Sunday, June 14, 2009

# [রম্য] সচলাড্ডা, না কি বোম ভোলানাথ...!


সচলাড্ডা, না কি বোম ভোলানাথ...!
রণদীপম বসু

সময় সমাসন্ন, অথচ মেলার আয়োজক ভোলাবাবার বিশিষ্ট ভক্ত প্রখ্যাত আহমেদুর রশিদ টুটুলের কোনো পাত্তা নেই। এদিকে ভোলানাথের শিষ্যরা একে একে আসতে শুরু করেছেন। আয়োজন ভেনু শুদ্ধস্বরের সত্ত্বাধিকারী হিসেবে নিজের আসনটিসহ ওখানে আসন সংখ্যা সাকুল্যে চারটি, যা ইতোমধ্যেই দখল হয়ে আগত শিষ্যরা যার যার কারিশমা দেখাতে শুরু করে দিয়েছেন। হঠাৎ ফোনে আয়োজক টুটুল নিজে উপস্থিত থাকতে পারছেন না এরকম ব্যাখ্যা শুনে মেলার কো-অরডিনেটর বিপ্লব রহমানের চান্দি এন্টিক্লকওয়াইজ চক্কর শুরু করে দিয়েছে। এখন উপায় ! পরীক্ষিত শিষ্য নজরুল ইসলাম বাবার প্রসাদ পেতে দেরি দেখে খেকখেক শুরু করে দিয়েছে। প্রসাদ নয়, বাবাকে পছন্দের প্রায়োরিটি দিয়ে অতি ভদ্র কবিশিষ্য তারেক রহিম নিজেকে শান্ত রাখার রিহার্সেল দিচ্ছে। তাঁকে আবার উত্তমভাবে চর্চার প্রক্রিয়া শিখিয়ে দিচ্ছে গাল্পিকশিষ্য পান্থ রহমান রেজা। যার একারই একত্রে চার-চারটি আসন দরকার হয়, নিরীহ পর্বতাকার শিষ্য শাহেনশাহ সিমন তো ঢুকেই তেড়ে গেলো নজু ভাইয়ের দিকে। ভোলাবাবার প্রসাদের প্রতি এমন বেলায়েক মন্তব্য ! আর টেকনিক্যাল শিষ্য গৌতম রায় বেশ লিনাক্স মুডে তা পর্যবেক্ষণ করছে। অবস্থা বেগতিক দেখে অর্ধমাত্রার বায়বীয় প্রসাদের সাপ্লাই দিয়ে কো-অরডিনেটর বিপ্লব দা’ তখন পর্যন্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন আর একই সাথে আয়োজকের গোষ্ঠী উদ্ধার করে যাচ্ছেন। কী আশ্চর্য, বাবার স্বঘোষিত চেলা গোঁসাই লীলেনেরও খোঁজ নাই !


যাদের জন্য এই বিশেষ আয়োজন, বহুদিন বাবার প্রসাদ বঞ্চিত প্রবাসী শিষ্যদ্বয় ইংল্যান্ড থেকে সুবিনয় মুস্তফি আর সিংগাপুর থেকে ফারুক হাসান এসে পৌঁছামাত্রই বিপ্লব দা’কে হঠাৎ করে ঝাপসা দেখা যেতে লাগলো। ব্যাপার কী ? অতি ঘূর্ণনগতির কারণে বস্তুর অবয়ব নাকি ঝাপসা হয়ে যায়। রীতিমতো হাঁকতে লাগলেন- বাইরে আসো সবাই, বাইরে আসো ! কী ব্যাপার ? তিনি আবার কোন্ ঘটনা ঘটিয়ে ফেললেন ? হুড়মুড় করে সবাই বেরিয়ে দেখি ৯১ আজিজ কো-অপারেটিভ মার্কেটের তৃতীয় তলার দ্বিতীয় গলিটির শুদ্ধস্বর নামের যে ঘরটিতে এতোক্ষণ আমরা অবস্থান করছি তার সামনের প্যাসেজ দখল করে কোত্থেকে গুটি কয়েক ছেঁড়া মাদুর যোগার করে করিৎকর্মা বিপ্লব দা’ আসরের ব্যবস্থা করে ফেলেছেন। মার্কেটের বাদবাকী দোকান-মালিকরা কষে মার না দিলেই হয়।


শুরু হলো হুড়োহুড়ি। কে আগে জাকিয়ে বসবে সেই কম্পিটিশানে শিষ্যদের ব্যক্তিগত দক্ষতার যে প্রদর্শনী চলতে লাগলো তার মাঝখানেই সদ্য আগত বাবার আরেক একনিষ্ঠ ভক্ত এনকিদুর ছ্যাৎছুৎ ! তাঁকে পছন্দসই জায়গা ছেড়ে দেয়া না হলে সে যে টেকি-কার্টুন এঁকে এইসব হতচ্ছাড়া শিষ্যদের বর্তমান হালচালের বেড়াছেড়া অন্তর্জালে ফাস করে দেবে, সেই নমূনা হুমকী দেখাতেও কসুর করলো না।

শুরু হলো বিপ্লব দা’ কর্তৃক বাবা ভোলানাথের প্রসাদ বিতরণ। প্রসাদ সেবনের সে যে কী মাজেজা ! এরপর যা ঘটতে লাগলো তা বর্ণনা করবো কী ! ভাষাতেই লেগে গেলো ছেড়াবেড়া ! অতএব সে চেষ্টা আর না করে বরং আসুন সবাই চক্ষু-কর্ণের বিবাদ ভঞ্জন করে নেই !

ছবি ০১। কো-অরডিনেটর বিপ্লব রহমান আইন-শৃঙ্খলা তদারকিতে ব্যস্ত। সাথে সহযোগী প্রধান পাণ্ডা হিসেবে বাছাই করেছেন ধলাপাহাড় শাহেনশাহ সিমন’কে।

ছবি ০২। আহা ! ভোলাবাবার প্রসাদের কী মহিমা !

ছবি ০৩। প্রসাদের মহিমায় পাহাড়ও উল্টে গেলো !

ছবি ০৪। বড় বেশি লেট করে ফেললেও এসেই বাবার চেলা হিসেবে নিজের মারাত্মক গুরুত্বটুকু বোঝানোর চেষ্টা করছেন গোঁসাই লীলেন।

ছবি ০৫। 'অই, পিছন থাইকা উঁকি দেয় কেডায় রে !'

ছবি ০৬। 'আমারে চিনছ্ !'

ছবি ০৭। বোম বাবা ভোলানাথ !

ছবি ০৮। কিচ্ছু নাই ! সব মায়া !


[sachalayatan]

No comments: