Tuesday, September 22, 2009
। দুই-মেগাপিক্সেল...। এক চিমটি র্যাংগস ।
। দুই-মেগাপিক্সেল...। এক চিমটি র্যাংগস ।
রণদীপম বসু
...
আমার এই দুই-মেগাপিক্সেলটা যখন হাতে আসে, র্যাংগস ভবন তখন বিলুপ্তির শেষ ধাপে। টাউন বাসে আসতে যেতে এর বিলুপ্তির প্রতিটা ধাপই চোখে পড়েছে। কিন্তু তা ধারণ করে রাখার সুযোগ ছিলো না। হঠাৎ করে ঢাকায় উগ্র-মোল্লাদের ভাস্কর্য ভাঙার একটা অস্থিরতা দেখা দিলে, ‘যদি হারিয়ে যায়’ ধরনের একটা বোধ বুকের ভেতরে চাড়া দিয়ে উঠলো। জনপদ জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন ভাস্কর্য-স্মারক-পথভাস্কর্য-স্থাপনাগুলোকে আলোকস্মৃতিতে ধরে রাখার হাস্যকর একটা তাগিদ থেকে ছাপোষাদের প্রাপ্য অনুদান উৎসব বোনাসের সীমিত সামর্থ দিয়ে দুই-মেগাপিক্সেলটার স্বত্ব পেলাম। ক’দিন পরই ঈদের ছুটি, ঢাকা যখন ফাঁকা অবস্থা, ভবঘুরে দু’পা সঙ্গি করে বেরিয়ে পড়ি। দুপুর নাই সন্ধ্যা নাই যখন যেখানে পারছি দুই-মেগাপিক্সেলে ধরতে চাচ্ছি সব। আমার দুর্ভাগ্য বলতে হবে, সেই ক’টা দিনই সূর্য মিয়াও সম্ভবত ঈদের ছুটিতে ঢাকার বাইরে ছিলো। তাই আমার মতো ভাদাইম্যা-কুয়াশার উৎপাতে ছবি তুলবো কী, একটু দূর থেকেই দেখা যাচ্ছিলো না কিছুই। কিন্তু এর পরে যে আমার আর সুযোগ নেই !
হাঁটার শ্রান্তি কান্তি ভুলে ঘেমে নেয়ে একশেষ হাঁপাচ্ছি আর গাবরের মতো সাটার টিপছি কেবল। এগুলোতে না আছে ফটোগ্রাফি, না আছে শিল্প। থাকবে কোত্থেকে ! পূর্ব অভিজ্ঞতা ও পেশাগত দক্ষতা না থাকলে যা হয়। তবে পুঁজি কম নয়, অদম্য আগ্রহ আর মন কেমন করা আবেগ। না থাক্ নান্দনিকতা, চিহ্ণ তো রইলো ! ওটাই সান্ত্বনা।
শীর্ষের ছবিটাও তখনই তোলা, ২৫-১২-২০০৮ সন্ধ্যা হয় হয় সময়টাতে। স্মারক ভাস্কর্যটির লাল স্তম্ভগুলোর ফাঁক দিয়ে এক চিমটি র্যাংগস ভবন ধরা পড়তেই খেয়াল করলাম, আসলে ওইটুকুই ভবনটির অবশিষ্টাংশ। গাড়ি-ঘোড়ার ফাঁক-ফোকর বাঁচিয়ে সেই র্যাংগস-এর শেষ কংকালটাও ধরে রাখলাম।
একটা আফসোস বেজে উঠলো- ইশ্, আর ক’দিন আগে হলে ইতিহাসের সাক্ষী ভবনটার একটা পূর্ণ ছবিও রাখা যেতো ! যদি কখনো ‘টাইম মেশিন’ জাতীয় যান চলাচল চালু হয়, সুযোগ পেলে নিশ্চিতভাবে অতীতে গিয়ে ওটার একটা ছবি নিয়ে আসবো, এই সিদ্ধান্তটাও মনে মনে নিয়ে রাখলাম। কিন্তু এই নশ্বর জীবনের আছি-নেই তুলনাটা বোঝার জন্য একটা ছবি তো দরকার ! অন্তর্জালিক আর্কাইভে ঢুঁ মেরে পেলাম এইটা, ছবির উৎসে বলা আছে শাহাবুদ্দিন ব্লগস্পট। ছবিগ্রাহকের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ছবিটা ব্যবহার করলাম এখানে।
ফিরে আসতে আসতে বুক থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো। জীবনের নশ্বরতা চোখের সামনে ঘটতে দেখলে ছিটগ্রস্ত মানুষের মনে কখনো কখনো আধা-দার্শনিকবোধ জেগে উঠে। তাই মনে হলো ক’দিন পর এই চিহ্ণহীন ফাঁকা জায়গাটায় দাঁড়িয়ে হয়তো কোন বাউল একদিন এমনি করে গেয়ে উঠবে-
এইখানে এক দালান ছিলো র্যাংগস ছিলো তার নাম
একদিন সেইটা হাপিশ কইরা দয়াল করলা কেমুন কাম
আহা, এই আছি এই নাই-এর মাঝে নাইরে কারো দাম
দয়াল এ কেমুন ইঞ্জাম...।
...
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment