Tuesday, July 14, 2009

# ছবি ও না-ছবি : একটি সংগীত-সন্ধ্যার নির্ঘণ্ট। ২য়/শেষ পর্ব।


ছবি ও না-ছবি : একটি সংগীত-সন্ধ্যার নির্ঘণ্ট। ২য়/শেষ পর্ব।
রণদীপম বসু

[১ম পর্ব এখানে...]

‘এই চর্মচক্ষে আমরা যাহা দেখি, তাহাই কি সত্যি ?’ এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হলে নমুনা স্বরূপ আমাদেরকে সেই স্পটগুলোতে ঢুঁ মারতে হবে, যেখানে একটা সংগীত-সন্ধ্যা মুখর অনুষ্ঠানে (১২-০৭-২০০৯ রবিবার ঢাকার শাহবাগে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের শহীদ জিয়া মিলনায়তনে কিউটেনাস টি সেল লিম্ফোমা নামের ভয়াবহ রকমের ক্যান্সারে আক্রান্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা এ জে এস এম খালেদের চিকিৎসা সহায়তা তহবিল সংগ্রহার্থে আয়োজিত) আমাদের প্রিয় সচল মুখগুলো অনানুষ্ঠানিক যেসব মাধুর্য্য রচনা ও সংরক্ষণ করে গেছেন তা দেখার জন্য।


কথায় তো আর চিড়ে ভিজবে না। তার চে’ চলুন না হয় কিছু নমুনা ছবি বিশ্লেষণ করি !

সতর্কতা: ২মেগা পিক্সেল মোবাইল ক্যামেরার রাতকানা চোখকে বিশ্বাস করিলে ভালো, না করিলে আরো ভালো। তাই বলিয়া ছবির চরিত্রগুলি তো আর ছবি হইতে বাহির হইয়া এইদিক ওইদিক না তাকাইয়া সোজা হাঁটিয়া চলিয়া যাইবে না !


নমুনা ০১:
আমাদের সবার প্রিয় ছবিয়াল সচল মুস্তাফিজ ভাই অতি সজ্জন ব্যক্তি নিঃসন্দেহে। যে কোন ভুতের বেগার ও সহযোগিতামূলক কর্মকাণ্ডে তাঁর উপস্থিতি অনেকটা নিশ্চিতই বলা চলে। আর ছবিয়াল হিসেবে তিনি যে একেবারে গুরুগোত্রের মানুষ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ছোট্টখাট্ট ক্যামেরার এইটুকুন মুখে বহুগুণ বড়ো সাইজের হাতির শূরের মতো জুড়ে দেয়া দীঘালে-পাথালে বিশাল লম্বা মোটা বস্তুটাকে যাঁরা চিনেন তাঁরা তো তাঁকে সমঝে চলেনই, আমার মতো নাখান্দা বান্দাদের নিরীহ পিলেটাও তা দেখেই চমকে ওঠে ! দুনিয়া জুড়ে কতো কিছুর ছবি তুলে বেড়ান তিনি ! কিন্তু তাঁর নিজের ছবি অন্য কেউ তুলতে গেলে এ কী ব্যবহার বলুন তো ! ভাগ্যিস নমুনা প্রমাণ হিসেবে ছবিটা ছিলো ! নইলে ছবি তোলার কথা বললেই তিনি যেভাবে ভেঙচি কেটে ওঠেন, তা কি বিশ্বাস করানো যেতো ! দেখুন না, লজ্জা পেয়ে কানাডা থেকে সদ্য আগত অমিতও তাঁর মুখটা কিভাবে ঘুরিয়ে নিচ্ছে !


নমুনা ০২:
আমাদের অতি প্রিয় স্বনামখ্যাত ব্লগার ও লেখক সচল অমিত আহমেদের নামের সাথে প্রায় সবাই পরিচিত। কদিন পরই যাঁর নামের আগে ড. কিংবা পরে পিএইচডি বিশেষণ যুক্ত হতে যাচ্ছে। গল্প উপন্যাসের বারোভাজা সেরে এবার সাইফাই গল্পকেও যেভাবে তিনি সাইজ করতে নেমেছেন, ক’দিন পর যদি ভাত মারার অভিযোগে মুহাম্মদ জাফর ইকবাল তাঁকে লাঠি নিয়ে তাড়া করতে থাকেন, আশ্চর্যের কিছু হবে না। সেই অমিত আহমেদ ঢাকা এসেছেন শুনে দৌঁড়ে গেলাম জাদুঘরে। কিন্তু কোথায় অমিত ! একটু পরে রীতিমতো নায়কী চেহারার এক টিন-এজ ছেলে এসে বলে কিনা- আমি অমিত ! চারদিকে যেভাবে ঠগ-বাটপাড়ে ছেয়ে যাচ্ছে, তাতে কানা হলেও আমার ২ মেঃপিঃ মোবাইল ক্যামেরাটাকে কাজে লাগানো জরুরি মনে করেছি।


নমুনা ০৩:
অনুষ্ঠান ভেনু জাতীয় জাদুঘরের শহীদ জিয়া মিলনায়তনে কতো সুন্দর সুন্দর মুখ আর মিডিয়া পারফরমারদের আগমন ঘটবে, তাই হলের গেটে ষণ্ডামার্কা জুতসই দারোয়ান দরকার। আলগা ফুটানিতে অনেকেই ওস্তাদ, কিন্তু সময়কালে সেরূপ ষণ্ডামার্কা ফিগার আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। হঠাৎ করে এগিয়ে এলেন আমাদের সচল আহমেদুর রশিদ টুটুল ভাই- ক্যান, আমাকে পছন্দ হয় না ? বিশ্বাস করুন টুটুল ভাই তাঁর বহুমাত্রিক যোগ্যতা দিয়ে অনুষ্ঠান প্রবেশস্থলটাকে এমন নিরাপদ করে তুললেন যে, কাউকে টু-ফা করতেও দেখা যায়নি। সমস্যা ছিলো একটাই, আমার রাতকানা ক্যামেরার চোখ কিছুতেই টুটুল ভাইকে খুঁজে পাচ্ছিলো না !


নমুনা ০৪:
সবেমাত্র অনুষ্ঠান হলে ঢুকলেন অমিত। জনাকয়েক সচল তাঁর দিকে এগিয়ে এসে পরিচিত হচ্ছেন। আমার তো শুরুতেই সন্দেহ, এই নায়ক চেহারার ছোকরা একটা ছেলে কিছুতেই ক’দিন পরের ড. অমিত আহমেদ হতেই পারে না ! সন্দেহের নমুনা রাখতেই পকেট থেকে বের করে মোবাইল ক্যামেরাটা তাক করেছি। কিন্তু রাম যে বুঝে ফেলেছে উল্টোটা ! ‘আমি থাকতে আবার নায়ক কেডায় !’- বলেই লাফ দিয়ে সামনে এসে বিশাল মুড নিয়ে নজরুল ভাই ! দেখুন না, ভাব দেখে আর বাঁচি না !


নমুনা ০৫:
রতনে রতন চিনে, উরায় চিনে ধুরা ! এ কথার কী অর্থ, আমি বুঝি না। তবে কিছুদিন যাবৎ এটা খেয়াল করি যে, চেয়ার ভেঙে মাটি ডেবে ফেলা জাতিয় কী একটা দুর্ঘটনার পর থেকে বিশালদেহী ব্লগার শাহেনশাহ সিমন যে চেয়ারে বসেন, তাঁর পাশের চেয়ারে কেউ বসেন না। পাহাড়চাপা পড়ার আতঙ্কে হয়তো। তবু সিমনের পাশে যোগ্য আসন সঙ্গি পেতে দেরি হলো না। সেই খালি পড়ে থাকা চেয়ারটাতেই বড় আয়েশ করে বসে নিশ্চিন্তে অনুষ্ঠান উপভোগ করছেন আরেক বিখ্যাত ব্লগার আরিফ জেবতিক। সত্যি, রতনেই রতন চিনে !


নমুনা ০৬:
অনুষ্ঠানের মাঝামাঝি সময়টাতে হঠাৎ করে দেখা গেলো মিলনায়তনের ভেতরে আমাদের নক্ষত্র ব্লগার সচলরা কেউ নেই ! কী ব্যাপার ? খুঁজতে খুঁজতে কিঞ্চিৎ আলামত উদ্ধার করে সেই মোতাবেক প্রশস্থ প্যাসেজ ধরে একেবারে দক্ষিণপ্রান্তের আলোহীন ছায়াচ্ছন্ন কোনাটাতে একত্রে সবাইকে পাওয়া গেলো। কিন্তু কেউই নিজের নিজের চেহারাটা খোলতাই করছেন না। গোটা জাদুঘর এলাকাই ভেতরে-বাইরে ধুমপানমুক্ত শুধু নয়, ধুমপান নিষিদ্ধ এলাকাও। কিন্তু এই চিপায় এসে এখানে কী করছে এরা ! আমিই বুঝতে পারছি না, আমার কানা ক্যামেরা আর বুঝবে কী !


নমুনা ০৭:
সংসারে থেকেও যিনি সংসারের সকল মায়াচ্ছন্নতার উর্ধ্বে উঠে নিজেকে বিচরণ করান, তিনি আমাদের আরেক নাক্ষত্রিক গোসাই ব্লগার সচল মাহবুব লীলেন। আমাদের সাধারণ দৃষ্টিতে বিবেচ্য মহার্ঘ জিনিসপত্রও তাঁর কাছে গুরুত্বহীন তুচ্ছাতিতুচ্ছ ! সবাই জানে তিনি সমস্ত লোভ লালসার উর্ধ্বে সাধনার সপ্তশিখরে অবস্থান করেন। অথচ পোলাপাইন ব্লগার পান্থ রহমান রেজা কিসের প্যাকেটটা যেন কিনে এনে কেবল ছিঁড়েছে, অমনি লীলেন ভাই ‘এটা বাচ্চাদের খাবার নয়’ বলেই ছোঁ মেরে পান্থর হাত থেকে প্যাকেটটা তুলে নিয়ে গোগ্রাসে কেবল গিলতেই থাকলেন ! এটা কী জিনিস, তা সামান্য চেখে দেখার জন্য কত্তো কাকুতি-মিনতি করলাম। আশ্চর্য, তাঁকে একটুও গলাতে পারলাম না ! ভাগ্যিস মোবাইল ক্যামটা সাথে ছিলো। মনে ভীষণ ব্যথা নিয়ে পান্থ তো প্রায় ছিনিয়েই নিলো মোবাইলটা আমার হাত থেকে। এবং খিচে দিলো। নইলে কেউ কি বিশ্বাস করতো ?
আর টুটুল ভাই’র বহুমাত্রিক যোগ্যতাটা আবারো একটু যাচাই করে দেখুন তো, ফটকের নিরাপত্তায় দায়িত্বরত অবস্থায় টুটুল ভাইকে মানিয়েছে কেমন ?
হাহ্ হাহ্ হা !

বোনাস: কিছু কানা ছবির নমুনা

















[sachalayatan]

No comments: