Saturday, November 15, 2008
@ আমাদের দিগম্বর তত্ত্ব…!
আমাদের দিগম্বর তত্ত্ব…!
রণদীপম বসু
‘অর্থ গোবর সমতূল্য। ইহা স্তুপীকৃত করিয়া রাখিলে দুর্গন্ধ ছড়ায়। ছিটাইয়া দিলে উর্বরতা বৃদ্ধিকারক সার হয় এবং ফলন বৃদ্ধি করে।’ ছাত্রত্বের সেই কৈশোরকালে ভাবসম্প্রসারণ বা রচনা জাতীয় কিছু মুখস্ত করা বাক্যগুলো এখনো যে জ্বলজ্বল করে স্মৃতিতে ভেসে উঠে, তা কি কৈশোরিক স্পর্শকাতর স্মৃতির কৃতিত্ব, না কি অনেককিছুই বদলে যাওয়া সমকালীন দীর্ঘশ্বাসের নষ্টালজিক আবেগ, তার পার্থক্য টানা দুরুহ। তবে যে কর্পোরেট সময়কালে আমরা এখন অবস্থান করছি, এর প্রতিটা মুহূর্তের জন্য, প্রতিটা নিঃশ্বাসের জন্যই আমাদেরকে বিনিময়হারে অর্থমূল্য গুনতে হয়। কথাটাকে মনে হয় হাইপোথিটিক্যাল মন্তব্য হিসেবে উড়িয়ে দেয়ার কোন উপায় নেই। তা যে আক্ষরিক অর্থেই পূর্ণভাবে সত্য, একটু তলিয়ে ভাবলেই খুব স্পষ্ট হয়ে উঠে। অর্থাৎ এই অর্থ বা কড়ি আমাদের নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস থেকে শুরু করে আমাদের প্রতিটা মুহূর্ত, মৃত্যুকাল বা মৃত্যুপরবর্তী সময়েও অতি আবশ্যকীয় অনুষঙ্গ হিসেবে আষ্টেপৃষ্ঠে এমনভাবে জড়িয়ে আছে যে তা থেকে আমাদের মুক্তি নেই। তবে কি এই মূর্ত-জগতের ব্যবহারিক অধিপতি মানুষ প্রজাতিটা আসলে পরাধীন ! আসলেই তাই। রাস্তার ফকির থেকে ক্ষমতার শীর্ষদেশে অবস্থানকারী প্রাসাদবাসী ব্যক্তিটিও প্রকৃত অর্থে পরাধীনই। জ্যাঁ জ্যাক রুশো কি আর এমনি এমনি বলেন, ‘Man born free but chained in everywhere !’
এই শৃঙ্খল, এই পরাধীনতা অস্বীকার করা বা এড়িয়ে যাওয়ার কোন উপায় নেই। সভ্যতার অনিবার্য শর্ত হিসেবে তা এড়িয়ে যাবোই বা কীভাবে ! সভ্যতার অপরিমেয় দীর্ঘ চেইনের এই যে অতিক্ষুদ্র অংশ আমরা প্রত্যেকে, সেই চেইন তো বহু বিস্তৃত বহুধাবিভক্ত একটা অভিন্ন প্রবাহমাত্র। এই প্রবাহে রয়েছে ব্যক্তিক, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রনৈতিক, আন্তর্জাতিক, সময়কালিক হাজারো লক্ষ শাসন, অনুশাসন, নিয়ম-নীতি, বিধি-বিধান, স্বপ্ন পরিকল্পনা, অধিকার ও ব্যবহারের আন্ত-প্রসারী পারস্পরিক গ্রন্থিতে আটকানো একটা ধারাবাহিকতা, চেইন রিং-এর মতোই। এখানে বিশ্লিষ্ট হবার সুযোগ কোথায় ? চেইন সে যতো দীর্ঘ আর বিস্তৃতই হোক, অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আংটা বা রিং-এর পারস্পরিক বন্ধনেই তো সে চেইন। একটা রিং ছুটে যাওয়া মানেই এর অবিচ্ছিন্নতা ক্ষুণ্ন হওয়া, শৃঙ্খলা ভেঙে যাওয়া, ধারাবাহিকতা নষ্ট হয়ে যাওয়া, পূর্ণতা বা নেটওয়ার্কিং এলোমেলো হয়ে যাওয়া। অতএব চেইনের একটা রিংও তার নিজের ও পারস্পরিক স্বার্থেই নিজেকে সার্বভৌম ঘোষণা করার অধিকার পেতে পারে না। আমি স্বাধীন, এই ঘোষণা দিয়ে হঠাৎ নেংটো হয়ে সর্বসমক্ষে রাস্তায় নেমে যেতে পারি না আমরা। আর এখানেই স্বাধীনতা বা পরাধীনতা শব্দগুলোর বহুমাত্রিক অর্থময়তার সাথে স্বেচ্ছাচারিতা জাতীয় শব্দগুলোর মাত্রাগত পার্থক্যও স্পষ্ট হয়ে উঠে আমাদের কাছে। তাহলে আবারো বলতে হয়, আমরা কি শুধুই পরাধীন ?
একইভাবে অর্থের বা টাকা-কড়ি বিষয়ক যে আর্থিক শৃঙ্খলে আমাদের সক্রিয় অবস্থান, এর সাথে একটা রোবটিক অন্তর্জালের কতটুকু তফাৎ ? জীবন মানেই কি একটা বস্তগত যান্ত্রিক প্রণালীতে প্রশংসনীয় অভ্যস্ততার যোগ্যতা প্রদর্শন এবং তাতে প্রশ্নহীন আনুগত্য প্রকাশ করে যাওয়া শুধু ? না কি অন্য কিছু ? মূলত এই প্রশ্নেই নিহিত থেকে যায় যুক্তি ও কল্পনাপ্রবণ সৃজনশীল মানুষের সাথে বাদবাকি সৃষ্টির মৌল ব্যবধানটা। হয়তো প্রশ্নহীন আনুগত্য প্রকাশের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে আমরা যার যার লোকদেখানো অবস্থানের শালীন প্রকাশ ঘটিয়েও ফেলতে পারি। এতেই কিন্তু সবকিছুর মীমাংসা হয়ে যায় না। বরং বিষয়টাকে আমাদের উপলব্ধির দোরগোড়ায় বসিয়ে যদি একটু নেড়েচেড়ে চেখে দেখার চেষ্টা করি, তাহলেই হয়তো নিজস্ব অবস্থানটা অন্তত নিজের কাছেই আরেকটু খোলাশা হয়ে উঠার সম্ভাবনা থাকে। এবং সত্যিই যদি নিজের কাছে আমরা সৎ ও আন্তরিক হয়ে থাকি। আত্মপ্রবঞ্চনা বা আত্মপ্রতারণা নামের কিছু রহস্যময় আভিধানিক শব্দ আমাদের শব্দ-সঞ্চয়ে থাকলেও ওগুলো যে সত্যিই অর্থহীন বা উদ্ভট-অর্থময় কিছু শব্দ, তা আমরা স্বীকার করি আর না করি, এটা তো বিশ্বাস করি যে, জগতে মানুষ কখনো নিজেকে প্রতারিত করতে পারে না ! যিনি মিথ্যে বলছেন, সবাইকে তা সত্য বলে মানাতে আপাত সক্ষম হলেও তিনি নিজে জানেন যে তিনি মিথ্যে বলছেন, অন্যকে প্রতারণা করছেন।
এখানে যে প্রশ্নটা উঠে আসে, যিনি নিজের কাছে সৎ থাকবেন, পাশাপাশি কোন অধীনতা মানবেন না, আবার সামগ্রিক শৃঙ্খলাও অটুট থাকতে হবে, সামাজিক দায়বদ্ধ মানুষ হিসেবে এসব পরস্পর বিরোধী অবস্থানকে একইসাথে ব্যালেন্স করা কি সম্ভব ? একই সাথে মানি এবং মানি না এই বিপরীতমুখী দু’টো ধারাকেই মানুষের মানবিক অস্থিত্ব নিরাপদ রাখার স্বার্থেই ধারণ করা জরুরি বৈ কি। আর এ জন্যই হয়তো একদিন শিল্পকলার জন্ম হয়েছিলো। নিজস্ব সামাজিক দায়বদ্ধতাকে স্বীকার করেও চলমান ব্যবস্থায় বিদ্রোহীপ্রবণ হয়ে উঠার এবং তা সঙ্কোচহীন প্রকাশের হাতিয়ার হয়ে এলো মানুষের এক অভূতপূর্ব সৃষ্টি যাকে আমরা শিল্পকলা বলেই আখ্যায়িত করেছি। প্রচলিত বিধানকে মান্য করেও ব্যক্তি তার মূল্যবোধ শিল্প প্রতীকের আশ্রয়ে ছড়িয়ে দিতে পারছেন। কারো মনে হলো যে মানুষের আদিম নগ্নতা পোশাকি চেহারা হতেও পবিত্র, নিজে নগ্ন না হয়ে বা কাউকে ইচ্ছের বিরুদ্ধে নগ্ন না করেও এই চিন্তাকে শিল্পের প্রতীকে উপস্থাপিত করার প্রয়াস নিলেন তিনি। তা গৃহিত হলো কি হলো না সেটা ভিন্নতর প্রেক্ষাপট। কিন্তু তিনি তার প্রণোদনাটুকু প্রকাশ করেও প্রচলিত সভ্য-ব্যবস্থার সাম্যতাকে বিঘ্নিত করছেন না। এটাই সেই ব্যালেন্স। এই চলমান প্রক্রিয়া, চিন্তাধারা, ব্যবস্থা বা প্রথার বিপক্ষে বিদ্রোহ এবং পরিবর্তনের তীব্র উন্মাদনাই যে শিল্পের একান্ত প্রণোদনা তাতে নিশ্চয়ই দ্বিমত করবেন না কেউ। কিন্তু আমার প্রসঙ্গ শিল্পকলার সৃষ্টি বা এর সংজ্ঞা নিরূপণ বা এর এখতিয়ার বা বিস্তৃতি পরিমাপ বা এসব কিছু নয়। মানুষের জীবনে অর্থের প্রভাব কতোটা গভীর বা বিস্তৃত, এবং তা কতোটা হওয়া উচিৎ, কেবল এই বিষয়টাই একটু বাজিয়ে দেখা। আর শাস্ত্রিয় রীতিতে বাজাতে গিয়ে শুরুতেই তাল কেটে পদে পদে যে ত্রাহি অবস্থা তৈরির সম্ভাবনা, তারচেয়ে পণ্ডিত বাজিয়েদের জন্য তা সংরক্ষিত রেখে আমরা বরং একটু অশাস্ত্রিয় বেতালেই এগিয়ে যেতে পারি। চেখে দেখতে পারি, আর্থিক শৃঙ্খলের অনিবার্য বন্ধনে থেকেও মানুষের চিরায়ত স্বাধীন সত্ত্বাকে উন্মুক্ত রাখার বিষয়টাকে আমরা কে কীভাবে দেখি ?
এটা তো ঠিক যে মানুষ হিসেবে আমরা তখনই মানুষ, যখন সবরকম দায়বদ্ধতাকে ধারণ করেও চিত্তের স্বাধীনতা বা মানবিক সত্ত্বাকে উন্মুক্ত প্রসারতায় মেলে ধরতে পারি। কিন্তু সমস্যা হলো চিত্তের স্বাধীন চাওয়াটা নিয়েই। চিত্তের এই স্বাধীনতা যদি হয় ব্যাপক ক্ষমতাশালী হয়ে গরীব দেশের ত্রানের টিন মেরে দেয়া বা বিশাল অংকের ঘুষের বিনিময়ে প্রভাবশালী খুনিকে পার পাইয়ে দেয়া বা রাষ্ট্রিয় সম্পদ নির্বিচার লুটপাট করা, তাহলে আর মানবিক মূল্যবোধ নিয়ে ক্যাচাল না করে জঙ্গলবাসী হওয়াই উত্তম। বোয়াল মাছের মতো এই যে সবকিছু গিলে খাওয়ার প্রবণতা, এটা হয়তো মানুষের আদিম প্রবৃত্তি, যাকে পশুপ্রবৃত্তি বলা হয়। এটা কি সভ্যতার সেই চেইন বিশ্লিষ্ট হওয়া নয় ? সামাজিক বিধানের চেইন প্রত্যক্ষভাবে ভেঙে ফেলা মানে তো আর প্রচলিত সিস্টেমকে ধারণ করে শিল্পের বিদ্রোহ নয়। অর্থাৎ যিনি এটা ভাঙলেন তিনি তো শিল্পসংস্কৃত ননই, সভ্যও নন এমনকি নিজের প্রতি সৎও নন। তাহলে এর অর্থ কী দাঁড়ালো ? আর এরাই যদি প্রচলিত সিস্টেমের দায়িত্বপ্রাপ্ত নিরাপত্তারক্ষী হন তাহলে শিল্প সংস্কৃতি এসব ধানাইপানাই কথাবার্তা থামিয়ে সরাসরি বলে দেয়া যায় যে আমাদের পুনঃপ্রত্যাবর্তন হচ্ছে সেই জঙ্গলের দিকেই। ইচ্ছে হলেই নেংটো হয়ে যে কেউ রাস্তায় নেমে গেলেও বিস্ময়ের কিছু থাকবে না। যদিও এই বিস্ময়ও আর বাকি থাকে নি। দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হয়ে আমাদের প্রাক্তন কোন সংসদ সদস্য যখন মুক্ত হওয়ার কূটকৌশল হিসেবে নিজেকে ভারসাম্যহীন প্রমাণ করতে পরিধানের লজ্জা-নিবারণকারী পোশাক নির্বিকার ঝেড়ে ফেলে দিগম্বর বনে যান। সভ্য দর্শক হিসেবে অধোবদন হয়ে থাকলেই কি আমাদের দায় শেষ ? কীভাবে ভুলে যাই আমরা, এই দিগম্বর এরাই আমাদের মনোনীত প্রতিনিধি ! এরাই আমাদের প্রতিনিধিত্ব করেন। তখন আমাদেরও আর দিগম্বর হবার বাকি থাকে কি ?
প্রাকৃতিক প্রাণী হিসেবে আমরা লোভ বা মোহের উর্ধ্বে নই মোটেও। কিন্তু এই লোভকে যৌক্তিক পর্যায়ে এনে শালীন উপস্থাপনেই নিশ্চয় সামাজিক মানুষ হিসেবে অন্য প্রাণী থেকে আমাদের পার্থক্য। কেবলমাত্র আরেকটু চাই আরো চাই এই সর্বগ্রাসী লোভ যে শেষ পর্যন্ত কী করুণ পরিণতি ডেকে আনে, এই বোধকে উপজীব্য করে ‘একজন মানুষের কতটুকু জমি দরকার’ শিরোনামের গল্পটি লিউ তলস্তয় সেই কবে লিখেছিলেন। অথচ এখনো এর সমকালীনতার আবেদনে একটুও চিড় পড়েনি। এটা কি জাতি হিসেবে মানুষের লজ্জার খতিয়ান, না কি ব্যক্তি বিশেষের চিরায়ত লোভের সাহিত্য দলিল তা পার্থক্য করার প্রয়োজন আছে মনে হয় না। অর্থ সম্পদ নিয়ে অনর্থের নানান কাহিনী নানাদেশে নানান সময়ে নানাভাবে সৃষ্টি হয়েছে, হচ্ছে এবং আগামীতেও যে হতে থাকবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু সকল অনর্থের মূল এই যে অর্থ, আসলেই কি অর্থই অনর্থের মূল ?
অর্থ ছাড়া অর্থবহ কোন কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব, এটা যারা বিশ্বাস করেন তারা হয়তো নির্দিষ্ট ও নগন্য কোন ব্যতিক্রমকে সিদ্ধ করেন। কিন্তু গড়পড়তা এবং সার্বিকভাবে অর্থ ছাড়া কোন কাজ সুষ্ঠুভাবে বা এমনিতেই সম্পন্ন হতে পারে তা কি পাগলেও বিশ্বাস করবে ? না কি চলমান বাস্তবতা সাক্ষ্য দেবে ? কখনোই তা সম্ভব নয়। জীবনের প্রতিমুহূর্তে অর্থসংশ্লিষ্টতা বা অর্থের প্রতি আমাদের অনিবার্য নির্ভরশীলতাকে সভ্যতার স্বাভাবিক উত্থান হিসেবেই ধরে নিতে পারি আমরা। সামাজিক ও পারস্পরিক অভিন্ন বিনিময় মাধ্যম হিসেবে অর্থের এই নিরঙ্কুশ অবদানকে মতিভ্রম না হলে খাটো করে দেখার কোন অবকাশ নেই। বিনিময়নির্ভর সামাজিক ব্যবস্থায় এই অর্থনির্ভরতা অত্যন্ত স্বাভাবিক ও কাঙ্ক্ষিতও। কিন্তু অর্থনির্ভরতা আর একমাত্র অর্থনির্ভরতা কি এক হলো ? যখন বলা হয় আমাদের জীবনে অর্থনির্ভরতা প্রধান অনুষঙ্গ, তখন জীবনযাত্রার আরো অনেক অনেক নির্ভরতার মধ্যে অর্থনির্ভরতা অন্যতম এবং প্রধান অনুষঙ্গ। এ অনুষঙ্গ না থাকলে এক মুহূর্তও চলে না আমাদের। সাথে অন্যান্য অনুষঙ্গও থাকতে হবে। যা না হলে জীবনটা অর্থহীন হয়ে যায়। তাই আমাদেরকে প্রধান অনুষঙ্গ হিসেবে অর্থ উপার্জন তো অবশ্য করতে হবেই, তবে অন্য অনুষঙ্গগুলোকে বাদ দিয়ে নয়। কিন্তু যখনই একমাত্র অনুষঙ্গ বলা হয়, তখন অন্য অনুষঙ্গগুলো পুরোপুরি অস্বীকার করে কেবলমাত্র অর্থনির্ভরতাকে সুনির্দিষ্ট করে দেয়া হয়। অর্থাৎ এখানে অর্থটাই সবকিছু, অন্যকিছু কিছুই না। এখানেই অর্থের কাছে আর সব কিছুই অর্থহীন দিগম্বর হয়ে যায় !
তাহলে আমাদের সমাজ সংস্কৃতি সাহিত্য কৃষ্টি ঐহিত্য ইতিহাস মানবিকতা সমাজ সংসার পরিবার ভাবনা দর্শন রাষ্ট্র সংঘ আদর্শ ইত্যাদি সবকিছুই কি অর্থের কাছে অর্থহীন দিগম্বর হয়ে গেলো ? চারদিকে তাকালে কী দেখি আমরা ? অর্থের জন্য শিশুখাদ্যে বিষ মেশানো হয়, দুধের সংকটে অর্থনির্ভর অবৈধ ফায়দা লুটতে তীব্র ক্ষতিকর উপাদানমিশ্রিত ভেজালদুধ তৈরি ও বাজারজাত করা হয়। কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বাজার অস্থিতিশীল করে দ্রব্যমূল্যে অগ্নিঘোড়ার দাবানল ছুটিয়ে দেয়া হয়। বিভিন্ন উদ্যান থেকে জীবনদায়ী সবুজ বৃক্ষ উৎপাটন করে নেয়া হয়, ভূমিদস্যুদের কালো হাতের থাবায় বেঁচে থাকার অনিবার্য উপাদান মুক্তবাতাসের উৎসস্থল খোলাজায়গাগুলো একে একে হারিয়ে যায়। খুনির সপক্ষে চলে যায় বিচারালয়ের অলৌকিক রায়। রাতারাতি ভোলপাল্টে রাজাকার হয়ে যায় মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধা হয়ে যায় রাজাকার। কসাইয়ের কড়ির কাছে বিক্রি হয়ে যায় বুদ্ধিজীবীর মাথা, আজীবন ভণ্ডামী গুণ্ডামী করা অকস্মাৎ ধার্মিকের ভেকধারী হয়ে যায় জনপ্রতিনিধি, জীবনদাতাকে চড়ানো হয় ফাঁসিতে আর ফাঁসির আসামী ছুটে দাওয়াতের আমন্ত্রণে। রাজনীতির নামে ব্যবসা, ব্যবসার নামে রাজনীতি। পুরস্কারের নামে ধাপ্পাবাজী, মিডিয়ার মামদোবাজী, ধড়িবাজ অমানুষকে ফেরেশতা বানানোর দড়াবাজি, সাহায্যের নামে লুটপাট, ইত্যাদি ইত্যাদি প্রতিটা জায়গায় প্রতিটা মুহূর্তে এই যে এসব দিগম্বরবাজী চলছে, কেবল অর্থলিপ্সু জঘন্য ভানুমতির খেল ছাড়া আর কিছু কি আছে সেখানে ? এইসব রাতকে দিন করা তোঘলকি কর্মকাণ্ডে যারা জড়িত, এরা কেউ অর্থনৈতিকভাবে অভাবগ্রস্ত নয়। এদের অর্থের অভাব নেই। কিন্তু কেবলমাত্র অর্থনির্ভরতার দেউলিয়াত্ব এদেরকে আর মানুষ থাকতে দেয়নি, মানুষ নামের অর্থপিশাচ বানিয়ে ছেড়েছে। এদের কোন মা-বাপ থাকে না, ভাই-বোন বা সন্তান-সন্ততিও থাকে না। এরা কেউ কাউকে বিশ্বাস করে না, করতে পারে না। আসলে এদের কিছুই থাকে না, শুধু অর্থ ছাড়া। এদের বিবেক বুদ্ধি থেকে কোন মানবিক ভাবনা ঝরে না, ঝরে কেবল কাগুজে টাকা। একটা সমাজ বা রাষ্ট্রের সংস্কৃতি যখন এই কেবলমাত্র অর্থনির্ভরতার দিগম্বর সংস্কৃতিতে পাল্টে যেতে থাকে, ওটা আর মানুষের ভূখণ্ড থাকে না, পিশাচরাজ্য হয়ে যায়। এই পিশাচরা মানুষের রক্ত চোষে অর্থের খোঁজে। তাদের যে আরো চাই। এই চাওয়ার শেষ নেই। অনেক রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের এই প্রাণপ্রিয় মাতৃভূমি তবে কি ধীরে ধীরে পিশাচরাজ্যে পরিণত হচ্ছে !
পিশাচ নামের কোন বাস্তব প্রাণীর অস্তিত্ব আদৌ আছে কি ? মানুষের আত্মকেন্দ্রিক স্বার্থপরতার ভয়াবহ অবস্থার প্রতীকী অভিযোজন হিসেবে এই মিথ নির্ভর পিশাচ উপমাটা ব্যবহার করা হয়ে থাকে। পশ্চিমা লেখক ব্রাম স্টোকারের বিখ্যাত পিশাচ কাহিনী ‘ড্রাকুলা’ বইটি বেরোবার আগে পিশাচ মিথ কতোটা জনপ্রিয় ছিলো আমার জানা নেই। ইদানিং আমাদের দেশে হলিউডের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন হরর মুভির জনপ্রিয়তা দেখলে মনে হয় আমাদের উঠতি প্রজন্মের বিরাট একটা অংশ এই হরর নেশায় যেভাবে বুঁদ হয়ে আছে, তাতে বুঝি এরা মানুষ হওয়ার চেয়ে পিশাচ হওয়াটাকেই আদর্শ হিসেবে ধরে নিচ্ছে। তবু এই অনুমিত ধারণার উপর কোন মন্তব্য করা সাজে না হয়তো। এই পিশাচ মিথ অনুযায়ী যে মানুষের শিরায় একবার পিশাচের দাঁত বসে যায়, সেও ধীরে ধীরে পিশাচে পরিণত হতে থাকে এবং অন্য কোন মানুষের রক্তের নেশায় সেও ছুটতে থাকে। যে মানুষ একবার পিশাচ হয়ে যায় তার আর মানুষে প্রত্যাবর্তন ঘটে না। অর্থাৎ মানুষ পিশাচ হতে পারে, কিন্তু পিশাচ কখনো আর মানুষ হয় না। এটার প্রতীকী অর্থ খুব উল্লেখযোগ্য। কেননা আমরা চার পাশে এটা বিস্তর ল্ক্ষ্য করি যে, যে মানুষটি একটু একটু করে অর্থপিশাচে পরিণত হয়ে গেছে, সে হয়তো অন্য কোন পরিণতির দিকে এগিয়ে যায়, কিন্তু মানুষের অবস্থানে তাকে আর ফিরতে দেখি না আমরা।
এখন তাহলে উপায় ? এ থেকে কি আমাদের পরিত্রাণ নেই ? যে উন্মত্ত মাদকতায় আমরা আজ ভেসে চলেছি, আমরা যে আসলে কী চাই সেই ভেদবুদ্ধিও বুঝি লুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। আর লুপ্ত বিবেকের অর্জনে কোন মানবিক বোধ থাকে না নিশ্চয়ই। আমাদের এই বিবেকবোধ লুপ্তির আগে অন্তত একটিবার কি নিজেদের দিকে ফিরে তাকানোর সময় পাবো না ? আয়নায় আপন চেহারার ভাঁজে ভাঁজে ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠা বলিরেখাগুলো ছুঁয়ে ছুঁয়ে একবারও কি ভাবতে পারি না, আমাদের এতো সব অর্জন উপার্জন আসলে কার জন্যে ? আমাদের ভোগ বা উপভোগের সামর্থ কতটুকু ? মানুষের ব্যক্তি প্রয়োজনের সীমানা বাড়াতে বাড়াতে কতটুকু বাড়াতে পারি আমরা ? অথবা একমাত্র অর্থনির্ভরতা কাটিয়ে আমাদের প্রয়োজনকে কতোটা সৃজনশীল মানবিকতায় বহুমাত্রিক করে তুলতে পারি ? নির্দয় বণিকবৃত্তি আমাদের জীবনটাকে পুরোপুরি গিলে ফেলার আগেই এ প্রশ্নগুলো নিজের কাছে ছুঁড়ে দেয়া জরুরি নয় কি ?
আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাটাও যে স্বার্থান্ধ বণিকবৃত্তির কাছে পুরোপুরি সমর্পিত হয়ে গেছে এর পেছনেও যে শুধুই অর্থনির্ভরতার দিগম্বর তত্ত্ব দারুণভাবে কার্যকর তাও কি বলার অপেক্ষা রাখে ? শিক্ষা মানেই যে মানবিকতার চর্চা, উন্নয়ন এবং উৎকর্ষতার লক্ষ্যাভিমুখিনতা, তাও বদলে গেছে আজ। বদলে গেছে মানুষ গড়ার চিরায়ত মানবিক দর্শন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো হয়ে যাচ্ছে কতকগুলো মানুষরূপী যন্ত্রতৈরির প্রতিযোগিতামূলক ট্র্যাক। কার আগে কে বস্তুগত লক্ষ্যকে ছুঁতে পারবে তার ঘোরদৌঁড়ে সবল ও সামর্থ করে তোলার এ সিস্টেমে মানবিকবৃত্তিগুলোর চর্চা আজ এতো চরমভাবে অবহেলিত হয়ে যাচ্ছে যে, আমাদের আগামীও করে খাওয়া নয়, কেড়ে খাওয়ার সংস্কৃতিতে রূপান্তরিত হয়ে যাচ্ছে দ্রুত। শুধুই অর্থনির্ভরতার দিগম্বর তত্ত্বে অভ্যস্ত করে তোলার চলমান এই সংস্কৃতির কাছে একে একে অচল ও বাতিল হয়ে যাচ্ছে মানবিক মূল্যবোধ। এর প্রভাব সমাজের আনায়-কানায় খুব ভালোভাবেই প্রতিফলিত হচ্ছে আজ। পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাষ্ট্রনৈতিক বন্ধনে এই প্রভাব আর্সেনিক বিষের মতো যে অনিবার্য বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত করে আমাদেরকে এক অস্থির ট্র্যাজিক পরিণতির দিকে ক্রমশই নিমজ্জিত করে ফেলছে, তা সকলেই বুঝি। অথচ কী আশ্চর্য, কেউ তা নিয়ে তেমন ভাবিত হচ্ছি কিনা তাও বুঝা যাচ্ছে না। এটাও যে দিগম্বর তত্ত্বের অনিবার্য প্রভাব, তা কি বুঝতে পারছি আমরা ?
মানুষ তার কৈশোরকে অতিক্রম করে যেতে পারে না কখনোই। কৈশোরিক স্বপ্নের উপাদানগুলোই আসলে মানুষকে সারাজীবন ধাবিত করে। প্রতিটা মানুষের বুকেই একটি করে কিশোর বাস করে। তাই যার কৈশোর যতো সমৃদ্ধ, তারই ততো সমৃদ্ধ মানুষ হিসেবে গড়ে উঠার সম্ভাবনা প্রবল থাকে। যন্ত্রময় শিক্ষাব্যবস্থা দিয়ে আসলে আমরা যারা আগামীর যন্ত্রময় মানুষ বানানোর গোটা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ফেলছি, তারা কি একটিবারও নিজের কৈশোরের দিকে ক্ষণিকের জন্যও মুখ ফেরাতে পারি না ? হয়তো অনেক অনাহুত জটিলতারও অবসান হয়ে যেতে পারে এতে। এই অস্থিরতার ঘোর লাগা চোখে সেই কৈশোরে ডুব দিলে ভেসে উঠে সেই সব প্রবীন শিক্ষকদের কষ্টময় মুখগুলো। তখন তো আর মুখে মাখা কষ্টগুলো বুঝি নি। এখন স্মৃতির ডায়েরীর পাতা উল্টালেই সে সব মুখে যে কষ্টের জলছাপ স্পষ্ট হয়ে উঠে, সে কি শুধুই তাঁদের নিজেদের যাপিত কষ্টেরই ছাপ ? আর কিছু কি নেই ? পাখির ছানার মতো আমাদের কচি কচি মুখগুলোর দিকে তাকিয়ে হয়তো কোন ভয়াবহ আগামীর অশনি সংকেতে কেঁপে উঠেছিলেন তাঁরা। আর সেজন্যই হয়তো মানবিক বোধগুলোকে জীইয়ে রাখার সর্বাত্মক প্রয়াসও নিতে কার্পণ্য করেন নি, যা হয়তো একদিন সব অমঙ্গল প্রতিরোধক হয়ে মানুষের মানবিক অর্জনকে রক্ষা করবে সে আশায়। আহা, তাঁদের সীমিত সামর্থ দিয়ে পাঠের পাশাপাশি যে মানবিক বোধগুলোকে উস্কে দিতেন গল্পে গল্পে, সেগুলোই যে আসল পাঠ ছিলো, স্মৃতি আক্রান্ত হয়ে আজ মর্মে মর্মে তা অনুধাবন করি। মানুষের লক্ষ্য কী ? তার অর্জনের উদ্দেশ্যই বা কী ? কিংবা তার চাওয়ার সীমান্ত কতোটা বিস্তৃত ? এইসব জটিল তত্ত্ব না বুঝলেও কেবল গল্পের ছলে যে মানবিক দর্শনগুলোকে ছোট ছোট কিশোরমনে গেথে দেয়া হয়েছিলো একদিন, তাই যেন বিশাল মহীরুহ হয়ে কী নিবিড় ছায়া দিয়ে আগলে রাখতে চাইছে ! সে কি শুধুই গল্প ছিলো ? সেই সব গল্পের হয়তো দেশ কাল নেই, চিরায়ত। বাস্তবতা নেই, তবু গভীর সত্য। সে রকম একটা গল্পই আজও কত বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে চিরায়ত মানবিক বোধকে নাড়া দিয়ে যাচ্ছে !
এক ধনকুবের ব্যক্তি অর্থ উপার্জন করতে করতে অর্থের মোহে এতোটাই ডুবে গিয়েছিলেন যে, অর্থের বাইরে আর কোন চিন্তাই তাকে সামান্যতম নাড়া দিতো না। তার পরিবার পরিজন কেবল নামেই ছিলো। কিন্তু তার প্রতিদিনের রুটিন ছিলো, ঘুম থেকে উঠেই সারাজীবনের অর্জিত অর্থগুলোকে নিয়েই মেতে থাকা, একটু নেড়েচেড়ে দেখা আর এগুলোর নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ করা। প্রাণের চাইতেও প্রিয় তার অর্থসম্পদগুলোকে সবার অগোচরে নিরাপদে রাখার জন্য বাড়িতে ভূগর্ভস্থ যে মশা-মাছিরও অগম্য অত্যাধুনিক কোঠুরিটি বানিয়েছিলেন, তার চাবি একমাত্র তার কাছেই থাকে। এর খবর আর কাউকেও দেন নি তিনি। রোজকার রুটিন অনুযায়ী সেদিনও ঘুম থেকে উঠেই প্রথমেই চললেন তাঁর অর্থের পাহাড়ের দিকে। আগজীবনে প্রচুর অর্থকষ্টে বড় হওয়া এই ধনকুবের ব্যক্তি অর্থের প্রয়োজন ও গুরুত্ব খুব ভালো করেই চিনে গেছেন। আন্ডারগ্রাউন্ড ভোল্টরুমের গোপন দরজা খুলে একটার পর একটা সুরক্ষিত দরজা পেরিয়ে সর্বশেষটা খুলেই ভেতরের সম্পদের পাহাড়ের বিশালতা আর দর্শনজনিত মাদকতায় যথারীতি আবেগমথিত তিনি কী ভীষণ তৃপ্তি আর অতৃপ্তি নিয়ে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন, তখন আর কিছুই মনে থাকে না তার। সবকিছু ভুলে বেশ কিছুক্ষণ এখানেই পড়ে থাকেন। হাত বুলিয়ে বুলিয়ে নাকে মুখে বুকে ছুঁইয়ে ছুঁইয়ে নেশাগ্রস্তের মতো এগুলোর স্পর্শ উপভোগ করেন তিনি। তারপর মনোবিকলন স্তিমিত হয়ে এলে একটা অব্যাখ্যাত তৃপ্তি নিয়ে ফিরে চলেন। কিন্তু বন্ধ দরজায় এসেই হঠাৎ আবিষ্কার করলেন তার সাথে চাবিটা নেই ! আতিপাতি খুঁজেও এতোদিনকার অভ্যস্ত চাবি পেলেন না। পাবেন কী করে ! আবেগের তীব্রতায় ঢুকার প্রাক্কালেই যে চাবিটা দরজার বাইরের কীহোলে যে অজান্তেই আটকে রেখে এসেছেন সেটাই তো তার মনে নেই। তার নিজের গড়া সুরক্ষিত এই দুর্গ থেকে যে চাবি ছাড়া রেরুনোরও কোন উপায় তিনি রাখেন নি। তার প্রাণপ্রিয় অর্থসম্পদের পাহাড়ে অজান্তে এবার তিনি নিজেই তার ভাগ্যের বন্দী হয়ে গেলেন। খাবার নেই, পানি নেই বা অন্য কোন অনুষঙ্গও নেই। আছে কেবল সীমাহীন অর্থ আর অর্থ ! এই অর্থ সবকিছুরই নিশ্চয়তা দেয় ঠিকই। অর্থের ক্ষমতাও অসীম। কিন্তু সেই অর্থের নিজের তো কোন ক্ষমতা নেই। তার ক্ষমতা তো শুধু বিনিময় মাধ্যম হিসেবেই। এটাই যে অর্থের সবচেয়ে বড় অক্ষমতা, তা তো এই মোহগ্রস্ত ধনকুবের ভুলেই গিয়েছিলেন। জীবনের চরম সন্ধিক্ষণে এসে হয়তো বুঝতে পারলেন ঠিকই, কিন্তু তাঁর ফেরার রাস্তা যে বন্ধ সব !
কদিন পর যখন তাকে আবিষ্কার করা হলো, দেখা গেলো নিজের গড়া অর্থের পাহাড়ের মধ্যে তার লাশ অসহায় পড়ে আছে। মৃত্যুর আগে প্রতিটা মানুষই হয়তো একেকজন মানবিক দার্শনিক হয়ে যায়। তিনিও তার সর্বশেষ একটি কাজ দিয়ে অনাগত ভবিষ্যতের জন্য সে প্রমাণই হয়তো রেখে গিয়েছিলেন। দাঁত দিয়ে আঙুল ছিঁড়ে রক্তের অক্ষরে ধবধবে টাকার গায়ে তাঁর শেষ মনোদর্শনটাই হয়তো জীবনের বিনিময়ে লিখে গিয়েছিলেন, যা তিনি এর আগে কখনোই বুঝার সময় করে উঠতে পারেন নি। ‘আহা ! যার কাছে অর্থ নেই, তার অবস্থা শোচনীয়। কিন্তু যার কাছে অর্থ ছাড়া আর কিছুই নেই, তার অবস্থা আরো শোচনীয়...।’
(১৪/১১/২০০৮)
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment