আমি কি প্রতারিত ! গ্রামীণ ফোন কী বলে ?
রণদীপম বসু
.
এ পোস্ট যে কোন প্রশস্তিমূলক নয়, তা শিরোনামেই স্পষ্ট। কিন্তু এটা নিন্দাসূচক পোস্টও নয়। দেশের বৃহত্তম মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণ ফোনের অদ্ভুত আচরণ বা সম্ভাব্য অভিসন্ধিমূলক কৌশলে ইন্টারনেট গ্রাহক বা ব্যবহারকারী হিসেবে নিজেকে যে প্রতারিত বোধ করছি, তা কতোটা যৌক্তিক, এই ভাবনাটা শেয়ার করাই এই পোস্টের উদ্দেশ্য। আমি ঠিক জানি না, অন্যদের এ অভিজ্ঞতা হয়েছে কি না।
গ্রামীণ ফোনের পেন-ড্রাইভ স্টাইলের এজ মডেম সমৃদ্ধ ’আলো আসবেই’ নামের প্লাগ এন্ড প্লে সুবিধার প্যাকেজটা বাজারে আসার আগে আমি অন্য একটা অপারেটরের ডায়াল-আপ স্যাটেলাইট কানেকশান ব্যবহার করতাম। গ্রামীণ ফোনের এই চাহিদাসম্পন্ন ও জনপ্রিয় হয়ে ওঠা প্যাকেজটা মনে ধরায় আমি কয়েকবার ধরনা দিয়ে অবশেষে সেসময় চারহাজার চারশ’ টাকার বিনিময়ে প্রিপেইড ইন্টারনেট সীমসহ এই মডেম দিয়ে প্রিপেইডে তাদের পি-টু (P2) প্যাকেজ অর্থাৎ আনলিমিটেড একসেস ব্যবহার করে আসছি। ব্যক্তি ব্যবহারকারী হিসেবে ইন্টারনেটে কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি আর ব্লগিং-এর জন্য ভ্যাটসহ মাসে নির্ধারিত ৯৭৭.৫০ টাকার অগ্রীম রিচার্জ দিয়ে আনলিমিটেড একসেস ব্যবহারের আদৌ কোন প্রয়োজন আছে কি না, সেটা ভিন্ন বিষয়। চাকুরিগত কারণে অফিস ডে’তে দিনে তা ব্যবহারের খুব একটা সুযোগ হয় না। অফিস-এন্ডে রাতে বাসায় কয়েক ঘণ্টা ইন্টারনেট ব্যবহার করতে এই ব্যয়বহুল প্যাকেজের খুব একটা প্রয়োজন না থাকলেও ব্যক্তিগত পছন্দ এবং কখনো যদি বেশি ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ে বিবেচনায় আমি পি-টু (P2) কানেকশানেই আগ্রহী ছিলাম এবং আছিও।
গত আগস্ট ২০০৯ মাস থেকে গ্রামীণ ফোন প্রিপেইড সিস্টেমে নতুন করে কোন পি-টু (P2) সংযোগ দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে। তবে পুরনো কানেকশানগুলো এই শর্তে বহাল থাকে যে, তিরিশ দিনের প্যাকেজ-পূর্ণের ডেট-ওভার হবার আগেই রিচার্জের মাধ্যমে নির্ধারিত অগ্রিম বিল পরিশোধ না হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পি-টু (P2) কানেকশান কেটে যাবে এবং পুনঃ রিচার্জ করে পছন্দানুযায়ী হয়তো ‘নো ইউজ নো পে’ সিস্টেমের আওতায় ০.০২ টাকা প্রতি কিলোবাইট ব্যবহার মূল্যের পি-ওয়ান (P1) প্যাকেজ, কিংবা প্রতি ৩ গিগাবাইট ৮৫০ টাকার মাস-লিমিট প্যাকেজ পি-ফাইভ (P5) বা প্রতি ১ গিগাবাইট ৩৪৫ টাকার মাস-লিমিট প্যাকেজ পি-সিক্স (P6) বা অন্য যে কোন সুবিধা গ্রহণ করা গেলেও পি-টু (P2) সুবিধা আর ফিরে পাওয়া যাবে না।
প্রিপেইডে আমার আনলিমিটেড একসেস পি-টু (P2) কানেকশান টিকিয়ে রাখার সুবিধার্থে নির্ধারিত নির্ধারিত ৩০ দিনের টাইম ফ্রেমের মধ্যে আগেভাগেই আমি এযাবৎ ১০০০ টাকা করে ফ্লেক্সিলোডের মাধ্যমে রিচার্জ করে নির্ধারিত সময়ের আগেই আমার কানেকশানটি চালু রাখার প্রয়োজনীয় কাজটি করে আসছি। এতে এই অ্যাকাউন্টে অতিরিক্ত কিছু ব্যালেন্সও প্রতিমাসেই যুক্ত হচ্ছে। কিন্তু সর্বশেষ এই ১৩ সেপ্টেম্বর ২০০৯ অর্থাৎ গতকাল পর্যন্ত আমার প্রচেষ্টা, উদ্যোগ, আন্তরিকতা ও আগ্রহে কোন ঘাটতি না থাকলেও যে পদ্ধতিতে আমার পি-টু (P2) কানেকশানটি আন-একসেস করা হয়েছে, এর কোন যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা ও প্রতিকার না পেয়ে এটাকে আমি গ্রামীণ ফোনের অযৌক্তিক ও গ্রাহক-প্রতারণামূলক কাজ হিসেবেই বিবেচনা করছি।
গতকাল ১৩ সেপ্টেম্বর ২০০৯ সকাল সাড়ে দশটার কাছাকাছি কোন এক সময়ে একটা ফ্লেক্সিলোডের দোকান থেকে নিয়মিত প্রতিমাসের মতোই যথানিয়মে ১০০০ টাকার ফ্লেক্সি করাই আমার ইন্টারনেট সীম নম্বরের অ্যাকাউন্টে। রাতে বাসায় ফিরে কম্পিউটারে প্লাগ-এন্ড-প্লে মডেম সংযুক্ত করলাম, কিন্তু অন্যান্যবারের মতো এবার আর কোন ক্রিং করে ইনকামিং ম্যাসেজ এলার্ট টোন পেলাম না। যথারীতি ওটার ইনবক্স ম্যাসেজে ঢুকলাম, কোন আপ-ডেট ম্যাসেজ নেই। তবে কি যথাস্থানে ফ্লেক্সি হয় নি ! আমি কোন টেকি মানুষ নই। কম্পিউটার প্রযুক্তি বা গণক-যন্ত্রের কলকব্জা ও এর জটিল সব কর্মকাণ্ড সম্পর্কে আমার ধারণা শূন্যের কোঠায়। তবে অভিজ্ঞতা দিয়ে যেটুকু জেনেছি, কোথাও থেকে মোবাইল সীম নম্বরে ফ্লেক্সিলোড করা হলে সংশ্লিষ্ট সীমের অ্যাকাউন্টে টাকা জমা হওয়ার একটা মেসেজ চলে যায়, মোবাইল ফোনগুলোতে যা আমরা সচরাচর দেখে থাকি। [Name:
Number: FlexiLoad
Content:
Your account has been refilled successfully by TK1000.0.Your Transaction ID is BD2081217280172.Please pay to Retailer.
Time: 12/08/2009 17:28:14]
এ যাবৎ তাই হয়ে আসছে। ইন্টারনেট সীমের ক্ষেত্রে এই ম্যাসেজের মাধ্যমে রিচার্জ নিশ্চিত হওয়া গেলে তাদের দেয়া নম্বর ৫০০০-এ একটি মেসেজ প্রেরণের মাধ্যমে চলতি প্যাকেজ বহাল রাখা বা প্যাকেজ পরিবর্তনের পছন্দ জানিয়ে দেয়ার পরই তারা প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়। কিন্তু এই প্রথম এর অন্যথা হলো। মেসেজ না পেয়ে ভাবলাম নিশ্চয়ই ওই ফ্লেক্সি দোকানদার ফ্লেক্সিটা করে নি বা ভুল নম্বরে টাকা পাঠিয়েছে। রাত তিনটা পর্যন্ত বারবার মেসেজ চেক করে গেলাম, কোন আপ-ডেট মেসেজই পেলাম না। আরো আশ্চর্যের বিষয়, প্যাকেজ টাইম ওভার হবার কমপক্ষে চব্বিশ ঘণ্টা আগেই প্রতিমাসে যে সতর্কবার্তাটা নিয়মিত এসে বসে থাকতো-
Name:
Number: 5000
Content:
Your EDGE P2 will expire on 2009/08/15. To continue EDGE P2 please keep Tk.977.50 (including 15% VAT). To unsubscribe, send OFF to 5000 before 2009/08/15.
Time: 13/08/2009 09:54:13
এ ধরনের কোন মেসেজও পেলাম না। ভাবলাম হযতো এখনো সময় হাতে আছে। যাক্ কী আর করা, ওই ফ্লেক্সিদোকানদারকে ধরতে হলে সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই হবে !
সকালে অফিস-পথে ওই ফ্লেক্সি দোকানে হামলে পড়লাম। খাতাপত্র দেখে লোকটা আমাকে নিশ্চিত করলো যে ফ্লেক্সি যথাসময়েই করা হয়েছে। কিন্তু এতে আমার অবিশ্বাস, তাহলে মেসেজ আসবে না কেনো ! অবশেষে গ্রামীণ ফোনের কাস্টমার কেয়ার ১২১-এ ডায়াল করা হলো। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর লাইন পাওয়া গেলো। ওপাশ থেকেও নিশ্চিত করা হলো যে, টাকাটা গতকাল সকালেই জমা হয়েছে। তাহলে মেসেজ পেলাম না কেন ? দুঃখ দুঃখ স্বরে জানানো হলো, ওগুলো আসলে কম্পিউটারের অটোমেশন সিস্টেমেই হয়ে থাকে, তাই কেন হলো না এটা এ মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না, তবে সাধারণত এমনটা হয় না। তবে আমার টাকাটা জমা হবার বিষয়টা আবারো নিশ্চিত করা হলো। বেশ, আমি অনুরোধ করলাম আমার প্যাকেজটা চালু রাখার ব্যবস্থা করার জন্য। একটু সময় চেয়ে ফোনটা কিছু সময়ের জন্য নীরব রইলো।
অতঃপর ওপাশ থেকে অত্যন্ত দুঃখ প্রকাশ করে আমাকে জানানো হলো যে, আমার পি-টু (P2) কানেকশানটা ১৪ সেপ্টেম্বর ২০০৯ সময় ১.৩৪ এএম থেকে অলরেডি স্থানান্তর হয়ে পি-ওয়ান (P1) কানেকশানে চলছে। শুনে আমি আকাশ থেকে পড়লাম ! আমি তো এর বহু আগে সেই সকালেই ফ্লেক্সি করেছি এবং কোন মেসেজ না পেয়ে বিভ্রান্ত আমার এটা তো এর আগে অভিজ্ঞতায় ছিলো না যে, ওই মডেম সীমের ব্যালেন্স জানার জন্য আরেকটা মোবাইল ফোন রাখতে হবে, যা দিয়ে সুনির্দিষ্ট নম্বরে ((*566*10#) ডায়াল করে আপ-ডেট ব্যালেন্স জেনে সে অনুযায়ী ইন্টারনেট সচল রাখার ব্যবস্থা নিতে হবে ! তাহলে মিনিমাম চব্বিশ ঘণ্টা আগেই যে সতর্কতা মেসেজটা পাঠানো হয়, তা পেলাম না কেন ? আবারো অজ্ঞাত কারণের সপক্ষে দুঃখ প্রকাশ করে আমাকে ওপাশ থেকে অদ্ভুত সান্ত্বনা জানিয়ে এবার পি-ফাইভ (P5) প্যাকেজের সাশ্রয়ী সুবিধা ও গুণাগুণ ইত্যাদি বিস্তারিত জানাতে লাগলেন। তাঁর কথা থামিয়ে আমি বললাম যে, গ্রামীণ ফোনের এই অনৈতিক আচরণে আমি প্রতারিত হওয়ার কষ্ট পেয়েছি। তিনি আমার কষ্টে সহমর্মিতা জানিয়ে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে পি-ফাইভ (P5) প্যাকেজ অন করে দেয়ার অনুমতি চাইলেন এবং বললেন, পুণরায় একাউন্ট রিচার্জ না করলে অক্টোবর ১৩ তারিখ সকাল ১০.৩৪ টা পর্যন্ত আমি নতুন এই সুবিধা খুব আনন্দের সাথে উপভোগ করতে পারবো। এবং গ্রামীণ ফোনের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে জানতে চাইলেন যে আমার জন্য তিনি আর কি সেবা দিতে পারেন ?
আমি বললাম, আমি আমার পি-টু (P2) প্যাকেজেই থাকতে চাই। ওপাশ থেকে অত্যন্ত মার্জিত ও পেশাদার জবাব এলো, স্যরি স্যার, টাইম ফ্রেম খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপার। ওখানে ফিরে যাওয়ার কোনো উপায় নেই !
আমাকে বাধ্য করে এখন যে প্যাকেজে আনা হয়েছে, এর কোন মেসেজও এখন পর্যন্ত ফর্মালি সংশ্লিষ্ট নম্বরে পাঠানো হয় নি। আমি এখনো বুঝতে পারছি না, এতো বড়ো একটা প্রতিষ্ঠান কি তার গ্রাহককে কোন অভিসন্ধিমূলক কৌশলে অনৈতিক প্রতারণা করতে পারে ? এর জবাব আমি কিভাবে পাবো ?
(১৪-০৯-২০০৯)
No comments:
Post a Comment