Tuesday, September 22, 2009

। দুই-মেগাপিক্সেল...। এক চিমটি র‌্যাংগস ।


। দুই-মেগাপিক্সেল...। এক চিমটি র‌্যাংগস ।
রণদীপম বসু

...
আমার এই দুই-মেগাপিক্সেলটা যখন হাতে আসে, র‌্যাংগস ভবন তখন বিলুপ্তির শেষ ধাপে। টাউন বাসে আসতে যেতে এর বিলুপ্তির প্রতিটা ধাপই চোখে পড়েছে। কিন্তু তা ধারণ করে রাখার সুযোগ ছিলো না। হঠাৎ করে ঢাকায় উগ্র-মোল্লাদের ভাস্কর্য ভাঙার একটা অস্থিরতা দেখা দিলে, ‘যদি হারিয়ে যায়’ ধরনের একটা বোধ বুকের ভেতরে চাড়া দিয়ে উঠলো। জনপদ জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন ভাস্কর্য-স্মারক-পথভাস্কর্য-স্থাপনাগুলোকে আলোকস্মৃতিতে ধরে রাখার হাস্যকর একটা তাগিদ থেকে ছাপোষাদের প্রাপ্য অনুদান উৎসব বোনাসের সীমিত সামর্থ দিয়ে দুই-মেগাপিক্সেলটার স্বত্ব পেলাম। ক’দিন পরই ঈদের ছুটি, ঢাকা যখন ফাঁকা অবস্থা, ভবঘুরে দু’পা সঙ্গি করে বেরিয়ে পড়ি। দুপুর নাই সন্ধ্যা নাই যখন যেখানে পারছি দুই-মেগাপিক্সেলে ধরতে চাচ্ছি সব। আমার দুর্ভাগ্য বলতে হবে, সেই ক’টা দিনই সূর্য মিয়াও সম্ভবত ঈদের ছুটিতে ঢাকার বাইরে ছিলো। তাই আমার মতো ভাদাইম্যা-কুয়াশার উৎপাতে ছবি তুলবো কী, একটু দূর থেকেই দেখা যাচ্ছিলো না কিছুই। কিন্তু এর পরে যে আমার আর সুযোগ নেই !

হাঁটার শ্রান্তি কান্তি ভুলে ঘেমে নেয়ে একশেষ হাঁপাচ্ছি আর গাবরের মতো সাটার টিপছি কেবল। এগুলোতে না আছে ফটোগ্রাফি, না আছে শিল্প। থাকবে কোত্থেকে ! পূর্ব অভিজ্ঞতা ও পেশাগত দক্ষতা না থাকলে যা হয়। তবে পুঁজি কম নয়, অদম্য আগ্রহ আর মন কেমন করা আবেগ। না থাক্ নান্দনিকতা, চিহ্ণ তো রইলো ! ওটাই সান্ত্বনা।


শীর্ষের ছবিটাও তখনই তোলা, ২৫-১২-২০০৮ সন্ধ্যা হয় হয় সময়টাতে। স্মারক ভাস্কর্যটির লাল স্তম্ভগুলোর ফাঁক দিয়ে এক চিমটি র‌্যাংগস ভবন ধরা পড়তেই খেয়াল করলাম, আসলে ওইটুকুই ভবনটির অবশিষ্টাংশ। গাড়ি-ঘোড়ার ফাঁক-ফোকর বাঁচিয়ে সেই র‌্যাংগস-এর শেষ কংকালটাও ধরে রাখলাম।

একটা আফসোস বেজে উঠলো- ইশ্, আর ক’দিন আগে হলে ইতিহাসের সাক্ষী ভবনটার একটা পূর্ণ ছবিও রাখা যেতো ! যদি কখনো ‘টাইম মেশিন’ জাতীয় যান চলাচল চালু হয়, সুযোগ পেলে নিশ্চিতভাবে অতীতে গিয়ে ওটার একটা ছবি নিয়ে আসবো, এই সিদ্ধান্তটাও মনে মনে নিয়ে রাখলাম। কিন্তু এই নশ্বর জীবনের আছি-নেই তুলনাটা বোঝার জন্য একটা ছবি তো দরকার ! অন্তর্জালিক আর্কাইভে ঢুঁ মেরে পেলাম এইটা, ছবির উৎসে বলা আছে শাহাবুদ্দিন ব্লগস্পট। ছবিগ্রাহকের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ছবিটা ব্যবহার করলাম এখানে।


ফিরে আসতে আসতে বুক থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো। জীবনের নশ্বরতা চোখের সামনে ঘটতে দেখলে ছিটগ্রস্ত মানুষের মনে কখনো কখনো আধা-দার্শনিকবোধ জেগে উঠে। তাই মনে হলো ক’দিন পর এই চিহ্ণহীন ফাঁকা জায়গাটায় দাঁড়িয়ে হয়তো কোন বাউল একদিন এমনি করে গেয়ে উঠবে-

এইখানে এক দালান ছিলো র‌্যাংগস ছিলো তার নাম
একদিন সেইটা হাপিশ কইরা দয়াল করলা কেমুন কাম
আহা, এই আছি এই নাই-এর মাঝে নাইরে কারো দাম
দয়াল এ কেমুন ইঞ্জাম...।

...

Sunday, September 20, 2009

| দুই-মেগাপিক্সেল…| ০১ | জাতির উদ্দেশ্যে সালাম |


| দুই-মেগাপিক্সেল…| ০১ | জাতির উদ্দেশ্যে সালাম |
রণদীপম বসু


পঙ্গু-জীবনের অনিশ্চিৎ ভার ভিক্ষার উপরই ছেড়ে দিয়েছে সে। দুই-মেগাপিক্সেলটা তাক করে বললাম- তোমার ছবি অনেকেই দেখবে কিন্তু। সাথে সাথে ডান হাতটা কপালে ঠেকিয়ে জাতির উদ্দেশ্যে সালাম ছুঁড়ে দিলো।

জাতি কী দিয়েছে তাকে, এটা কি ভেবেছে সে ? আমরা যাঁরা কয়েক কেলাশ পাশ দিয়ে বেশ তাগড়া হয়ে উঠেছি, তাঁরাই হয়তো এসব হিসাব-নিকাশ করতে করতে মুখে ফেনা তুলে ভাবি- সালাম ? কাকে দেবো ! কেনো দেবো ! অথচ সে হয়তো হিসাবটাই বুঝে না। বুঝবে কী করে ! সেই সুযোগটাও কি জাতি দিয়েছে তাকে ? তাই কিংবা তবু, জাতির উদ্দেশ্যে সালাম দিতে ভুল করেনি সে।

আস-সালামু-আলাইকুম….. ঈদ ও পুজা মুবারক…


[sachalayatan]

Friday, September 18, 2009

| বাটা'র জুতো, পায়ে না বগলে শোভা পায় ভালো ?


বাটা'র জুতো, পায়ে না বগলে শোভা পায় ভালো ?
রণদীপম বসু

[প্রথমেই বলে রাখি, এটা কোন জুতো প্রদর্শনের পোস্ট নয়। চলমান কিছু বাস্তবতা নিয়ে নাড়াচাড়া কেবল। তাই দয়া করে কেউ ভুল বুঝবেন না।]

বগলে জুতো মাথায় ছাতা, বাঙাল জনপদে এটা মোটেও কোন অপরিচিত দৃশ্য নয়। সেই ছোটবেলা থেকে তা এতো দেখে আসছি যে, মনে হয় জুতো পায়ে নয়, বরং বগলতলাতেই মানানসই বেশি। পায়ে পরার জুতো কেন পা ছেড়ে বগলতলায় উঠে যায় তা নিয়ে গবেষণার খুব একটা প্রযোজন হয়তো নেই। পা থেকে জুতো মহার্ঘ হয়ে গেলে বা পায়ের চেয়ে জুতোর নিরাপত্তা অগ্রাধিকার পেলে এমনটা ঘটতে পারে। তবে পা থেকে কেন জুতো মহার্ঘ হবে বা অধিক নিরাপত্তা দাবী করবে সেটা হয়তো গবেষণার বিষয়। এ নিয়ে গবেষণা কেউ যে করছে না, তাই বা বলি কী করে। বিশেষ করে জুতো নিয়ে যাদের কায়কারবার তেমন বড় বড় কোম্পানি বা বহুজাতিক কোম্পানিগুলো যে দেশে তাদের পুঁজির বিস্তার ঘটাবে সেখানকার বৃহত্তর জনগোষ্ঠির পা ও জুতোর সম্পর্ক নিয়ে আগ্রহ দেখাবে এটাই তো স্বাভাবিক। নইলে তাদের ব্যবসার শনৈ শনৈ উন্নতির চাবির খোঁজ পাবে কী করে !

জুতোর ব্যবহার কেবল পায়েই নয়, বাঙালি সমাজে এর ব্যবহারে প্রচুর বৈচিত্র্য রয়েছে। বাংলায় জুতো-মারা, জুতো-পেটা, জুতো-দান, জুতো-নিক্ষেপ, জুতোর-মালা জাতীয় এরকম শব্দ-বন্ধই এর নিদর্শন। বাঙালি ছাড়া অন্য কোন জাতি বা গোষ্ঠিতে জুতোর এমন বিচিত্র ব্যবহার কতোটা প্রচল তা জানা নেই। তবে আজকাল এর পসারের কিছুটা ইঙ্গিত পাই ইরাকি সাংবাদিক জায়েদি কর্তৃক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডব্লিউ বুশকে লক্ষ্য করে জুতো ছুঁড়ে মারার মধ্য দিয়ে। বাঙাল মুল্লুকের এই বহুমাত্রিক সংস্কৃতি দেশ-কালের সীমানা ডিঙিয়ে চারদিকে ছড়িয়ে যাচ্ছে, এটা আমাদের জন্য শ্লাঘার বিষয় বৈ কি। এই জুতো দেখেই ব্যবহারকারীর পদ-পদবী-শ্রেণী-অবস্থান সম্পর্কেও নাকি কিছু কিছু আঁচ করা যায়। তাই পোশাকে-আশাকে যতোটা না, জুতো কেনার ক্ষেত্রে অনেকেরই খুঁতখুতিটা একটু বেশিই দেখা যায়। আর নির্দিষ্ট ও সীমিত আয়ের চাকুরেদের ক্ষেত্রে আরো বড় সমস্যা হলো মাথা থেকে নামতে নামতে প্রতিটা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের চাহিদা মিটিয়ে শেষপর্যন্ত পায়ের জন্য আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। যে পায়ের উপর দাঁড়িয়ে আমাদের এতো ফুটানি, সেই পা’কে বঞ্চিত করা হয়তো কারো উদ্দেশ্য নয়, আর্থিক অনটন বা অক্ষমতাই মূল কারণ। এক জোড়া জুতোই তো কেবল গোটা সংসার বা পরিবার নয়, অপূর্ণ হাজারো চাহিদার বেদনাময় চলমানতা নিয়েই খুঁড়িয়ে চলা অভাবী জীবন-যাপন। তাই একান্ত জুতো-বিলাসী না হলে নিম্ন-মধ্য আয়ের চাকুরের একাধিক পোশাক সেট থাকা বাধ্যগত হলেও ভদ্র-অবস্থান নিরূপণকারী এক জোড়ার বেশি জুতো রাখা অধিকাংশেরই ক্ষমতায় কুলোয় না। আর ক্ষমতাই যেহেতু এক জোড়া, তাই সাশ্রয়ী সীমার মধ্যে যতোটা সম্ভব রুচিসম্মত ও টেকসই জুতো-জোড়াটাই খুঁজে নিতে হয় তাঁদের। এবং সমস্যাটা সেখানেই।

জুতো নিয়ে এইসব মামুলি চাকুরেদের বড় সমস্যাটা হয বর্ষায়। জুতোও পরতে হবে, আবার নর্দমার ড্রেন হয়ে ওঠা রাস্তায়ও চলতে হবে। এক্ষেত্রে ঢাকা নগরীর বর্ষার কথা বলতে যাওয়ার চেয়ে কিছুক্ষণ হাউমাউ করে কেঁদে নেয়াই অনেক বেশি স্বস্তিকর। চাকুরিগত অবস্থান অনুযায়ী বর্ষায় ভেসে বেড়ানোর মতো জলচর জুতোর খোঁজে সেদিন ঢুঁ মারতে লাগলাম দোকান থেকে দোকানে, পছন্দসই একজোড়া স্যান্ডেল আর খুঁজে পাচ্ছি না। প্লাস্টিকের তৈরি যা পাচ্ছি, তার দাম কড়া হলেও, চেহারা ও মান দেখে এতোই কুৎসিৎ ও নিম্নস্তরের লাগছে যে, অফিস করা দূরের কথা, পোশাক ছেড়ে নেংটা হয়ে হাঁটাই বোধকরি ওগুলোর সাথে মানানসই বেশি হবে। (বলে রাখা ভালো, রুচিবোধ হচ্ছে আপেক্ষিক, কাউকে ছোট করার জন্য তা বলা হচ্ছে না, বরং তাৎক্ষণিক অনুভূতি ব্যক্ত করাটাই এখানে মূখ্য।) বড় কোম্পনী বাটা সু’তে বর্ষা উপযোগী প্লাস্টিকের স্যান্ডেল ও সু হিসেবে যেগুলো প্রদর্শন করা হচ্ছে তার দাম ফুটপাথের দোকানগুলোর চেয়ে কয়েকগুণ হলেও তার চেহারা দেখে নিজের গালেই নিজের চড় খেতে ইচ্ছে করে। সেই ঠাকুরদাদার আমলে তাদের জন্য যে মডেলগুলো তৈরি করা হয়েছিলো, তা থেকে এই বাঙালদের রুচি ও প্রযুক্তি যে আর এক কদমও এগিয়েছে, বাটা কোম্পানি তা বিশ্বাস করে কিনা জানি না, তাদের এসব পণ্য অন্তত সেই প্রমাণ দেয় না। হৈতকাইল্যা আমলের ভেলামার্কা মডেলগুলো শোপিস হিসেবে ঝুলিয়ে রাখতে তাদের একটুও বাঁধে না। তাদের বাঁধবে কেন ! হায়া-শরম থাকলে আমিই বা সব ঘুরে ব্যর্থ হয়ে ওখানে ফের যাবো কেন ? আমার অভিরুচি জানতে পেরে দায়িত্বরত সেলসম্যান একজোড়া জুতো হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো- এগুলো নেন। দাম ? নয়শ’ টাকা। লাফ দিয়ে উঠলাম দাম শুনে ! বলে কী ! পাঁচ-ছ’শ টাকার চামড়ার স্যান্ডেল পরে রীতিমতো স্থলে বিচরণ করছি, আর জলে চরার জন্য নয়শ’ টাকা ! আমাকে আশ্বস্ত করে জানালো- এগুলো মটর স্যান্ডেল, শুকনায় বর্ষায় রোদে বৃষ্টিতে সব জায়গাতেই সমানতালে চলবে। অর্থাৎ উভচর ! আরো জানালো- অন্ধকারে পেছন থেকে হঠাৎ আলো পড়লে জুতোর বিশেষ বিশেষ জায়গা থেকে আলো ঠিকরাবে। এতো গুণ ! একটু বিলাসিতা হয়ে গেলেও গাইগুঁই করে নিয়েই নিলাম। শুকনা ও বর্ষা, উভয় মৌসুমে ব্যবহার করা গেলে দামটা না হয় একটু কড়াই হলো, রয়েসয়ে চালিয়ে দেয়া যাবে। লঙ্কাজয় করার ভাব নিয়ে জুতোর বাক্স বগলদাবা করে চলে এলাম। দিনটা ছিলো আটাশ জুলাই দুহাজার নয় তারিখ।


এবারের বর্ষা শেষপর্যন্ত আর জুত করে নামেনি। তবু তৃতীয় দিন থেকে অন্ধকারে পেছনের গাড়িকে চোখ রাঙানোর ফ্লুরোসেন্ট ফিতা জুতো থেকে আলগা হতে লাগলো। তা যাক, জুতো অন্তত এক বছর তো যাবেই, কোনোভাবে দুটো বছর কাটাতে পারলে টাকাটার একটা সদগতি হয়েছে ধরে নেবো। কিন্তু আমি কি জানতাম যে এ জুতো পায়ে দিয়ে নয়, বগলদাবা করে চলতে হয় ! বাটা কোম্পানির লোকেরাও তো আমাকে সেকথা বলেনি ! বাসা থেকে অফিস, হেঁটে আসলে পনেরো মিনিটের রাস্তা। ঘুমকাতুরে হিসেবে অধিকাংশ সময়ই অফিসটাইম ধরতে রিক্সায়ই যেতে হয়। অফিস শেষে হেঁটেই বাসায় ফেরায় আগ্রহী। তবু বৃষ্টি বা রাস্তায় পানি থাকলে তাও রিক্সায়। কিন্তু মাস না পেরোতেই জুতোর তলায় ধরণী দ্বিধা হতে লাগলো। দেড়মাসের মাথায় তলা দু’ভাগ। জুতোর এই তলাকে আবার পোশাকি ভাষায় নাকি সোল বলে। এটা ইংরেজি শব্দ। ইংরেজি ভাষায় জীবনের আত্মাকেও সোল বলে। হা হা হা ! বুকের কোণায় নয়শ’ টাকার চিনচিনে ব্যথাটা অনুভব করে বুঝলাম আমার মতো বাঙালির আত্মাটা জুতোর তলায়ই থাকে।

যেখান থেকে জুতো জোড়াটা কিনেছিলাম, মিরপুর এক-এর বাটা সু’র সেই শোরুমে গেলাম আবার। ক্যাশ-কাউন্টারে দায়িত্বরত মধ্যবয়সী ভদ্রলোকের হাতে মানি-রিসিটটা ধরিয়ে জুতোটাও দেখালাম। জানতে চাইলাম- আপনাদের করণীয় কিছু কি আছে ? ভদ্রলোক হয়তো বাঁ-হাতিই হবেন, চেহারায় পৃথিবীর সমস্ত বিরক্তি জড়ো করে বাঁ হাতে রিসিটটা নিয়ে চোখ ও কপাল কুঞ্চিত করে নেড়েচেড়ে রিসিটটা পরখ করে অবদমিত তাচ্ছিল্যের সাথেই রিসিটটা ফিরিয়ে দিলেন বাঁ-হাতেই। অর্থাৎ পণ্য কেনার আগ পর্যন্ত আপনি সম্মানিত ক্রেতা, তারপরই আপনি ধুম পাবলিক। আমি চেয়ে রইলাম তাঁর দিকে। মাথাটাকে এপাশ-ওপাশ নাড়িয়ে বুঝিয়ে দিলেন, এখানে তাঁর কিছুই করার নেই।
...
[sachalayatan]

Tuesday, September 15, 2009

| ঘড়ায়-ভরা উৎবচন…|৬১-৭০|


| ঘড়ায়-ভরা উৎবচন…|৬১-৭০|
রণদীপম বসু

.
(৬১)

প্রশংসা বহুল চর্চিত একটি লেনদেন মাত্র,
যা খরচ করে মানুষ তার চেয়ে বেশি লাভ করতে চায়।

(৬২)
ক্ষমতার ব্যবহার ক্ষমতাকে অন্ধ করে।

অন্ধ সিংহের চাইতে দৃষ্টিবান গাধাও কার্যকর।

(৬৩)
বিয়ে হলো সংশোধনের অযোগ্য ভুল,
যা করে গবেটরা বীরত্ব দেখায়
আর বীরেরা বুদ্ধু সাজে।

(৬৪)
টক-শো আর চিড়িয়াখানায় একটাই তফাৎ;
টক-শো’তে কিছু মানুষ প্রদর্শন করানো হয়
আর চিড়িয়াখানায় পশু।

(৬৫)
সবচেয়ে পরাধীন সে-ই, যার আত্মহত্যার অধিকার নেই।

(৬৬)
অনিয়ন্ত্রিত ক্রুদ্ধতা জলাতঙ্কে আক্রান্ত একটা উন্মাদগ্রস্ত কুকুর।

(৬৭)
ধর্মগ্রন্থ এক অলৌকিক তাবিজ, যার ক্ষমতা কেবল কল্পনায়।
মূর্খ-সমাজে কল্পনার ক্ষমতা অসীম।

(৬৮)
আশ্চর্য হওয়ার ক্ষমতা মানুষকে স্বপ্নবান করে।
স্বপ্নবান মূর্খ স্বপ্নহীন জ্ঞানীর চেয়ে উত্তম।

(৬৯)
অশ্লীলতার জন্ম অবদমিত কামনায়, যা
লালিত ও পরিপুষ্ট হয় ভদ্রলোকালয়ে।

(৭০)
বেঁচেথাকার আশ্চর্য প্রেরণা হচ্ছে মৃত্যুচিন্তা।



[৫১-৬০][*][৭১-৮০]

| আমি কি প্রতারিত ! গ্রামীণ ফোন কী বলে ?


আমি কি প্রতারিত ! গ্রামীণ ফোন কী বলে ?
রণদীপম বসু

.
এ পোস্ট যে কোন প্রশস্তিমূলক নয়, তা শিরোনামেই স্পষ্ট। কিন্তু এটা নিন্দাসূচক পোস্টও নয়। দেশের বৃহত্তম মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণ ফোনের অদ্ভুত আচরণ বা সম্ভাব্য অভিসন্ধিমূলক কৌশলে ইন্টারনেট গ্রাহক বা ব্যবহারকারী হিসেবে নিজেকে যে প্রতারিত বোধ করছি, তা কতোটা যৌক্তিক, এই ভাবনাটা শেয়ার করাই এই পোস্টের উদ্দেশ্য। আমি ঠিক জানি না, অন্যদের এ অভিজ্ঞতা হয়েছে কি না।

গ্রামীণ ফোনের পেন-ড্রাইভ স্টাইলের এজ মডেম সমৃদ্ধ ’আলো আসবেই’ নামের প্লাগ এন্ড প্লে সুবিধার প্যাকেজটা বাজারে আসার আগে আমি অন্য একটা অপারেটরের ডায়াল-আপ স্যাটেলাইট কানেকশান ব্যবহার করতাম। গ্রামীণ ফোনের এই চাহিদাসম্পন্ন ও জনপ্রিয় হয়ে ওঠা প্যাকেজটা মনে ধরায় আমি কয়েকবার ধরনা দিয়ে অবশেষে সেসময় চারহাজার চারশ’ টাকার বিনিময়ে প্রিপেইড ইন্টারনেট সীমসহ এই মডেম দিয়ে প্রিপেইডে তাদের পি-টু (P2) প্যাকেজ অর্থাৎ আনলিমিটেড একসেস ব্যবহার করে আসছি। ব্যক্তি ব্যবহারকারী হিসেবে ইন্টারনেটে কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি আর ব্লগিং-এর জন্য ভ্যাটসহ মাসে নির্ধারিত ৯৭৭.৫০ টাকার অগ্রীম রিচার্জ দিয়ে আনলিমিটেড একসেস ব্যবহারের আদৌ কোন প্রয়োজন আছে কি না, সেটা ভিন্ন বিষয়। চাকুরিগত কারণে অফিস ডে’তে দিনে তা ব্যবহারের খুব একটা সুযোগ হয় না। অফিস-এন্ডে রাতে বাসায় কয়েক ঘণ্টা ইন্টারনেট ব্যবহার করতে এই ব্যয়বহুল প্যাকেজের খুব একটা প্রয়োজন না থাকলেও ব্যক্তিগত পছন্দ এবং কখনো যদি বেশি ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ে বিবেচনায় আমি পি-টু (P2) কানেকশানেই আগ্রহী ছিলাম এবং আছিও।

গত আগস্ট ২০০৯ মাস থেকে গ্রামীণ ফোন প্রিপেইড সিস্টেমে নতুন করে কোন পি-টু (P2) সংযোগ দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে। তবে পুরনো কানেকশানগুলো এই শর্তে বহাল থাকে যে, তিরিশ দিনের প্যাকেজ-পূর্ণের ডেট-ওভার হবার আগেই রিচার্জের মাধ্যমে নির্ধারিত অগ্রিম বিল পরিশোধ না হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পি-টু (P2) কানেকশান কেটে যাবে এবং পুনঃ রিচার্জ করে পছন্দানুযায়ী হয়তো ‘নো ইউজ নো পে’ সিস্টেমের আওতায় ০.০২ টাকা প্রতি কিলোবাইট ব্যবহার মূল্যের পি-ওয়ান (P1) প্যাকেজ, কিংবা প্রতি ৩ গিগাবাইট ৮৫০ টাকার মাস-লিমিট প্যাকেজ পি-ফাইভ (P5) বা প্রতি ১ গিগাবাইট ৩৪৫ টাকার মাস-লিমিট প্যাকেজ পি-সিক্স (P6) বা অন্য যে কোন সুবিধা গ্রহণ করা গেলেও পি-টু (P2) সুবিধা আর ফিরে পাওয়া যাবে না।

প্রিপেইডে আমার আনলিমিটেড একসেস পি-টু (P2) কানেকশান টিকিয়ে রাখার সুবিধার্থে নির্ধারিত নির্ধারিত ৩০ দিনের টাইম ফ্রেমের মধ্যে আগেভাগেই আমি এযাবৎ ১০০০ টাকা করে ফ্লেক্সিলোডের মাধ্যমে রিচার্জ করে নির্ধারিত সময়ের আগেই আমার কানেকশানটি চালু রাখার প্রয়োজনীয় কাজটি করে আসছি। এতে এই অ্যাকাউন্টে অতিরিক্ত কিছু ব্যালেন্সও প্রতিমাসেই যুক্ত হচ্ছে। কিন্তু সর্বশেষ এই ১৩ সেপ্টেম্বর ২০০৯ অর্থাৎ গতকাল পর্যন্ত আমার প্রচেষ্টা, উদ্যোগ, আন্তরিকতা ও আগ্রহে কোন ঘাটতি না থাকলেও যে পদ্ধতিতে আমার পি-টু (P2) কানেকশানটি আন-একসেস করা হয়েছে, এর কোন যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা ও প্রতিকার না পেয়ে এটাকে আমি গ্রামীণ ফোনের অযৌক্তিক ও গ্রাহক-প্রতারণামূলক কাজ হিসেবেই বিবেচনা করছি।

গতকাল ১৩ সেপ্টেম্বর ২০০৯ সকাল সাড়ে দশটার কাছাকাছি কোন এক সময়ে একটা ফ্লেক্সিলোডের দোকান থেকে নিয়মিত প্রতিমাসের মতোই যথানিয়মে ১০০০ টাকার ফ্লেক্সি করাই আমার ইন্টারনেট সীম নম্বরের অ্যাকাউন্টে। রাতে বাসায় ফিরে কম্পিউটারে প্লাগ-এন্ড-প্লে মডেম সংযুক্ত করলাম, কিন্তু অন্যান্যবারের মতো এবার আর কোন ক্রিং করে ইনকামিং ম্যাসেজ এলার্ট টোন পেলাম না। যথারীতি ওটার ইনবক্স ম্যাসেজে ঢুকলাম, কোন আপ-ডেট ম্যাসেজ নেই। তবে কি যথাস্থানে ফ্লেক্সি হয় নি ! আমি কোন টেকি মানুষ নই। কম্পিউটার প্রযুক্তি বা গণক-যন্ত্রের কলকব্জা ও এর জটিল সব কর্মকাণ্ড সম্পর্কে আমার ধারণা শূন্যের কোঠায়। তবে অভিজ্ঞতা দিয়ে যেটুকু জেনেছি, কোথাও থেকে মোবাইল সীম নম্বরে ফ্লেক্সিলোড করা হলে সংশ্লিষ্ট সীমের অ্যাকাউন্টে টাকা জমা হওয়ার একটা মেসেজ চলে যায়, মোবাইল ফোনগুলোতে যা আমরা সচরাচর দেখে থাকি। [Name:
Number: FlexiLoad
Content:
Your account has been refilled successfully by TK1000.0.Your Transaction ID is BD2081217280172.Please pay to Retailer.
Time: 12/08/2009 17:28:14]

এ যাবৎ তাই হয়ে আসছে। ইন্টারনেট সীমের ক্ষেত্রে এই ম্যাসেজের মাধ্যমে রিচার্জ নিশ্চিত হওয়া গেলে তাদের দেয়া নম্বর ৫০০০-এ একটি মেসেজ প্রেরণের মাধ্যমে চলতি প্যাকেজ বহাল রাখা বা প্যাকেজ পরিবর্তনের পছন্দ জানিয়ে দেয়ার পরই তারা প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়। কিন্তু এই প্রথম এর অন্যথা হলো। মেসেজ না পেয়ে ভাবলাম নিশ্চয়ই ওই ফ্লেক্সি দোকানদার ফ্লেক্সিটা করে নি বা ভুল নম্বরে টাকা পাঠিয়েছে। রাত তিনটা পর্যন্ত বারবার মেসেজ চেক করে গেলাম, কোন আপ-ডেট মেসেজই পেলাম না। আরো আশ্চর্যের বিষয়, প্যাকেজ টাইম ওভার হবার কমপক্ষে চব্বিশ ঘণ্টা আগেই প্রতিমাসে যে সতর্কবার্তাটা নিয়মিত এসে বসে থাকতো-

Name:
Number: 5000
Content:
Your EDGE P2 will expire on 2009/08/15. To continue EDGE P2 please keep Tk.977.50 (including 15% VAT). To unsubscribe, send OFF to 5000 before 2009/08/15.
Time: 13/08/2009 09:54:13
এ ধরনের কোন মেসেজও পেলাম না। ভাবলাম হযতো এখনো সময় হাতে আছে। যাক্ কী আর করা, ওই ফ্লেক্সিদোকানদারকে ধরতে হলে সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই হবে !

সকালে অফিস-পথে ওই ফ্লেক্সি দোকানে হামলে পড়লাম। খাতাপত্র দেখে লোকটা আমাকে নিশ্চিত করলো যে ফ্লেক্সি যথাসময়েই করা হয়েছে। কিন্তু এতে আমার অবিশ্বাস, তাহলে মেসেজ আসবে না কেনো ! অবশেষে গ্রামীণ ফোনের কাস্টমার কেয়ার ১২১-এ ডায়াল করা হলো। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর লাইন পাওয়া গেলো। ওপাশ থেকেও নিশ্চিত করা হলো যে, টাকাটা গতকাল সকালেই জমা হয়েছে। তাহলে মেসেজ পেলাম না কেন ? দুঃখ দুঃখ স্বরে জানানো হলো, ওগুলো আসলে কম্পিউটারের অটোমেশন সিস্টেমেই হয়ে থাকে, তাই কেন হলো না এটা এ মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না, তবে সাধারণত এমনটা হয় না। তবে আমার টাকাটা জমা হবার বিষয়টা আবারো নিশ্চিত করা হলো। বেশ, আমি অনুরোধ করলাম আমার প্যাকেজটা চালু রাখার ব্যবস্থা করার জন্য। একটু সময় চেয়ে ফোনটা কিছু সময়ের জন্য নীরব রইলো।

অতঃপর ওপাশ থেকে অত্যন্ত দুঃখ প্রকাশ করে আমাকে জানানো হলো যে, আমার পি-টু (P2) কানেকশানটা ১৪ সেপ্টেম্বর ২০০৯ সময় ১.৩৪ এএম থেকে অলরেডি স্থানান্তর হয়ে পি-ওয়ান (P1) কানেকশানে চলছে। শুনে আমি আকাশ থেকে পড়লাম ! আমি তো এর বহু আগে সেই সকালেই ফ্লেক্সি করেছি এবং কোন মেসেজ না পেয়ে বিভ্রান্ত আমার এটা তো এর আগে অভিজ্ঞতায় ছিলো না যে, ওই মডেম সীমের ব্যালেন্স জানার জন্য আরেকটা মোবাইল ফোন রাখতে হবে, যা দিয়ে সুনির্দিষ্ট নম্বরে ((*566*10#) ডায়াল করে আপ-ডেট ব্যালেন্স জেনে সে অনুযায়ী ইন্টারনেট সচল রাখার ব্যবস্থা নিতে হবে ! তাহলে মিনিমাম চব্বিশ ঘণ্টা আগেই যে সতর্কতা মেসেজটা পাঠানো হয়, তা পেলাম না কেন ? আবারো অজ্ঞাত কারণের সপক্ষে দুঃখ প্রকাশ করে আমাকে ওপাশ থেকে অদ্ভুত সান্ত্বনা জানিয়ে এবার পি-ফাইভ (P5) প্যাকেজের সাশ্রয়ী সুবিধা ও গুণাগুণ ইত্যাদি বিস্তারিত জানাতে লাগলেন। তাঁর কথা থামিয়ে আমি বললাম যে, গ্রামীণ ফোনের এই অনৈতিক আচরণে আমি প্রতারিত হওয়ার কষ্ট পেয়েছি। তিনি আমার কষ্টে সহমর্মিতা জানিয়ে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে পি-ফাইভ (P5) প্যাকেজ অন করে দেয়ার অনুমতি চাইলেন এবং বললেন, পুণরায় একাউন্ট রিচার্জ না করলে অক্টোবর ১৩ তারিখ সকাল ১০.৩৪ টা পর্যন্ত আমি নতুন এই সুবিধা খুব আনন্দের সাথে উপভোগ করতে পারবো। এবং গ্রামীণ ফোনের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে জানতে চাইলেন যে আমার জন্য তিনি আর কি সেবা দিতে পারেন ?

আমি বললাম, আমি আমার পি-টু (P2) প্যাকেজেই থাকতে চাই। ওপাশ থেকে অত্যন্ত মার্জিত ও পেশাদার জবাব এলো, স্যরি স্যার, টাইম ফ্রেম খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপার। ওখানে ফিরে যাওয়ার কোনো উপায় নেই !

আমাকে বাধ্য করে এখন যে প্যাকেজে আনা হয়েছে, এর কোন মেসেজও এখন পর্যন্ত ফর্মালি সংশ্লিষ্ট নম্বরে পাঠানো হয় নি। আমি এখনো বুঝতে পারছি না, এতো বড়ো একটা প্রতিষ্ঠান কি তার গ্রাহককে কোন অভিসন্ধিমূলক কৌশলে অনৈতিক প্রতারণা করতে পারে ? এর জবাব আমি কিভাবে পাবো ?
(১৪-০৯-২০০৯)

[sachalayatan]

Sunday, September 13, 2009

| ঘড়ায়-ভরা উৎবচন...|৫১-৬০|


| ঘড়ায়-ভরা উৎবচন...|৫১-৬০|
রণদীপম বসু

.
(৫১)
যে রোগে কেবল রোগীই টের পায় না কিছু, ভোগে অন্যরা,
তা হলো পাগলামী।

(৫২)
তাঁরাই ধড়িবাজ,
সর্বাবস্থায় যাঁরা হাসিটাকে ধরে রাখে, মুছে না কখনো।

(৫৩)
সংস্কারমুক্তির প্রথম পাঠোত্তীর্ণে
তথাকথিত যে আস্তিক লোকটি আমাকে সর্বাগ্রে অভিনন্দন জানালো,
ভণ্ডের তালিকায় তাঁকেই আমি টুকে নিলাম সর্বাগ্রে।

(৫৪)
সম্রাট শাজাহানকে কৃতিত্ব দেয় সবাই, অথচ
রাষ্ট্রের কোষাগার নিঙড়ে নির্মিত তাজমহল হলো
মানবিক নিঃস্বতার এক মহার্ঘ স্মারক।

(৫৫)
পায়ের গঠন স্বপ্নকে সুগঠিত করে;
পা-হীন মানুষের স্বপ্নও পঙ্গু হয়ে যায়।

(৫৬)
সভ্যতা হলো চশমার মতো,
দৃষ্টিহীন চোখে তা অশ্লীল ও মূর্খ ফ্যাশন।

(৫৭)
মানুষের শ্রেষ্ঠ গুণ হলো চাইলেই সে গুণশূন্য হতে পারে,
অন্য প্রাণীরা তা পারে না।

(৫৮)
বুড়ো আঙুল সবকিছুকে ওকে করে দেখানোয় পারঙ্গম হলেও
গোল বাঁধাতেও ওস্তাদ সে,
এজন্যেই বুড়ো আঙুলকে টিপসই ছাপে আটকে রাখা হয়।

(৫৯)
সবকিছু খেতে পারা ছাগলের দোষ নয়, অনেক বড় গুণ;
মানুষের হীনমন্যতার নিকৃষ্ট নমুনা হলো ছাগলকে ছাগল বানিয়ে রাখা।

(৬০)
একটি অক্ষরকে ধারণ করার আগের ও পরের মানুষটি ভিন্ন হয়ে যায়,
এখানেই অক্ষরের অসীম ক্ষমতা।
শাসক যতো শক্তিধরই হোক, একটা অক্ষরের ক্ষমতাও রাখে না।
...

[৪১-৫০][*][৬১-৭০]

Friday, September 11, 2009

| ঘড়ায়-ভরা উৎবচন...| ৪১-৫০|


| ঘড়ায়-ভরা উৎবচন...| ৪১-৫০|
রণদীপম বসু

.
(৪১)
কবি হবার প্রথম শর্তই হলো নির্লজ্জ হওয়া ;
লজ্জা নিয়ে কোন জননক্রিয়া হয় না।

(৪২)
কাউকে চিনতে হলে, তাকে বিপজ্জনকভাবে রাগিয়ে দাও ;

জিহ্বায় তার যেটুকু পোশাক অবশিষ্ট থাকবে, সেটুকুই সভ্য সে।

(৪৩)
শিক্ষা সেই মুখোশ, যা পরে মানুষ
সামাজিকতার ভাঁড়ামি আর নিখুঁত ভণ্ডামি করে।

(৪৪)
স্তনপিণ্ডে পাথরের আগ্রহ থাকে না;
কারণ সে নিজেকেও প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবে।

(৪৫)
একটা অশ্লীল ও হাস্যকর রণত্রেকে সবাই ঠাট্টা করে দাম্পত্য বলে, যেখানে
দু’পক্ষেই অপেক্ষা করে নোংরা পরাজয়।

(৪৬)
জগতের জটিলতম কূহকের নাম- সন্তানের চোখ;
শেষপর্যন্ত যার পাঠোদ্ধার হয় না।

(৪৭)
চরিত্র হলো স্বভাবের শৃঙ্খলে বাঁধা নিজস্ব কারাগার;
এ থেকে মুক্তি পায় না কেউ, শৃঙ্খলের ধরন পাল্টায় কেবল।

(৪৮)
মানুষের যে আদিম প্রহসনটি আশ্চর্যজনকভাবে টিকে আছে এখনো,
তা হলো ‘নাম’-পরিচয়। অথচ নাম কোন পরিচয়ই বহন করে না। আর
মানুষের অদ্ভুত রসবোধের উৎকৃষ্ট ঠাট্টাটি হচ্ছে ‘নামকরণ’।

(৪৯)
নারী এক অদ্ভুত যন্ত্র,
সহজ বিষয়কে যে অনায়াসে জটিল বস্তুতে প্রক্রিয়াজাত করে।

(৫০)
পুরুষ হচ্ছে লোকাল বাস,
কখনোই যাত্রীক্ষুধা মেটে না।


...

[৩১-৪০][*][৫১-৬০]

| ঘড়ায়-ভরা উৎবচন...|৩১-৪০|


| ঘড়ায়-ভরা উৎবচন...|৩১-৪০|
রণদীপম বসু

.
(৩১)
মৃত্যু হিসাব-নিকাশহীন এক কাল্পনিক যাত্রা
যার কোনো শুরু নেই, শেষও নেই;

যেখানে কোন ধর্মগ্রন্থ নেই।

(৩২)
শুচিবাই কোন পরিচ্ছন্নতা নয়,
মনের কোণায় লুকিয়ে থাকা নিজস্ব নোংরামির বহিঃপ্রকাশ;
যেখানে রুগ্নতার চেয়ে বেশি থাকে অসভ্যতা।

(৩৩)
ব্যাঙের বের হবার সাধ্য নাই বলে তাকে কূপমণ্ডুক হয়েই জীবন কাটাতে হয়।
কিন্তু মানুষের সাধ্য অসীম,
তবু বাঙালির শখ কূপমণ্ডুক থাকাতেই ;
এজন্যে বাঙালি মানুষ হয না, হতে পারে না।

(৩৪)
মানুষই সবচেয়ে অসভ্য প্রাণী, কারণ
সে কেবল নিজের অনুকূলেই নিজের মতো করে সভ্যতা নির্মাণ করেছে।
তাই মানুষের সভ্যতা প্রকৃতির অনুকূল নয়।

(৩৫)
সু-স্বাস্থ্য মানে নিরোগ থাকা নয়।
এই বিশাল ও ভয়ঙ্কর জীবাণুমণ্ডলে ডুবে থেকে
রোগ-জীবাণু মুক্ত থাকার কথা কেবল নির্বোধরাই ভাবতে পারে।
সুস্থ থাকার সামর্থই হচ্ছে স্বাস্থ্য।

(৩৬)
আবেগ হচ্ছে প্রাকৃতিক অসভ্য অবস্থা ;
মানুষ যতক্ষণ আবেগহীন থাকে, ততক্ষণ সে দিগম্বর হয় না।

(৩৭)
মুদ্রা বা অর্থের শক্তি তার লেনদেনের মধ্যে,
প্রতিটা লেনদেন মানুষের ভেতরটাকে একটানে বাইরে নিয়ে আসে।

(৩৮)
যা বাস্তব তা-ই সত্য, তাই
বাস্তবতাকে স্বীকার না-করার অর্থ
নিজের অস্তিত্বকেই অস্বীকার করা।

(৩৯)
প্রকৃতির সৌন্দর্য্য তার নগ্নতায়।
মানুষ যতক্ষণ প্রকৃতির অনুকূলে থাকে, তার নগ্নতা সৌন্দর্য্য ছড়ায়;
প্রকৃতির প্রতিকূলে মানুষই হয়ে উঠে সবচেয়ে অশ্লীল।

(৪০)
পিতা আর জন্মদাতা এক নয়।
জননযন্ত্র সক্রিয় হলেই জন্ম দেয়া যায়,
পিতা হতে দরকার হয় বাৎসল্যের।

[২১-৩০][*][৪১-৫০]

Thursday, September 10, 2009

। ঘড়ায়-ভরা উৎবচন…। উৎবচন-গুচ্ছ ।


। ঘড়ায়-ভরা উৎবচন…। উৎবচন-গুচ্ছ ।

|রণদীপম বসু |
.
[উৎসর্গ : হুমায়ুন আজাদ, যাঁকে আদর্শ ভাবলে প্রাণিত হই ]
.

সতর্কতা:

ধর্মীয় বিশ্বাস ও সংস্কার বা মুক্তচিন্তা বিষয়ে যাঁদের সংবেদনশীলতা রয়েছে,

তাঁদের জন্য অস্বস্তিকর হতে পারে।
————————————
সূচিপাঠ
————————————
@ ঘড়ায়-ভরা উৎবচন…। ০১ – ১০।
@ ঘড়ায়-ভরা উৎবচন…। ১১ – ২০।
@ ঘড়ায়-ভরা উৎবচন…। ২১ – ৩০।
@ ঘড়ায়-ভরা উৎবচন... | ৩১ - ৪০|
@ ঘড়ায়-ভরা উৎবচন... | ৪১ - ৫০|
@ ঘড়ায়-ভরা উৎবচন... | ৫১ - ৬০|
@ ঘড়ায়-ভরা উৎবচন... | ৬১ - ৭০|
ঘড়ায়-ভরা উৎবচন...| ৭১ - ৮০|
ঘড়ায়-ভরা উৎবচন...|৮১ - ৯০|
ঘড়ায়-ভরা উৎবচন...|৯১ - ১০০|
.....
[ উৎবচন-শতক...| এক ]
.....
ঘড়ায়-ভরা উৎবচন...|১০১ - ১১০|
ঘড়ায়-ভরা উৎবচন...|১১১ - ১২০|
ঘড়ায়-ভরা উৎবচন...|১২১ - ১৩০|
ঘড়ায়-ভরা উৎবচন...|১৩১ - ১৪০|
ঘড়ায়-ভরা উৎবচন...|১৪১ - ১৫০|
ঘড়ায়-ভরা উৎবচন...|১৫১ - ১৬০|
ঘড়ায়-ভরা উৎবচন...|১৬১ - ১৭০|
ঘড়ায়-ভরা উৎবচন...|১৭১ - ১৮০|
ঘড়ায়-ভরা উৎবচন...|১৮১ - ১৯০|
@ ঘড়ায়-ভরা উৎবচন... |১৯১ - ২০০|
.....
@ | উৎবচন-শতক...| দুই |
.....
@ ঘড়ায়-ভরা উৎবচন...|২০১ - ২১০|
@ ঘড়ায়-ভরা উৎবচন...|২১১ - ২২০|
@ ঘড়ায়-ভরা উৎবচন...|২২১ - ২৩০|
@ ঘড়ায়-ভরা উৎবচন...|২৩১ - ২৪০|
@ ঘড়ায়-ভরা উৎবচন...|২৪১ - ২৫০|
@ ঘড়ায়-ভরা উৎবচন...|২৫১ - ২৬০|
@ ঘড়ায়-ভরা উৎবচন...|২৬১ - ২৭০|
@ ঘড়ায়-ভরা উৎবচন...|২৭১ - ২৮০|
@ ঘড়ায়-ভরা উৎবচন...|২৮১ - ২৯০|
ঘড়ায়-ভরা উৎবচন...|২৯১ - ৩০০|
...
@ | উৎবচন-শতক...| তিন |
@ ঘড়ায়-ভরা উৎবচন...|৩০১-৩১০|
...
অগ্রন্থিত উৎবচনগুচ্ছ
...
@ উৎবচন...| ৩১১-৩২০ |
@ উৎবচন...| ৩২১-৩৩০ |
@ উৎবচন...| ৩৩১-৩৪০ |
উৎবচন...| ৩৪১-৩৫০ |
উৎবচন...| ৩৫১-৩৬০ |
উৎবচন...| ৩৬১-৩৭০ |
@ উৎবচন...| ৩৭১-৩৮০ |
উৎবচন...| ৩৮১-৩৯০ |
উৎবচন...| ৩৯১-৪০০ |
...
@ উৎবচন-শতক...| চার |
...
@ উৎবচন...| ৪০১-৪১০ |


————————————

Wednesday, September 9, 2009

| ঘড়ায়-ভরা উৎবচন…| ২১ – ৩০ |


| ঘড়ায়-ভরা উৎবচন…| ২১ – ৩০ |
রণদীপম বসু

.
(২১)
আফসোস হচ্ছে সেই ধুর্ততা,
সময়কে ধরতে না পেরে কপট ও মূর্খরা যা করে থাকে।

(২২)
মানুষকে পশু বানানোই মানুষের শ্রেষ্ঠ বিনোদন,
পশুরা তা জানলে তাদের নিজস্ব সমাজে
জঘণ্য গালিটা হবে ‘মানুষ’।

(২৩)
যার রক্ত দাসত্ব মুছতে পারে না
তার অনুরোধ হয় নির্দেশের স্বরে,
একজন স্বাধীন প্রভু নির্দেশ করে অনুরোধের সুরে।

(২৪)
যে নিজেকে ফাঁকি দেয়, সে অন্যকেও ফাঁকি দেয়;
যখন সে অন্যকে ফাঁকি দেয়,
আসলে সে নিজেকেই প্রতারিত করে।

(২৫)
যে পুরুষ নারীকে অবজ্ঞা করে, সে ধ্বংসকে আমন্ত্রণ জানায়;
নারীর প্রতি অনুগত যে, সে স্ত্রৈণ;
যে বিশ্বস্ত থাকে, আজীবন অন্ধত্বই নিয়তি তার।
সৃষ্টিশীল পুরুষেরা নতুন অপশনের খোঁজে জীবনটাই ব্যয় করে দেয়।

(২৬)
যে নারী পুরুষকে বিশ্বাস করে, সে বোকা;
যে অবিশ্বাস করে, সে নির্বোধ;
যে নির্ভর করে, সে অকর্মণ্য।
অথচ এর বাইরে নারীর জন্য কোনো অপশন রাখেনি পুরুষ।

(২৭)
অহঙ্কার সেই জ্বলজ্বলে বই, যার পাতায় পাতায়
অশ্লীল শব্দ আর অর্থহীন বাক্যের সমাহার।

(২৮)
মুদ্রাদোষ মানুষের একমাত্র স্মারক, যা তার পরিচয় বহন করে।
অসভ্য মানুষ এটাকে দোষ বলে প্রচার করেছে।

(২৯)
মানুষের ক্ষমতা তার স্বপ্নের চেয়ে বড় হয় না।
ক্ষমতা একরৈখিক, সীমাবদ্ধ; স্বপ্ন বহুমাত্রিক, অসীম।
স্বপ্নের দুর্বলতা হলো, তাকে টেনে নিচে নামানো যায় না।

(৩০)
উইগ, মাথার টাক ঢাকার সাথে সাথে মানুষের গুণগুলোও ঢেকে ফেলে।
ভণ্ড-ধার্মিকের মতো মানুষকে অভিনয়বাজ শয়তানে পরিণত করে।



[১১-২০][*][৩১-৪০]
.
[sachalayatan]

| ঘড়ায়-ভরা উৎবচন…| ১১ – ২০ |



| ঘড়ায়-ভরা উৎবচন…| ১১ – ২০ |

রণদীপম বসু

.
(১১)
অধিকাংশ প্রাণীর শব্দ বিক্ষেপণের দুটো মুখ থাকে-
একটা সামনে বা উপরে, অন্যটা নিচে বা পেছনে।
এই দুটো মুখের বিভেদ ঘুচাতে জানেন যিনি,
আজকাল তাকেই সফল মানুষ বলে।

(১২)
অফিস হচ্ছে সেই খোঁয়াড় যেখানে
নতুন কোন সৃজন হয় না,
যা আছে তা ধ্বংস করার প্রক্রিয়া ছাড়া।

(১৩)
মানুষের ব্যক্তিত্ব তাঁর চেহারায় নয়,
হাঁটার স্টাইলেই আঁকা থাকে।

(১৪)
‘না’ বলতে জানে না যে, তাঁর ‘হাঁ’ বলাটাই ভণ্ডামি।

(১৫)
অংক শেখার প্রথম পাঠই হচ্ছে অংক ভুলে যাওয়া,
ভুলতে না পারলে বিসর্জনের শুদ্ধতা আসে না।

(১৬)
কম্পিউটার বানায় যে, ততক্ষণই সে কম্পিউটার চালায়।
আর যে কম্পিউটার চালায়, আসলে কম্পিউটার তাকে চালায়।

(১৭)
শ্রাদ্ধের নামে মৃতের কোন শেষকৃত্য হয় না,
প্রকৃতপক্ষে জীবিতরা নিজেদেরই শ্রাদ্ধ করে।

(১৮)
আহার সংযমে দৈহিক ওজন বাড়ানোয় কোন অলৌকিকতা নেই,
রয়েছে বস্তুগত চাতুর্য্য।

(১৯)
গাম্ভীর্য একধরনের স্বার্থপর অক্ষমতা,
যা মানুষকে প্রকাশিত হতে দেয় না।

(২০)
মেরুদণ্ডের অবস্থান মানুষের হাড়বাঁধানো শিরদাঁড়ায় নয়,
যৌবনে থাকে জননযন্ত্রে, বার্ধক্যে ব্যাংক-ব্যালেন্সে।




| ঘড়ায়-ভরা উৎবচন…|০১ -১০|



| ঘড়ায়-ভরা উৎকচন…|০১ -১০|
রণদীপম বসু

.
(০১)
যুবতী মেয়েদের চুলের দৈর্ঘ্য নির্দেশ করে
তার সংস্কারের শিকড় কতোটা গভীরে প্রোথিত,
আর কথায় কথায় স্রষ্টাকে উদ্ধৃত করার সংখ্যা দিয়ে মাপা যায়
পুরুষের ভণ্ডামির বিস্তার।

(০২)
শিল্পের ঘাড়ে কাপড় তুলে দিয়ে
অশ্লীলতার বৈধ বিপণনকারীর তালিকায়
সর্বাগ্রে আসে স্বঘোষিত কবিদের নাম।

(০৩)
নিচের কাপড় তুলে মুখ ঢেকে যারা লজ্জানিবারণ করে,
তাদের লজ্জাস্থানই উন্মুক্ত হয়।
তা দেখে লজ্জা পায় অন্যেরা,
আর কেউ কেউ মজা পায়।

(০৪)
কখনো কখনো নির্দোষ হলেও
ভণ্ডামির উৎকৃষ্ট উপায়ই হলো সবকিছু স্রষ্টার নামে সঁপে দেয়া।

(০৫)
নিজেকে গোপন করতে মানুষ অন্যকে উদ্ধৃত করে, আর
অন্যকে আড়াল করতে নিজেকে নিয়ে বদমায়েশি করে।

(০৬)
মানুষ যতক্ষণ পশু থাকে
ততক্ষণ সে নিজেকে মানুষ বলে প্রচার করে।

(০৭)
এখন বৃষ্টি হলে আমার পিতা যা করতেন
আমিও তা-ই করি, নিজেকে রক্ষা করি। আর আমার সন্তান
বৃষ্টিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে, কৈশোরে আমি যা করতাম।
ব্যক্তি বদলে যায়, মানুষ বদলায় না।

(০৮)
আগে ছোট অফিসের বড় কর্মকর্তা হয়ে অধঃস্তনকে নিয়ে
যেরকম ব্যতিব্যস্ত ছিলাম, এখন বড় অফিসের ছোট কর্মকর্তা আমাকে নিয়ে
আমার বসও সেরকম ব্যতিব্যস্ত থাকেন।
দায়িত্বহীন মানুষ আর ভারহীন গাধায় কোনো পার্থক্য নেই।

(০৯)
মানুষের লেজ দৃশ্যমান নয় বলে
লেজেগোবরে শব্দটি মানুষ অন্যায়ভাবে লেজযুক্ত পশুদের ঘাড়ে চাপিয়ে
অনৈতিক বৈষম্য সৃষ্টি করেছে।

(১০)
মোবাইল ফোন হচ্ছে সেই যন্ত্র, যা দিয়ে মানুষের
ভণ্ডামি রেকর্ড হয়, আর নষ্টামি আড়ালে থাকে।
(০৯-০৯-২০০৯)



Monday, September 7, 2009

[Yoga] আপনি কেন ইয়োগা চর্চা করবেন... (হাইপার-লিঙ্কড ইয়োগা-সমগ্র)


--------------------------
[Yoga] আপনি কেন ইয়োগা চর্চা করবেন... (হাইপার-লিঙ্কড ইয়োগা-সমগ্র)
--------------------------
-রণদীপম বসু
-----------

জীবনের বহু বহু ব্যস্ততার মধ্যে আমাদের সময়ই হয় না নিজেকে একটু একান্ত করে দেখার। আমি কে, কী, কেন, কোথায়, কিভাবে, এ প্রশ্নগুলো করার। অথচ সামান্য এ ক’টা প্রশ্নের মধ্যেই লুকিয়ে থাকে আমাদের সবটুকু রহস্য, ঠিকানা, পরিচয় এবং অস্তিত্বের অনিবার্য শর্তগুলোও। প্রশ্নের এই স্বচ্ছ আয়নায় নিয়ত বদলে যাওয়া জীবনের জলছবিগুলোই আমাদের প্রতিটা যাপন-মুহূর্ত, চলমান জীবন। অসংখ্য সমস্যার গেরোয় জট পাকিয়ে যাওয়া আমাদের জটিল জীবনযাত্রার জট খোলার চাবিটাও যে রয়ে গেছে সেখানেই, কেউ কেউ ঠিকই জানেন, আর অনেকেই তার খোঁজ রাখি না আমরা। এই প্রশ্নের সূত্র ধরেই এগুতে এগুতে অন্তর্ভেদী দার্শনিক ব্যক্তি যাঁরা, একসময় পৌঁছে যান ঠিকই জীবন ছাড়িয়ে মহাজীবনের বিপুল রহস্যের উজ্জ্বলতম দোরগোড়ায় এক অভূতপূর্ব বিস্ময় নিয়ে ! কিন্তু আমরা যারা অতি সাধারণ জন, খুব সাধারণ দেখার চোখ নিয়েও তারা কি পারি না এই অগুনতি যাপনের ভিড়ে শুধু একটিবার নিজের দিকে ফিরে তাকাতে ? যে আমাকে নিয়ে আমি নিত্যদিনের কর্মশালায় খাচ্ছি-দাচ্ছি-হাসছি-খেলছি-ঘুরছি আর মগ্ন হচ্ছি চিন্তায় বা দুঃশ্চিন্তায়, আমাদের সে ‘আমি’টা দেখতে কেমন, তা কি জানি আমরা ?

আপনি কি জানেন, ঠিক এ মুহূর্তে আপনি কেমন আছেন ? কিংবা কেমন দেখাচ্ছে আপনাকে ? আসুন না, নিজস্ব আয়নাটার সামনে খুব একান্তে দাঁড়াই একটু ! এবার নিজেকে উন্মোচিত করুন। কেমন দেখাচ্ছে আপনাকে ? ওই আয়নায় যেটা দেখছেন, সেটা আপনার দৈহিক অবয়ব। এই দেহই আমাদের ধারক, বাহক, এবং চালক। এই দেহকে ঘিরে, দেহের মাধ্যমে, এবং দেহের জন্যই আমাদের সমস্ত কর্মকাণ্ড। মন বলে যে বিমূর্ত ধারণাপিণ্ড কল্পনা করি আমরা, তাও এই দেহনির্ভর। দেহ ছাড়া মন বিকৃত, অসম্পূর্ণ, অচল। দেহের বিনাশ ঘটলে মনের আর কোন অস্তিত্ব নেই, থাকে না। এ জন্যেই প্রাচীন যোগশাস্ত্রেও উক্ত হয়- ‘শরীরমাদ্যং খলু ধর্ম সাধনম’। আপনি যা কিছুই সাধন করতে চান না কেন, এই দেহ ছাড়া গতি নেই, উপায়ও নেই। দৃশ্যমান এই দেহের অস্তিত্ব মানেই বাস্তবে আপনার অস্তিত্ব। দেহ নেই, আপনি নেই। দেহ ছাড়া কেউ থাকে না। দেহত্যাগের পরেও আপনার যে নামটা থেকে যাবে কিছুকাল আপেক্ষিক সময় জুড়ে, তাও এই দেহেরই অবদান। এই দেহ ধারণ করে দেহের মাধ্যমে করে যাওয়া কৃতকর্মই তার আপেক্ষিক স্থায়িত্বের মাধ্যমে আপনার অবর্তমানে আপনার নামটাকে বাঁচিয়ে সম্ভাব্য আপেক্ষিক স্থায়িত্ব দিতে পারে। অতএব, ভালো করে দেখুন- যে দেহটা এ মুহূর্তে ধারণ করে আছেন আপনি।

হতে পারেন আপনি নারী বা পুরুষ, এবার বলুন তো, আয়নায় আপনার যে মানবদেহের অবয়ব দেখছেন, তা কি যেমনটা হওয়ার বা থাকার কথা তেমনই আছে ? চোখ, মুখ, নাক, কান, মুখমণ্ডল, গলা, কাঁধ, বাহু, হাত, বুক, পেট, পিঠ, কোমর, উরু, পা, আঙুল, নিতম্ব, জঙ্ঘা, জননেন্দ্রিয় তথা গোটা দেহকাঠামো সম্পূর্ণ, সুঠাম, সুস্থ, সবল, নিরোগ, অবিকৃত, নিখুঁত, স্বাভাবিক সুন্দর, সক্রিয় ও সাবলীল ? এবার অন্তর্চক্ষু উন্মিলিত করুন। কল্পনা করুন আপনার দেহের ভেতরে অবস্থিত আভ্যন্তরীন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ-তন্ত্রিগুলোর কথা। মস্তিষ্ক, স্নায়ুরজ্জু, বিবিধ হরমোন গ্রন্থি, হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস, ধমনী, শিরা-উপশিরা, পাকস্থলি, ক্ষুদ্রান্ত্র, বৃহদন্ত্র, মাংস-পেশী-অস্থি-মজ্জা-মেরুদণ্ড, স্নায়ুতন্ত্র, শ্বাসতন্ত্র, রক্তসংবহনতন্ত্র, প্রজননতন্ত্র, বিপাকক্রিয়াদিসহ ইত্যাদি সমূহ সিস্টেম বা প্রক্রিয়া কি সুস্থ, স্বাভাবিক, সক্রিয় ও সাবলীল আছে ? আরো আছে আপনার স্বপ্ন-কল্পনা-ভাবনার বিস্ময়কর বিমূর্ত সেই জগত, যেখানে গ্রন্থিত হয় সৃজনের অবিরল স্রোত। সেও কি শারীরিক ও মানসিক বাধামুক্ত সতেজ উদ্যমে গতিমান ? এসবের উত্তর যদি ‘হাঁ’ হয়, শুধু আমি নই, প্রকাশ্যে বা অপ্রকাশ্যে সবাই আপনাকে স্যলুট বা অভিবাদন জানাবে। উত্তর যদি হয় ‘না’, তাহলে দেরি নয়, এখনই ভাবুন, এক অসম্পূর্ণ অপভ্রংশ দৈহিক ও মানসিক অস্তিত্ব নিয়ে কতদূর যেতে পারেন আপনি ? আর আপনার এ চলার পথই বা কতোটা নিরাপদ, উদ্বেগহীন, ইচ্ছা-স্বাধীন ?

কথায় বলে- সুস্থ দেহ সুন্দর মন। কথাটা সর্বাংশেই সত্য। দৈহিক সুস্থতার কোন বিকল্প নেই। একটা নিরোগ সুস্থ-সুঠাম সতেজ কর্মঠ দেহের সাথে মানসিক ভ্রান্তিহীন চাপ নিরপেক্ষ সুডোল মনের রাখীবন্ধন ঘটলেই কেবল কাঙ্ক্ষিত সুন্দর পরিচ্ছন্ন জীবনের নিশ্চয়তা মেলে। কিন্তু আমাদের জীবন-বাস্তবতায় তা কতোটা অর্জন সম্ভব ?

দৈহিক সুস্থতার জন্যে প্রয়োজন সুষম খাবার গ্রহণের পাশাপাশি শারীরিক পরিশ্রম। কিন্তু পরিশ্রম পরিকল্পিত না হলে দৈহিক সৌন্দর্য ও সুস্থতা নিশ্চিত হয় না। দেহের প্রতিটা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের পরিমিত সঞ্চালন ও সক্রিয়তা না হলে দেহবিন্যাস সুষম ও সুগঠিত হতে পারে না। এজন্যেই দেহের জন্য দরকার হয়ে পড়ে পরিকল্পিত শরীরচর্চা বা ব্যায়ামের। আমাদের এ নাগরিক সভ্যতায় মাঠ-ঘাট-খোলা জায়গা এখন যেভাবে ধীরে ধীরে কল্পজগতের বস্তু হয়ে ওঠছে তাতে করে শরীরচর্চার পরিসর ক্রমেই সীমিত হয়ে আসছে। কিন্তু দেহের প্রতিটা অঙ্গ প্রত্যঙ্গ পেশী হাড় অস্থিসন্ধি ও রক্তসংবহনতন্ত্রের পরিমিত সঞ্চালন ও সক্রিয়তা রক্ষার অনন্য মাধ্যম হিসেবে ইয়োগা বা যোগ-ব্যায়াম এখানে তুলনাহীন। যোগ-ব্যায়ামের বিভিন্ন আসনগুলো চর্চার জন্য আপনার ঘরের স্বল্পপরিসর মেঝে বা আপনার বিছানাটাই এক্ষেত্রে যথেষ্ট।

দেহের জ্বালানী হলো খাদ্য। তা পেলেই দেহ তার অভ্যন্তরস্থ বিশেষ বিশেষ দেহযন্ত্রের মাধ্যমে পরিবহন পরিবর্তন রূপান্তর করে নিজেকে সচল ও সবুজ সতেজ বৃক্ষের মতো পল্লবিত করে তোলে। কিন্তু খাওয়ার নামে প্রতিনিয়ত যা গিলছি আমরা তা কি আদৌ খাদ্য ? বিষাক্ত ভেজালের যুগে এই নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারবে বলে মনে হয় না আর। অতএব আমাদের দেহযন্ত্রের কারখানায় বিষ থেকে অমৃত সৃজনের প্রযুক্তি যতকাল রপ্ত না হবে, ততকাল ক্রমে ক্রমে নিঃসার হয়ে আসা দেহগহ্বরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোকে সচল ও সক্রিয় রাখতে বিশেষ ব্যবস্থা না নিয়ে কোন উপায় আছে কি ? তার শ্রেষ্ঠ উপায়ই হচ্ছে ইয়োগা বা যোগ-ব্যায়াম। স্নায়ু গ্রন্থি রক্তনালী শিরা-উপশিরা ও দেহের অভ্যন্তরস্থ প্রতিটা দেহযন্ত্রের যথাযথ ব্যায়ামের মধ্য দিয়ে এগুলোকে পরিপূর্ণ সতেজ ও কার্যকর রাখতে ইয়োগাই অনন্য মাধ্যম। এ ক্ষেত্রে যোগাসনগুলো ছাড়াও বিভিন্ন মুদ্রাগুলোর সমকক্ষ কোন পদ্ধতি একমাত্র ইয়োগা বা যোগ-ব্যায়াম ছাড়া অন্য কোন ব্যায়ামে এখনো আবিষ্কৃত হয় নি। যেভাবে হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুসের সক্রিয় সুস্থতা রক্ষার একমাত্র উপায়ই হচ্ছে ইয়োগার শ্বাস-ব্যায়াম প্রাণায়াম। এমনকি অত্যাবশ্যকীয় ইন্দ্রিয়গুলোর কার্য়কর সুরক্ষার জন্যেও ইয়োগা বা যোগ-ব্যায়াম অপ্রতিদ্বন্দ্বী।

খাবার গ্রহণ করলেই দেহের কাজ শেষ হয়ে যায় না। এই খাদ্য থেকে বিপাক ক্রিয়ার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় খাদ্য-উপাদান ও খাদ্যরস সংগ্রহ শেষে পরিত্যক্ত খাদ্যবর্জ্যগুলো মল-মূত্র ঘাম বা কফ হিসেবে শরীর থেকে বের করে দিতে হয়। এই প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্থ হলেও শরীর অসুস্থ হয়ে পড়তে বাধ্য। এই প্রক্রিয়াটাকে সুস্থ সচল রাখতে অন্য সাধারণ ব্যায়ামে কোন উপায় না থাকলেও ইয়োগা বা যোগ-ব্যায়ামে প্রয়োজনীয় ধৌতিগুলো খুবই কার্যকর উপায়।

জীবন যাপনের চলমান বাস্তবতায় যে সমাজ রাজনীতি অর্থনীতি রাষ্ট্র পরিবেশ ও পরিস্থিতি উদ্ভুত স্ট্রেস বা মনো-দৈহিক চাপের মধ্য দিয়ে প্রতিটা মুহূর্ত পার করতে হয় আমাদের, তা থেকে পরিত্রাণের যে ছটফটানি, এটা আমাদের ব্যক্তি ও সামাজিক জীবনে প্রতিনিয়ত ভয়ঙ্কর প্রভাব ফেলে যাচ্ছে। সেই দুঃসহ চাপের উৎস পরিবর্তনের সুযোগ বা সামর্থ হয়তো আমাদের নেই। কিন্তু সেই অসহনীয় চাপ সফলভাবে মোকাবেলা করতে না পারলে স্নায়ুরোগসহ যে মনো-দৈহিক সমস্যা বা রোগের বিস্তার ঘটে, প্রয়োজনীয় শিথিলায়ন ও প্রয়োজনীয় নিরাময়ের ব্যবস্থা না নিলে আমাদের অস্তিত্বই হুমকির মুখে পড়ে যাবে। এই মনো-দৈহিক সমস্যা উত্তরণে অনন্যোপায় আমাদেরকে এ জন্যেও ইয়োগার আশ্রয়ই নিতে হবে।

প্রিয় পাঠক, চিন্তা বা ধারণা স্বচ্ছ না হলে আয়নায় নিজের অবয়ব দেখেও স্পষ্ট করে বুঝার উপায় নেই যে, বস্তুত যা হওয়ার কথা, নিজের সাথে তার কোথায় কেন কিভাবে কতটুকু তফাৎ বা পার্থক্য পরিদৃষ্ট হচ্ছে এবং কিভাবে তার উত্তরণ ঘটানো সম্ভব। সেজন্যই আমাদের জানার আগ্রহটাকে উন্মুক্ত করে দিতে হবে। দেহ-মনের সার্বিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা করে সুস্থ-সুন্দর জীবন-যাপনের এ যাবৎ শ্রেষ্ঠ উপায় যেহেতু ইয়োগা বা যোগ-ব্যায়াম চর্চা, তাই প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি জানার সাথে সাথে পরিপূর্ণভাবে অভ্যাসের সুবিধার্থে ইয়োগা দর্শনটাকেও জানা আবশ্যক বিবেচনা করি। আমি কেন ইয়োগা চর্চা করবো তা যেমন বুঝতে হবে, তেমনি জানতে হবে ইয়োগা কী বা এর ইতিহাস, আধুনিক ইয়োগার জনক হিসেবে চিহ্ণিত গুরু পতঞ্জলি কেন তাঁর অভ্রান্ত অষ্টাঙ্গযোগ মানব সভ্যতাকে উপহার দিয়েছেন এবং সম্পূর্ণ প্রায়োগিক ও মনো-দৈহিক স্বাস্থ্য দর্শন হওয়া সত্ত্বেও অনেকেই এটাকে ধর্মীয় আধ্যাত্মিক দর্শন ভেবে ভুল করে ফেলেন কেন ? কিসের ভিত্তিতে আমরা ইয়োগা অনুশীলন করবো এবং অন্য ব্যায়ামের সাথে এর মৌলিক ভিন্নতা কোথায় তা যেমন জানতে হবে, তেমনি এর জ্ঞাতব্য বিষয়গুলোও মনোযোগ সহকারে ধারণ করে নিতে হবে। এসব বিষয় আগ্রহে বিশ্বাসে অনুধাবন করে নিজের প্রতি আস্থা ফিরে পেলেই কেবল নিজেকে ইয়োগা চর্চায় প্রস্তুত বলে গণ্য করতে হবে। এবং এ জন্য আপনাকে প্রতিদিন কেবল নিজের জন্য তিরিশটি মিনিট ব্যয় করতে প্রতিজ্ঞ হতে হবে।

ইয়োগা একটি পরিপূর্ণ দর্শন। অমিত ধৈর্য্য, প্রয়োজনীয অনুশীলন ও ধাপে ধাপে উত্তরণের মধ্য দিয়ে মনো-দৈহিক স্বাস্থ্য ও সামর্থ অর্জনের মাধ্যমে পরিপূর্ণ মানবসত্তার চরম উৎকর্ষতা অর্জনের উপায়ই এই দর্শনের অভীষ্টতা। ব্যক্তি তার চেষ্টা ও সামর্থ্য অনুযায়ী ফললাভ করে থাকেন। সাধক যোগী পুরুষ যেমন প্রয়োজনীয় তপস্যার মাধ্যমে নিজেকে আধ্যাত্মিক শিখরে আরোহন করতে পারেন, তেমনি ব্যক্তি-সাধারণের দৈহিক সুস্থতা ও সামর্থ অর্জনের জন্য এখানে উল্লেখ রয়েছে প্রচুর আসন, মুদ্রা, প্রাণায়ামধৌতি অভ্যাসের। যোগশাস্ত্রিরা এগুলোর প্রতিটার কার্য-কারণ, সতর্কতা ও ফললাভের ব্যাখ্যাও দিয়েছেন সুন্দরভাবে। এমনকি প্রচলিত রোগ-বালাই নিরাময় কিংবা তা থেকে মুক্ত থাকার উপায়ও বাৎলে দিয়েছেন। দেহগঠন, বয়স কিংবা রোগ বিবেচনায় নিজ প্রয়োজনে ব্যায়াম ও স্বাস্থ্যচর্চা নির্বাচনের কৌশলও বর্ণিত হয়েছে এতে। একমাত্র ইয়োগা ছাড়া মানবদেহ ও মনের এমন পরিপূর্ণ স্বাস্থ্য দর্শন আদৌ আর আছে কিনা জানা নেই।

যদি আমরা আমাদের অবিকল্প এই দেহটিকে সকল কর্মকাণ্ডের কার্য ও কারণ বলে বিশ্বাস করতে সক্ষম হই, তাকে সুস্থ সবল সক্রিয় ও সুন্দর রাখতে উদ্ভুত প্রশ্নটি ‘আপনি কেন ইয়োগা বা যোগ-ব্যায়াম চর্চা করবেন’ এভাবে না হয়ে হওয়া উচিৎ- আপনি কেন ইয়োগা বা যোগ-ব্যায়াম চর্চা করবেন না !

(C) কপিরাইট:
। ইন্টারনেট থেকে সংগৃহিত ও ব্যবহৃত যাবতীয় ছবির নিজ নিজ উৎসের স্বীকৃত স্বত্ব কৃতজ্ঞতার সাথে বহাল রেখে- এই হাইপার-লিঙ্কড পাণ্ডুলিপির সর্বস্বত্ব লেখক কর্তৃক সংরক্ষিত ।

[sachalayatan]
[mukto-mona]
[somewherein]

| প্রসঙ্গ: ইয়োগা ও টুটুল ভাই, মতামত পোস্ট |


|প্রসঙ্গ: ইয়োগা ও টুটুল ভাই, মতামত পোস্ট|
রণদীপম বসু

সচল আহমেদুর রশীদ টুটুল, তাঁর অন্য পরিচয় হলো তিনি একজন নিষ্ঠাবান কবি, ইয়োগা প্রেমিক, স্বনামধন্য ‘শুদ্ধস্বর’ প্রকাশনার গর্বিত সত্ত্বাধিকারী এবং একজন জনপ্রিয় সচল-প্রকাশকও। গায়ের রঙ অন্ধকারে বিভ্রান্ত হওয়ার মতো মিশমিশে কালো এবং মিটমিটিয়ে হাসতে খুব পছন্দ তাঁর। গায়ের রঙ আদৌ কালো কিনা, না কি আমারই সাময়িক দৃষ্টিবিভ্রম, জানি না। তবে তাঁকে ফর্সা গৌড়বর্ণ বললে খুব খুশি হন তিনি। তাঁর আরেকটি বিখ্যাত হবি হলো ছিটগ্রস্ত মানুষকে গ্যাড়াকলে ফেলে অসহ্যরকমের মজা লুটা। দীর্ঘ তালিকায যুক্ত হওয়ার যোগ্য এসব বহু গুণেই গুণান্বিত তিনি। যেমন ৯২ আজিজ কোঅপারেটিভ সুপার মার্কেটের তৃতীয় তলার স্বল্পপরিসর জায়গা জুড়ে তাঁর প্রতিষ্ঠান শুদ্ধস্বরে গিয়ে কখনো কেউ অতি ভাগ্যবলে তাঁকে হাতেনাতে পেয়ে গেলে তিনি চা-বিড়ি না খাইয়ে ছাড়েন না বলে শুনেছি, কিংবা সবজান্তা, পান্থ বা তাঁদের মতো দুষ্টু ছেলেদের হাতে বিড়ি টানার সম্ভ্রান্ত কোন পাইপ দেখলে তো এদের অকালপক্কামী দেখে তাঁর মাথাটাই আউলে যায় ! মুরব্বি হিসেবে তা সহ্য করবেন কিভাবে ! তাই ছোঁ মেরে পাইপটি নিয়ে তিনি নিজেই পাইপের পাছায় আগুন লাগানোর অসাধ্য কাজটি সফল না হওয়াতক চালাতেই থাকেন চালাতেই থাকেন। এসব গুণের কথা বলতে লাগলে আমার আসল কথাটিই আর বলা হবে না !

প্রখ্যাত ব্লগার কাম অনেক অনেক পদবীধারী মাহবুব লীলেন অসংখ্য অকামের মধ্যেও সেদিন একটা কামের কথা বলেছিলেন আড্ডাচ্ছলেই- এক পলক দেখেই কীসে নাকি কী চিনে ফেলে ! অত্যন্ত ফেবারিট হবি হিসেবে টুটুল ভাইও যে এই আমাকে কোন দ্বিধা-দ্বন্দ্ব না করে নিমেষেই ছিটগ্রস্ত হিসেবে ঠাউরে নিলেন, তাতে যতো না আশ্চর্য হয়েছি, বিস্মিত হয়েছি আরও বেশি। শেষপর্যন্ত আমাকেই গ্যাড়াকলে ফেললেন তিনি ! গত মধ্য-এপ্রিল থেকে জুন জুলাই আগস্ট পেরিয়ে সেপ্টেম্বর,২০০৯-এর গতকাল পর্যন্ত রাত-দিনের বিভেদ ভুলিয়ে একনাগাড়ে আমাকে যে ইয়োগা পাণ্ডুলিপি তৈরির জোয়ালের তলে ঢুকিয়ে দিলেন তিনি, একবারও ভাবলেন না যে মানুষের একটু-আধটু সাধ-আহাদও থাকতে পারে এবং এর জন্যে একটুকু বিশ্রামেরও দরকার পড়ে। গত মে,০৯-এর ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডির কারণে প্রায় মাসখানেক বাদ দিলে বাকি সময়টা অনেক ঘুমের দেনায় জর্জরিত আমি একদিকে টুটুল ভাই’র বংশ উদ্ধার করেছি আর অন্যদিকে বাংলায় ইয়োগা বা যোগ-ব্যায়ামের জটিল ও হৃষ্টপুষ্ট একটা পাণ্ডুলিপি তৈরির কাজে কষ্টে-আনন্দে মগ্ন থেকেছি। ছিটগ্রস্ততার কারণে ফাঁকে-ফুঁকে হিজরা, সাহিত্যের দিনমজুর, অমর্ত্য সেন বা প্রফেসর ইউনূস কিংবা বাজেট বা পে-স্কেল, বিষয়ক কিছু কাজ ছাড়াও গল্প বা রম্যরচনা জাতীয় কাজ এবং ফাঁকে ফাঁকে অন্যান্য পাঁচমেশালি কাজও করে গেছি চেপে বসা একঘেয়েমি থেকে মুক্ত হবার লক্ষ্যে। ব্যক্তিগত চরিত্রে বাদাইম্যা স্বভাবধারী আমার এই সময়কালে হয়নি অনলাইনে ঘুরাঘুরি পাছড়া-পাছড়ি কিছুই। এবং যে সচলায়তনে একদিন ঢুঁ না মারলে আমার ব্যক্তিগত ক্যালেন্ডার থেকে ঐ দিনটাই মুছে যায়, সেখানেও চরম অনিয়মিত হয়েছি কেবল ঢুকলে আর সহজে বেরিয়ে অন্য কাজ করার মতো সময় ও ফুরসৎ থাকে না বলে। সময়ের বুড়ি ছুঁয়ে যাচ্ছে বলে টুটুল ভাই’র ক্রমাগত তাড়া খেতে খেতে শেষ পর্যন্ত আশ্চর্য়ের সাথে খেয়াল করলাম যে, যে আমি লগ-ইন না করে সচলের প্রথম পেজের চেহারাটা অন্তত একবার হলেও ঢুঁ মেরে দেখার মলম মেখে এসে আসল কাজে লেগে যেতাম, সেই আমিই কিনা গত সপ্তা-দুয়েক কাল (হিসেবও গুলিয়ে গেছে হয়তো) সচলে কোনো ক্লিকই করি নি ! অন্য সাইট তো দূরের কথা ! গতকাল আপাত শেষ মেইলে গোটা পাণ্ডুলিপির শেষ অংশটুকুও পাঠানোর পর টুটুল ভাইকে কথাটা বলতেই তিনি কিনা অত্যন্ত পরিতৃপ্ত ভঙ্গির হাসি রিলিজ করতে করতে বলেন কিনা- ‘হেহ্ হেহ্ হে, এটার কারণ ব্যাখ্যা করে একটা পোস্ট দিয়ে দেন সচলে!’ বলে কী ! আপনারাই বলেন, এমন কথা শুনলে কার না পিত্তি জ্বলবে !

অতঃপর ভাবছি, ইয়োগা-পোস্ট আর দেবো না সচলে। সম্ভবত পয়ত্রিশ-ছত্রিশটা পোস্ট ইতোমধ্যেই দেয়া হয়েছে। একটা পরিপূর্ণ পাণ্ডুলিপি বানাতে গিয়ে যে পরিমাণ কাজ করেছি এটার উপর, এমন এক-রৈখিক মেগা সিরিয়াল চালিয়ে আদৌ কি ফায়দা আছে কোনো ? পাঠকই বা কিভাবে নিজস্ব প্রয়োজনে এর যথাযথ সমন্বয় করবেন ? ই-বুক বা এ জাতীয় কোন সমন্বিত ব্যবস্থা না থাকলে আগ্রহী পাঠক তার জরুরি প্রয়োজনে কিভাবে দরকারি আসন বা মুদ্রা বা প্রাণায়াম বা ধৌতি বা আর্টিক্যাল কিংবা প্রয়োজন অনুযায়ী বাছাই ও নির্বাচনের কাজটুকু দ্রুত সময়ে করতে সক্ষম হবেন ? যেহেতু আগামী বইমেলার আগেই তা গ্রন্থাকারে প্রকাশের কাজ জোরেসোরে চালানো হচ্ছে, তাই ই-বুক বা এ জাতীয় কিছু করার ইচ্ছাও আপাতত নেই বা করা সঙ্গতও হবে না এখন। কিন্তু অসমাপ্ত কাজ ফেলে রাখাও নীতিগতভাবে মেনে নিতে পারছি না আমি। এ মুহূর্তে সচলদের গুরুত্বপূর্ণ মতামত কামনা করছি। ইয়োগা এবং পাণ্ডুলিপির কাজ করতে গিয়ে আরেকটি যে কাজ করেছি, একটা স্বতন্ত্র ইয়োগা সাইট তৈরি করেছি আমি। ইয়োগা বিষয়ক শেষতম আগামী একটি মাত্র ছোট্ট পোস্টের মধ্যে কিভাবে সমগ্র ইয়োগাটাকে তার যাবতীয় আর্টিক্যাল, শতাধিক আসন, বহু মুদ্রা প্রাণায়াম ধৌতি বা রোগনিরাময় তথা প্রাসঙ্গিক সমস্ত বিষয়াদিকে ধারণ করিয়ে সচলে সংরক্ষণ করা যায়, তার একটা ধারণা নিয়ে ভাবছি। এতে করে এতো বড়ো ও বহু বহু ছবিসহ বিচিত্র কাজের বোঝা দীর্ঘকাল বয়ে যাবার হুজ্জত যেমন থাকবে না, তেমনি আগ্রহী পাঠকও একটা পোস্ট সংরক্ষণ করলেই যেন বিশাল একটা অন্তর্জালিক গ্রন্থকেই নাগালে রাখতে সক্ষম হন সে ব্যবস্থাও হয়ে যায়। জনৈক সচলের উক্তি অনুযায়ী সচলে নাকি সিলেটি, আবাদি ও টেকি সচলের অভাব নেই। তাঁরা কে কী ভাবেন এটাও জানা আবশ্যক বৈ কি !

এটুকু পড়েই নিশ্চয়ই প্রকাশক আহমেদুর রশীদ টুটুল ভাইয়ের গ্যাঁড়াকলে ফেলার রাডারটা ফের সচল হয়ে উঠছে এতোক্ষণে ! তাই এখনই তাঁর হুমকী-ধামকী পৌঁছার আগেই সচল ভ্রাতা ও বহিনেরা, আপনারা কি আমাদের জন্য কার্যকর কোন সৎ-পরামর্শ ও মতামত দান করায় আগ্রহী হবেন ? রীতিমতো বর্তে যেতাম !

[sachalayatan]