Friday, May 15, 2009

# যৌন হয়রানি : অচেনা নারীকে ‘সুন্দরী’ বলা থেকে সাবধান !


যৌন হয়রানি : অচেনা নারীকে ‘সুন্দরী’ বলা থেকে সাবধান !
রণদীপম বসু

যৌন হয়রানি রোধে এক যুগান্তকারী রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কর্মক্ষেত্রে এবং রাস্তাঘাটে নারী ও শিশুদের যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন রোধে সরকারের কোন সুনির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকায় সরকারকে একটি সাধারণ নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশ দিয়ে গত ১৪ মে, ২০০৯ তারিখ এ রায় দেয়া হয়। রায়ে বলা হয়েছে, এ সংক্রান্ত আইন পাস না হওয়া পর্যন্ত সংবিধানের ১১১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী হাইকোর্টের দেয়া দিকনির্দেশনামূলক এই নীতিমালা বাধ্যতামূলকভাবে মেনে চলতে হবে। আর সরকারি নীতিমালা না হওয়া পর্যন্ত রায়টি অনুসরণের জন্য আদালত থেকে কয়েকটি দিকনির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি কামরুল ইসলাম সিদ্দিকী সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ দীর্ঘ শুনানি শেষে ১৪ মে, ২০০৯ তারিখ বৃহষ্পতিরার এ রায় দেন। (সূত্র: সমকাল, ১৫মে,২০০৯)

কর্মস্থলে ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নারী ও শিশুদের যৌন হয়রানি বন্ধে দিক নির্দেশনা চেয়ে জনস্বার্থে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির পক্ষে সমিতির নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সালমা আলী ২০০৮ সালের ৭ আগস্ট একটি রিট আবেদন দায়ের করেন। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শুনানি শেষে এ রায়ে শারীরিক-মানসিক যৌন হয়রানিসহ মোবাইল ফোনে এসএমএস, দেয়াললিখন, পর্নোগ্রাফি, যৌন উস্কানিমূলক মন্তব্যসহ মোট ১১ ধরনের কাজকে যৌন নিপীড়নমূলক বলে চিহ্ণিত করা হয়েছে।

এই সংজ্ঞায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সব কর্মক্ষেত্রে সরাসরি যৌন হয়রানি; নারী ও শিশুদের ব্যাপারে কুৎসা রটানো, চরিত্র হননের চেষ্টা, শারীরিক নির্যাতনের চেষ্টা; পথেঘাটে কোন নারীকে অসৎ উদ্দেশ্যে ‘সুন্দরী’ বলা, কুদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা; ই-মেইল, এসএমএস বা টেলিফোনে উত্যক্ত করা; প্রতারণা, ব্ল্যাকমেইল, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও জালিয়াতি; উদ্দেশ্যমূলকভাবে শরীরের বিশেষ অঙ্গে স্পর্শ করা বা শরীরের কোথাও আঘাত করা; রাস্তাঘাট ও পাবলিক প্লেসে উত্যক্ত করা (ইভটিজিং); নারী ও শিশুদের নগ্ন ছবি ও কার্টুন ইত্যাদি আঁকা বা প্রকাশ ও প্রদর্শন করাকে যৌন নিপীড়ন বলে চিহ্ণিত করা হয়েছে।

সরকারকে আদালতের দেয়া দিকনির্দেশনায় বলা হয়েছে, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে নারী ও শিশুদের যৌন হয়রানি প্রতিরোধে একটি অভিযোগকেন্দ্র থাকবে। এই অভিযোগকেন্দ্র পরিচালনার জন্য ন্যুনতম পাঁচ সদস্যের কমিটি থাকবে। কমিটির প্রধান হবেন একজন নারী। এ ছাড়া কমিটিতে একাধিক নারী সদস্যও থাকবেন। যারা হয়রানির শিকার হবেন তারা এ কমিটিতে অভিযোগ করবেন। কমিটি কোন অভিযোগ পেলে তদন্ত ও অনুসন্ধান শেষে পুলিশের কাছে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে পাঠাবেন। এরপর দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী অপরাধের ধরন ও মাত্রা অনুযায়ী বিচার বিভাগ যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন। নির্যাতন সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া এবং পুলিশের কাছে অভিযুক্তকে সোপর্দ করার আগে নির্যাতিত ও অভিযুক্ত ব্যক্তির কোনো পরিচয় প্রকাশ করা যাবে না। রায়ে যৌন নিপীড়ন এবং এর শাস্তি সম্পর্কে সর্বস্তরে সচেতনতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়।

এসবের বাস্তবায়ন করতে আইন সচিব, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, শিক্ষা সচিব, শ্রম সচিব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, ইউসিজি, বিকেএমইএ, বিজিএমইএ, বার কাউন্সিল, পুলিশ ও তথ্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেয়া হয়।

মামলাটি পরিচালনা করেন জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট ফাওজিয়া করিম ফিরোজ ও অ্যাডভোকেট সীমা জহুর। অন্যদিকে সরকার পক্ষে ছিলেন ডেপুটি এটর্নি জেনারেল রাজিব আল জলিল।

আসুন এ যুগান্তকারী দিকনির্দেশনাকে আইন হিসেবে যথাযথ শ্রদ্ধা দেখিয়ে নিজেরা মেনে চলি এবং অন্যকেও উদ্বুদ্ধ করি।
Image: Bangladesh Supreme Court, by Tanzirian (from SkyscraparPageForum)

[sachalayatan]

No comments: