। তবু কেন যে মামা প্রতিবারই এরকমটা করেন তা আমার কাছে বোধগম্য না। মা’র পায়ের কাছে ব্যাগটা ফেলেই বলবে- আমি তো বেরোতেই এসেছি ! এই নে, ব্যাগটা রাখ্। এরপর ‘ভাগ্নে’ বলে একটা হাঁক দিয়েই সোজা বাইরে। আমিও সুরুৎ করে মামার পিছু। বাবা না ফেরা পর্যন্ত বাসাটা যে কিছুতেই আর নিরাপদ নয়, সেই টেটনা বয়সেই এ অভিজ্ঞতার পাঠ নেয়া সম্পন্ন আমার। ঝড়ের বেগে শহরটাকে চষে ফেলে প্রাথমিক অভিযানটা সেরে সন্ধ্যে নাগাদ গেটের ধারে বারার জন্য অপেক্ষা আমাদের। অন্যদিনের চেয়ে একটু বেশি উৎফুল্ল বাবা রিক্সা থেকে নেমেই মামার সাথে চোখাচোখি সেরে মার সামনে গিয়ে পকেটে হাতটা ঢুকিয়ে দেবেন। বাবার মুচকি মুচকি হাসিটা সেদিন বেশ দেখার মতো হয়। ততক্ষণে মার দিকে বাড়িয়ে ধরেছেন এক পাতা প্রেসারের টেবলেট। আর এদিকে দ্রুত আমরা আমাদের কক্ষের নিরাপদ আশ্রয়ের শেল্টার নিতে দে ছুট।

কিন্তু নানা’র মৃত্যুর এক মাসের মধ্যে নানীও মারা যাবার পর এবারই প্রথম একটু ভিন্নতা দেখা গেলো। বাসার গেটে মামার হাঁকডাক শোনা গেলেও মা আর আগের মতো এসে দরজা আগলে দাঁড়ালেন না। রুমে ঢুকেই কাঁধ থেকে ব্যাগটা প্রায় ছুঁড়ে ফেলে মামা’র খলবলে প্রশ্ন- কীরে ভাগ্নে, বুবুর তবিয়ত ঠিক আছে তো !
কেন, কী হয়েছে মামা ! এ কথা বলছো যে ?
চল্ চল্ দেখে আসি !
মামা’র পিছু পিছু আমিও মা’র ঘরের দিকে এগিয়ে যাই। তবে দরজার বাইরে থেকেই আমি ভাই-বোনের কুশল-বিনিময়ের আলামত শুনতে পাই। কোন ভূমিকা ছাড়াই মা’র বাক্যবর্ষণ শুরু হয়ে গেলো- দেখ্, তোর কারণে আব্বা-আম্মা এতো তাড়াতাড়ি চলে গেছে। তোর যদি একটুও হায়া-শরম থাকতো, তাইলে আরো ক’টা দিন হয়তো তাঁরা নতুন বৌয়ের মুখ দেখে সেবা-যত্ন নিয়ে শান্তিমতোই...
কথা আর শেষ হয় না। তার আগেই মা’র ফোঁপানো শুরু হয়ে যায়।
দেখ্ বুবু, এসব ফুৎফাৎ আমার সামনে করবি না ! কথা যা বলার শেষ করে তারপর আরামসে বসে যত খুশি ফুৎ ফাৎ করতে থাক্, আমার অনেক কাজ আছে।
মামা’র এই চোটপেটে কথা শেষ হতে না হতেই মা-ও ফোঁস করে ওঠেন- এই, তোর কাজ কী রে ? বারো ভুতের জিম্মায় ঘর-বাড়ি জমিজমা ফেলে বাদাইম্যাগিরি করতে এসেছিস। এটাই বুঝি তোর কাজ ! একটা বৌ জোটানোর মুরোদ নাই যার, তার আবার এতো সিনাজুড়ি কিসের শুনি !
হা হা হা হা ! এই হলো তোদের মেয়েদের সাইকোলোজি, বুঝলি ? পুওর, ভেরি পুওর...!
কথাটা বোধয় অসম্পূর্ণই থেকে গেলো। হুটহাট করে মামা ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন। আমাকে দেখেই এমনভাবে দাঁড়িয়ে গেলেন, যেনো কত্তো তাড়া রয়েছে তাঁর !
চল্ ভাগ্নে চল্, হাতে অনেক কাজ !
জীবনভর এতো ব্যস্ত-সমস্ত মামা’র আসল কাজটা যে কী, এটা আর জানার সৌভাগ্য হয়নি আমার ! কিন্তু আজ তো সে রিস্ক নেয়া যায় না ! সুবর্ণার সাথে প্রথম প্রোগ্রাম আমার। কথা ঘুরিয়ে বলি, মামা, আজ যে একটু ব্যস্ত আমি ?
বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন কতক্ষণ। এই, তোর বয়স কতো হয়েছে রে ?
হুট করে এমন প্রশ্নে কিছুটা অস্বস্তি নিয়েই বললাম- হঠাৎ এরকম বয়স নিয়ে টানাটানি শুরু করলে যে !
হা হা হা ! আমার গর্দভ ভাগ্নেটা বড় হয়ে যাচ্ছে রে !
ঘরের ভেতরে মা রীতিমতো ফুঁসে আছে। তার ওপরে মামা’র কথা বে-লাইনে চলে যাবার আশঙ্কা চাপা দিতেই তাড়াতাড়ি বললাম- ঠিক আছে, চলো। এই চলো’টাই যে আমাকে এতো ফক্করে ফেলবে, তা কে জানতো !

আগের রিক্সাটাকে ফলো করেই কিছুদূর গিয়ে রিক্সা থেকে নেমে হাঁটা শুরু করলেন মামা। আমিও ফেউয়ের মতো তাঁর সাথে। রমনা পার্কের ভেতরে ঢুকে গেলো ওরা। দূর থেকেই দেখা যাচ্ছে মেয়েটি সেই লোকটির হাত ছাড়ে নি এখনো। দিনের এ সময়টাতে ভালো করে লোকজনের ভিড় জমে ওঠেনি। লেকের পাড়ের নির্জন কোণাটাতে যেখানে ঝোপঝাড় একটু বেশিই মনে হচ্ছে, বড় গাছটাকে আড়ালে রেখে খালি বেঞ্চটাতে বসে পড়লো ওরা। গাছটাকে লক্ষ্য করে শিকারি কুকুরের মতো মামা এগিয়ে যাচ্ছেন। এদিকে পাশেই আরেক ঝোপের আড়ালে দুটো ছেলে আর মেয়ের ঠোঁটগুলোকে কারা যেন সুপার-গ্লু দিয়ে একজায়গায় এনে আটকে দিয়েছে ! মামা’র সেদিকে খেয়ালই নেই। একটা অস্বস্তির মতো কি যেন বুকের মধ্যে খুট খুট করতে লাগলো। থেমে গেলাম আমি। এরং সাথে সাথেই টান পড়লো হাতে। কখন যে মামা আমার হাতটা ধরেছেন, আগে টের পাইনি।
না মামা, আমি আর যাবো না।
যাবি না মানে ! শিখে যা গর্দভ ! জীবনে কাজে লাগবে।
গাছটাকে কোণাকোণি আড়াল বানিয়ে নিপাট ভালোমানুষের মতো কাছাকাছি যেতেই চাপা ধস্তাধস্তির খশখশ আওয়াজ- অই মাগির পুত, তর বাপেও কি মাইয়া মাইনষের গতর দেহে নাই... !
থমকে গেলাম ! কানের মধ্যে কে যেন গরম সীসা ঢেলে দিয়েছে। দেখি মামা’র বিস্ফারিত গোল গোল চোখ দুটো বেরিয়ে আসতে চাইছে ! হঠাৎ পাগলের মতো আমার হাতটাকে ফের খপ করে ধরে হিড়হিড় করে আমাকে টেনে নিয়ে ছুটলেন রুদ্ধশ্বাসে, গেটের দিকে।

হাঁফাতে হাঁফাতে বললেন- তুই কি কিছু শুনেছিস ?
হাঁ শুনলাম তো... !
চুপ চুপ ! মূর্খ ! এই বেয়াক্কেলের মতো ঝুলে পড়া কান দুটো দিয়ে যা শোনা যায় তা-ই পারফেক্ট সত্য না ! সত্য হচ্ছে...
মামা’র লেকচার তুবড়ি ছুটানোর আগেই এগিয়ে আসা টাউনবাসটার দিকে ছুটলাম আমি- মামা তুমি পরে আসো, আমি গেলাম।
সুবর্ণার সাথে প্রোগ্রামের টাইম ছাড়িয়ে ঘড়ির লম্বা কাটাটা আগে আগে ছুটছে তখন...!
Image: 'Syndafall' by Michelangelo.
(১৪/০৫/২০০৯)

[sachalayatan]

No comments: