Monday, December 8, 2008
@ একটি বিপজ্জনক গবেষণা এবং মনোসমীক্ষণিক বাস্তবতা
একটি বিপজ্জনক গবেষণা এবং মনোসমীক্ষণিক বাস্তবতা
রণদীপম বসু
‘মানুষের ভেতরের রূপ বা প্রকৃত চেহারা দেখতে চাও ? তাহলে প্রচণ্ড রাগিয়ে দাও তাকে !’
উক্তিটা কার মনে নেই। তবে মানুষের চেহারা দেখার এমন চমৎকার ও সহজ (?) একটা সুযোগকে সেই ছাত্রবেলার বালখিল্য পরিপক্কতা দিয়ে পরীক্ষণযোগ্য করতে গিয়ে প্রাণটাই যে খোয়াতে বসেছিলাম তা ভাবলে এখনো রোম খাড়া হয়ে উঠে। স্যাম্পল হিসেবে যাকে বেছে নিয়েছিলাম সেই আপাত সরল বন্ধুটি ক্রুদ্ধতার চূড়ান্তে ওঠে হাতের কাছে যোগ্য কিছু না পেয়ে বসার চেয়ার তুলে তেড়ে এসে যেভাবে আঘাত করেছিল, দরজার চৌকাঠে বাড়ি না খেলে চেয়ারের পায়ার বদলে আমার মাথাটাই যে দু’ভাগ হয়ে যেতো তা বুঝতে বাকি ছিলো না। বন্ধুটি তো খারাপ ছিলো না, খারাপ ছিলাম আমিই। একইভাবে রূপসী বান্ধবীর চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে জ্বলন্ত সিগারেট হাসতে হাসতে তার হাতের কব্জিতে চেপে ধরতেই ভয়াল জান্তব চিৎকারে প্রচণ্ড অবিশ্বাস নিয়ে সেই যে পেছনমুখো হয়ে পালিয়েছিলো আর কখনো এমুখো হয়নি। সম্ভবত তার এ ধারণা বদ্ধমূল হয়েছিল যে, চাইলে আমি মানুষও খুন করে ফেলতে পারি। এরকম ব্যর্থ পরীক্ষণের তালিকা দীর্ঘ আমার। এটা কি ছিটগ্রস্ততা ? একেই কি সিগমুন্ড ফ্রয়েড লিবিডো (libido) বা কামাবেগ আক্রান্ত মনোবীক্ষণিক গূঢ়ৈষা (complex) বলেছেন ? সেই থেকে বয়েস আরেকটু ভারিক্কি হলেও পরীক্ষণ-প্রবণতাটা যে আমাকে আজো ছেড়ে যায় নি, তাও কি অবচেতন মনের অহং বা ইগোতে (ego) থেকে যাওয়া অবদমিত কোন বিশেষ ইচ্ছার বিকল্প প্রকাশ ? মনঃসমীক্ষণের এইসব জটিল মারপ্যাঁচ না বুঝলেও কোন কোন ক্ষেত্রে ফ্রয়েডের কিছু বিষয়কে অনুধাবনের চেষ্টা করি, যদিও বরাবর ব্যর্থই হই।
এরকমই সর্বশেষ মনোসমীক্ষণনির্ভর যে আনাড়ি পরীক্ষণটি সচলায়তনে প্রয়োগ করলাম তার লেজেগোবরে ফলাফলটুকু প্রকাশের আগে খানিকটা ভূমিকা দেয়া জরুরি বৈ কি।
মনোসমীক্ষণবাদের জনক সিগমুন্ড ফ্রয়েড’কে নতুন করে আর চিনিয়ে দেয়ার দরকার নেই। স্নায়বিক রোগের খ্যাতনামা চিকিৎসক হিসেবে সে সময়কার হিস্টিরিয়া রোগীদের নিয়ে পূর্বসূরী ডঃ যোসেফ ব্রিউয়ারের সম্মোহন পদ্ধতির গবেষণা সূত্র ধরে ব্যাপক গবেষণার মাধ্যমে তিনি এ সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, এটা এক ধরনের মনোবৈকল্য যা মূলত ব্যক্তির তীব্র অবদমিত ইচ্ছার বিকৃত বহিঃপ্রকাশ মাত্র। ১৯০৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মনোবিশ্লেষণ সম্পর্কে তাঁর মতবাদ উপস্থাপন করার আমন্ত্রণ পেয়ে আমেরিকায় মনোসমীক্ষণ বা মনোবিশ্লেষণ প্রসংগে যে পাঁচটি গবেষণাপত্র পাঠ করেন সেখানে তিনি স্পষ্ট করে বলে দেন যে, মানুষের ব্যক্তিত্ব গড়ে উঠে তার বাস্তবায়ন না হওয়া অবদমিত ইচ্ছেগুলোর বিকল্প উন্মেষ হিসেবে। চিরবিস্ময় এই মনোজগতের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়াজাত উপসর্গগুলোই মূলত তার ব্যক্তিত্ব। আর যে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যটি অবগত হয়ে আমাদেরকে নেড়েচেড়ে বসতে হয়, তা হলো সবকিছুর মূলে রয়েছে আমাদের অবচেতনময় যৌনস্মৃতি। বিষয়টিকে আরও সরাসরি উপস্থাপন করে তিনি বলেন-
‘মনঃসমীক্ষামূলক গবেষণায় বিস্ময়করভাবে বারংবার দেখা গেছে যে রোগীর মনোরোগের উপসর্গগুলির যোগসূত্র ধরে তার উৎসে মিলেছে রোগীদের যৌনজীবনের স্মৃতিতে। এই পদ্ধতির সাহায্যে জানা যায় রোগসৃষ্টিকারী আকাঙ্ক্ষার আবেগের ব্যাপারে নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই অসুস্থতার পিছনে যার প্রভাব সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ তা হলো যৌন অস্বস্তি।
এই কথাগুলি এভাবে আমি জোরের সঙ্গে বললেও তা যে স্বেচ্ছায় কেউ বিশ্বাস করবেন না তা আমি জানি। এমন কি যে-সব কর্মীবৃন্দ আমার এই মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা সম্পাদনে সহায়তা করে থাকেন তাঁরাও ভাবতে পছন্দ করেন- যৌন উপাদানগুলির ভূমিকাকে আমি অতিরঞ্জিত করে দেখাচ্ছি। আমাকে তাঁরা প্রশ্ন করে থাকেন- অন্য ধরনের মানসিক উত্তেজনা থেকে একই রকম অবদমন ও বিকল্প-সৃষ্টির ঘটনা ঘটে না কেন ?
উত্তরে আমি এইটুকু মাত্র বলতে পারি যে- এমনটা কেন যে ঘটে না আমি তা জানি না, যদিও এমনটা ঘটলে তাতে আমার কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে যে তেমনটি ঘটে না। বড়জোর দেখা যায় অন্যান্য উপাদানগুলি যৌন উপাদানগুলির কার্যক্রমকে সমর্থন যোগাতে পারে, কিন্তু নিজেরাই তার বিকল্প হয়ে উঠতে পারে না।’
তাঁর এ বক্তব্যে আমরা যারা এই ভেবে আশ্বস্ত হয়ে উঠছি যে যাক্, এ তো কেবল যারা রোগী হিসেবে চিহ্ণিত মানসিক বৈকল্যে আক্রান্ত তাদের সম্পর্কেই প্রযোজ্য, তাদের আশ্বস্তি তৃপ্তিকর পর্যায়ে পৌঁছানোর আগে ফ্রয়েডের এই কথাটাও শুনে রাখা জরুরি-
‘স্নায়ুরোগে এমন কোনো মনস্তাত্ত্বিক উপাদান নেই যা সুস্থ ব্যক্তির মধ্যেও সমানভাবে পাওয়া যায় না। অথবা ইয়ুং-এর ভাষায় বললে- মনোরোগীরা সেই একই জটিলতার কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ে, যেগুলির সঙ্গে আমাদের মতো সুস্থ ব্যক্তির সংঘাত ঘটে। এই সংঘাতের পরিণতিতে সুস্বাস্থ্য, স্নায়ুরোগ, অথবা জীবনে সফল হওয়া- তা নির্ভর করে দ্বন্দরত বিপরীত শক্তিগুলির তুলনামূলক ক্ষমতা অর্থাৎ পরিমাণগত বিচারের ওপরে।’
অর্থাৎ, ফ্রয়েডের মতে আমাদের আচার-আচরণ ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া মোট কথা গোটা ব্যক্তিত্বটা যেভাবে গড়ে ওঠে তার পেছনেও সেই প্রভাব একইভাবে ক্রিয়াশীল থাকে যা স্নায়ুরোগীদের ক্ষেত্রেও ঘটে থাকে।
প্রাসঙ্গিকতা বিচারে ফ্রয়েডের এই মনোবীক্ষণিক বক্তব্য যদি বুঝতে ভুল না করে থাকি তাহলে আমরা হয়তো এরকম একটা সিদ্ধান্ত আপাতভাবে নিয়ে নিতে পারি যে, মানুষের বাহ্যিক প্রণোদনা বা যেকোনো সংঘাতমূলক পরিস্থিতিতে সে যে-প্রকৃতির সারা দিয়ে থাকে তা মূলত তার মনের গভীরে প্রোথিত যৌন অস্বস্তির প্রতিরূপ। এই যৌন অস্বস্তি খুব সরাসরি বা সহজ-প্রকাশ্য নয় তবে বাহ্যিক কোন কার্যকর প্রণোদনা তৈরি করা গেলে তা হয়তো তার আচরণের মধ্য দিয়ে প্রকাশ ঘটতেও পারে। আমার প্রয়োগকৃত পরীক্ষণসূত্রটা এখানেই নিহিত। কেন এ পরীক্ষণ তার ব্যাখ্যায় পরে আসছি। তার আগে কীভাবে তা প্রয়োগযোগ্য হয়ে উঠলো এর ব্যাখ্যায় যাই।
বাংলা কমিউনিটি ব্লগে লেখক ফোরাম হিসেবে সচলায়তন নিশ্চয়ই তুলনামূলকভাবে একটি রুচিশীল ও জনপ্রিয় ব্লগ। বেশ কয়েকটা ধাপ অতিক্রম করে এসে সচল হয়ে এখানে যারা ব্লগিং করেন তাদের সামাজিক সচেতনতা ও রুচিবোধের উৎকর্ষতা সন্দেহাতীতভাবেই প্রমাণীত। এখানকার লেখক ও পাঠকদের দৃষ্টিভঙ্গিও প্রগতিশীল, স্বাধীন এবং বিশ্লেষণাত্বক যুক্তিবোধসম্পন্ন। খুব স্বাভাবিকভাবেই এই ফোরামকে আমাদের সংবেদনশীল জনগোষ্ঠীর প্রতিভু হিসেবে খুব ক্ষুদ্রায়তনের একটা নমূনা রাষ্ট্র ধরে নিতে পারি। ফ্রয়েড কথিত মানুষের আদি প্রবণতা তার অহং-এর যৌন অস্বস্তিতে নাড়া দিতে পারলে যে প্রতিক্রিয়া দৃশ্যমান ও গ্রাহ্যময় হয়ে উঠবে তাই হয়তো একটা জনগোষ্ঠীর চেতনার স্বরূপটাকে প্রতিবিম্বিত করবে। কিন্তু কীভাবে নাড়া দেয়া যায় ? ফ্রয়েড পড়ছি আর ভাবছি। হঠাৎ করে তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়া হিসেবে সচলায়তনে পোস্ট করা রম্য-রচনাটির (ছিদ্রান্বেষণ) মন্তব্যে চোখ বুলাতে বুলাতে পরিকল্পনাটি দানা বেঁধে গেলো মাথায়। যেই ভাবা সেই কাজ। বহুকাল আগে শুনা আদিরসাত্মক একটি কৌতুকের বর্ধিত গল্পরূপ দেয়া। স্যাটায়ার হিসেবে যেটুকু ড্রাফট করলাম তাতে সবাই মজা পাবে, কিন্তু উদ্বিষ্ট লক্ষ্য হিসেবে রুচিকে নাড়া দেয়ার মতো যৌন অস্বস্তি জাগানো তাতে সম্ভব নয়। তা করতে হলে যা করতে হবে, তাতে আমার নিজের রুচিবোধই সায় দিলো না। এবং এ কারণে এটাই যে পরীক্ষণযোগ্য হবে তাতেও কোন সন্দেহ রইলো না। কী করি এখন ! শেষে নাক মুখ খিঁচে এমন চারটি বাক্য শেষে জুড়ে দিলাম যেখানে কেবল গর্হিত অবমাননাকর রুচিবৈকল্যই প্রকাশ পায়। কিন্তু এটা আমার দ্বারা প্রকাশ সম্ভব নয়। নিজের সাথে নিজের যুদ্ধ চলতে থাকলো।
এক্ষেত্রে যে ঝুঁকিটা সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিলো তা হচ্ছে আমার লেখক-ভাবমূর্তিকে নিয়ে জুয়া খেলা। মন কিছুতেই সায় দিচ্ছে না। নিজের সাথে বোঝাপড়ার জন্য নিজের থেকেই চব্বিশ ঘণ্টা সময় সময় নিলাম। ইতোমধ্যে আমার সব লেখারই প্রথম পাঠক যে-আমার লাইফ পার্টনার, তাকে দেখালাম। সে তো একবাক্যেই প্রতিবাদ করে উঠলো, না, তুমি এটা দিতে পারবে না ! ছি ছি ! এমন লেখা তুমি লিখতে পারো ! কঠিন সংকট ! অবশেষে আবারো সেই ছিটগ্রস্ততা ! জেদী সিদ্ধান্ত, বাস্তবায়ন করবোই। অপেক্ষা প্রলম্বিত করলে হয়তো তা আর বাস্তবায়ন হবে না। পরে না হয় সব সচলদের কাছে মাফ চেয়ে নেবো। ‘ছেঁদা’ নামের ঢিলটা শেষপর্যন্ত ছেড়েই দিলাম। (উল্লেখ্য, পরীক্ষণ শেষে বিতর্কিত বাক্য চারটি ফের মুছে দেয়া হয়েছে।)
এখন সেই গুরুত্বপূর্ণ প্রতিক্রিয়ার পালা। শিরোনামের সাথে যেহেতু বন্ধনীতে ‘বয়স্ক কৌতুকালেখ্য’ শব্দ-বন্ধ জুড়ে দেয়া হয়েছে, তাই ফ্রয়েড কথিত ‘লিবিডো’ প্রভাবে প্রাথমিক প্রণোদনা হিসেবে পোস্টের হিটিং হারে এর প্রভাব পড়ার কথা। এবং হচ্ছেও তাই। দক্ষ প্রযুক্তিক মাহবুব আজাদ হিমু বা এস এম মাহবুব মুর্শেদ বা এরকম অন্য কেউ হলে হয়তো প্রযুক্তির সুযোগ ব্যবহার করে একটা গ্রাফিক্যাল চার্ট তৈরি করে ফেলতে পারতেন। কিন্তু আমি যে কম্পুকানা। তাই দৃষ্টি, স্মৃতি ও বোধ’কে ব্যবহার করে একটা ধারণা পাওয়ার চেষ্টা করলাম। আমার গুরুত্বপূর্ণ ‘ইয়োগা’ সিরিজটাতে এক সপ্তাহেও যে পরিমাণ হিট না হয়, তাও এখানে অতিক্রম করে গেলো এক ঘণ্টায়। এরকম যে হতেই পারে তা আমরা এমনিতেই হয়তো ধারণা করে নিতে পারি অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান দিয়ে। কিন্তু যে বিষয়টি এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, তা হচ্ছে দ্বিতীয় পর্যায়ে। প্রতিক্রিয়ার ধরন।
পোস্টে হিটসংখ্যাকেই যদি পাঠকসংখ্যা বিবেচনা করি তাহলে প্রায় দেড়শ’ পাঠকের আগমন এবং পাঠোত্তর মনোস্তাত্ত্বিক যৌন অস্বস্তিমূলক যে মিথষ্ক্রিয়া ঘটবে তাতে পোস্টের উদ্দেশ্যমূলক নেতিবাচক প্রভাবে অবশ্যই একটা প্রতিবাদী প্রণোদনা সৃষ্টি হওয়ার কথা। সচলের বৈশিষ্ট্যময় পাঠক এবং পোস্টের ধরন অনুযায়ী নগন্য ব্যতিক্রম বাদ দিলে প্রায় সবারই তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হবে এবং তা হয়েছে বলেই তাত্ত্বিকভাবে ধরে নিচ্ছি। অন্যদিকে এই পাঠকদের ক্যাটাগরিতেও ভিন্নতা রয়েছে যাদের প্রতিক্রিয়ার প্যাটার্নও হবে ভিন্ন ভিন্ন। একদল রয়েছেন খুব স্বল্প সংখ্যায় যারা পোস্টের লেখককে ব্যক্তিগতভাবে চিনেন জানেন। তাদের প্রতিক্রিয়া হবে একরকম। অন্য এক দল রয়েছেন যারা লেখককে ব্যক্তিগতভাবে না চিনলেও লেখার ক্যাটেগরি ও ধরন এবং মানগত পূর্ব-ধারণা দিয়ে লেখক পরিচয়ে চিনেন। তাদের প্রতিক্রিয়া হবে অন্যরকম। আর এই দুই দল বাদে বাকি পাঠকরা অন্য ক্যাটেগরিভুক্ত। এদের প্রতিক্রিয়া হবে আরেকরকম। সবারই যে মনস্তাত্ত্বিক সংকট তৈরি হবে তার সবগুলোই হবে ভিন্নমাত্রিক এবং এর প্রকাশও হবে সম্পূর্ণ ভিন্ন ভিন্ন। তবে প্রকাশের ধরনটা যেভাবেই ঘটুক না কেন, কমন যে ফ্যাক্টরটা এখানে প্রদর্শিত হওয়ার কথা তার মৌল সুর হবে একটাই, নেতিবাচক এবং প্রতিবাদমূলক। ধরে নিচ্ছি তা হয়েছেও। কিন্তু এখানে আমরা কীরকম প্রকাশ দেখলাম ? এর লক্ষণগুলো কী ?
গোটা দশেক পাঠক অর্থাৎ আনুপাতিক হারে অতি অল্প সংখ্যক মন্তব্যাকারে সরব প্রতিবাদ করলেন। এদের দু’জন লেখকের ব্যক্তিগত পরিচিত। তাদের প্রতিবাদটাও সে ধরনের কৌশলী হয়েছে। তবে তারা ঠিকই বুঝিয়ে দিলেন যে, যে লেখক এধরনের অরুচিকর চর্চা জানামতে আগে করেন নি বা কখনও করেন না তার দ্বারা এই ঘটনা সংঘটিত হওয়াটা সমীচিন হয়নি। আর বাকিদের অধিকাংশ একই প্রতিবাদ করলেন আরো কঠোরভাবে। এদের সবাইকে আমার স্যাল্যুট জানাচ্ছি, তারা যে তাদের মানসিক দৃঢ়তা দিয়ে একটা অনাচারের সরব প্রতিবাদ করতে পেরেছেন। বাকি যারা তাদের প্রতিবাদমুখরতাকে সরবভাবে সামনে এনে দাঁড় করান নি, তার অর্থ এই নয় যে এরা তা মেনে নিয়েছেন। এদের মধ্যেও উপরোক্ত তিন ক্যাটেগরির পাঠক রয়েছেন। এদের কেউ কেউ হতবাক হয়ে ভেবেছেন, ছিঃ ছিঃ, এই লেখক এরকম পোস্ট দিতে পারলেন ! লজ্জায় সঙ্কোচে হয়তো কষ্ট পেয়ে বা ঘৃণায় কোন মন্তব্য করা থেকে বিরত থেকেছেন। আবার কেউ কেউ হয়তো খুবই যৌক্তিকভাবে আপত্তিকর পোস্ট হিসেবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আপত্তি জানিয়ে এর ভিন্নমাত্রিক প্রতিবাদ প্রকাশ করেছেন যাকে প্রতিবাদের ইতিবাচক ধরন হিসেবে চিহ্ণিত করা যায়। কিন্তু এ সংখ্যা আমার জানা নেই, যা জানতে পেলে বিশ্লেষণ সহায়ক হতো। তবে এরা সবাই-ই প্রতিবাদটা করলেন পরোক্ষ। এই নীরব প্রতিবাদকারীর সংখ্যাই উল্লেখযোগ্যহারে অত্যন্ত বেশি। সে তুলনায় সরব প্রতিবাদকারীর হার প্রায় নগন্য পর্যায়ে চলে এসেছে। এক্ষেত্রে সচলায়তন কর্তৃপক্ষের কর্তৃপক্ষীয় ভূমিকা খুবই ইতিবাচক। তা পাঠকদের আপত্তির প্রেক্ষিতেই হোক বা নিজস্ব পর্যবেক্ষণজনিতই হোক, এমন অনাচারমূলক পোস্ট ব্লগের প্রধান পৃষ্ঠা থেকে সরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত তাদের দায়বদ্ধতা ও সচেতন দায়িত্বশীলতারই ইঙ্গিতবহ। এই পর্যবেক্ষণটাকে একটু ভিন্নমাত্রিক মনোসমীক্ষণবাদী দৃষ্টিতে যদি বিশ্লেষণ করি তবে কী পাই আমরা ?
প্রায় সবাই প্রগতিসচেতন এবং আপামর জনগোষ্ঠির অগ্রবর্তী অংশ হয়েও কোন অনাচারের বিরুদ্ধে আমরা আমাদের যৌক্তিক প্রতিবাদগুলো নিয়ে নিজেদের আড়ালে রেখে মুখোমুখি হতে পারছি না ভয়ে, অনিহায়, সঙ্কোচে, নির্লিপ্ততায় বা এড়িয়ে যাবার সুবিধাবাদী মানসিকতায়। খুব অল্প সংখ্যায়, যার হার নগন্য, মানসিক দৃঢ়তা নিয়ে সামনে বুক উচিয়ে দাঁড়াচ্ছি ঠিকই, তবে তা কি খুব একটা প্রভাব ফেলতে পারছে ? হতে পারে আমাদের প্রতিবাদের আরেকটা ধারা যৌক্তিক ও আইনসঙ্গতভাবেই কর্তৃপক্ষীয় বা প্রাতিষ্ঠানিকতার মুখাপেক্ষী হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে সমস্যা সমাধানের প্রধান অনুষঙ্গ হয়ে যাচ্ছে কর্তৃপক্ষীয় সদিচ্ছা, দায়িত্বশীলতা বা প্রয়োজনীয় দায়বদ্ধতাই। এখানে প্রশ্ন এসে যায়, উদ্দেশ্যমূলকভাবে সংঘঠিত কোন অনাচারের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় সক্রিয়তার বদলে যদি দায়িত্বহীন নিষ্ক্রিয়তাই প্রদর্শন করতে থাকে তাহলে কি অন্যায় অবিচার ও চলমান অনাচারগুলো প্রতিবাদমুখরতার মুখোমুখি বাধা না পেয়ে নির্বিরোধ চলতেই থাকবে ? আমাদের পর্যবেক্ষণ পরিসরটাকে বড় করে রাষ্ট্রীয় পরিসরে বিশ্লেষণ করলে কী দেখতে পাই আমরা ?
ছোট্ট সামান্য একটা কমিউনিটি ব্লগের আপত্তিকর একটা পোস্টের সাথে রাষ্ট্রীয় পরিসরে বড় বড় অনাচারগুলোর সমান্তরাল বিশ্লেষণে যাদের আপত্তি রয়েছে, তা উত্থাপনের আগে আসুন না আরেকটু ফ্রয়েড পাঠ করে নেই। সাধারণদৃষ্টিতে গুরুত্বহীন তুচ্ছ বিষয়গুলোও যে কত গুরুত্ববহ তা আমরা ফ্রয়েডের বক্তব্য থেকেই পেয়ে যাই-
‘...কাজকর্মের ছোটখাটো ত্রুটি-বিচ্যুতি যেগুলি স্বাভাবিক মানুষ ও স্নায়ুরোগী উভয়ের মধ্যেই দেখা যায়, যেগুলির সম্বন্ধে সাধারণত কোনো গুরুত্বই দেওয়া হয় না- কথা বলার সময় বেফাঁস কিছু বলে ফেলা, কোনো কিছু ভুলে যাওয়া (যেমন, পরিচিত কাউকে সম্বোধনের সময় তার নামটি মনে না পড়া ইত্যাদি)। এ ধরনের সমস্যায় আমরা নিজেরাই বহুবার আক্রান্ত হই- ভুল শব্দ লিখে ফেলা বা পড়ার সময় ভুল পড়ে ফেলা, জিনিসপত্র হারিয়ে ফেলা বা হাত থেকে কিছু ফসকে যাওয়া। এগুলি এমনই সব ত্রুটি, যেগুলির কোনো মনস্তাত্ত্বিক প্রেক্ষাপট খুঁজতে কেউ চেষ্টা করে না। এমন ঘটনাগুলি সমালোচনা ছাড়াই পার পেয়ে যায় এই বলে যে- অমনোযোগিতা, অন্যমনস্কতা ইত্যাদির ফলে এটা ঘটেছে। এছাড়া এগুলি এমনই কাজ বা ভঙ্গিমা যে কোনো মানুষ যখন এমন ঘটনা ঘটিয়ে ফেলে তখন তার নিজের তা চোখেই পড়ে না- কোন জিনিস নিয়ে খেলার ছলে নাড়াচাড়া করা, মনে মনে গুনগুন করা, নিজেরই শরীরের কোনো অঙ্গ বা পোশাকের অংশ নিয়ে খেলা করা ইত্যাদি।
এই ছোট ছোট বিষয়গুলি- আচরণের ত্রুটি, এলোমেলো কাজকর্ম ইত্যাদিকে লোকে যেমন ভাবে এগুলি মোটেই তেমন তাৎপর্যহীন নয়। এক ধরনের নীরবতার চক্রান্তের শরিক হয়ে পড়েই এমনটা ভাবে তারা। এই ঘটনাগুলির সর্বদাই কিছু অর্থ থাকে- কোন্ পরিস্থিতি থেকে এগুলির উদ্ভব তা বিচার করে নিশ্চিতভাবেই এগুলির ব্যাখ্যা করা যায়। এক্ষেত্রেও আর একবার দেখা যায় যে এগুলি সেই সব মনোভাব ও আবেগজনিত তাড়না যাদের জোর করে নিবৃত্ত করতে হয় এবং নিজেরাই চেতনার থেকে গোপন রাখতে হয়। অথবা তারা বস্তুতপক্ষে সেই একই অবদমিত আবেগ ও জটিলতা থেকে সৃষ্টি হয়েছে, যেগুলি উপসর্গ ও স্বপ্নের সৃষ্টি করে থাকে।
সুতরাং এমন আচরণগুলি নিজেরাই উপসর্গ হিসাবে বিবেচিত হবার যোগ্য। স্বপ্নের মতো এগুলিকে পরীক্ষা করলেও মনের অবগুণ্ঠিত দিকগুলি উন্মোচিত হতে পারে। কোনো মানুষের সবচেয়ে গভীর ও গোপনীয় গুপ্তকথাগুলি এ ধরনের আচরণের মাধ্যমে প্রকাশ পাওয়া সম্ভব।...’
কেউ হয়তো বলতে পারেন যে এগুলো ব্যক্তিক আচরণ মাত্র। কিন্তু একটা একটা ব্যক্তি যোগ করে করেই বৃহৎ জনগোষ্ঠী।
মনোসমীক্ষণে সম্মোহন পদ্ধতি পরিত্যাগ করে ‘অবাধ অনুষঙ্গ’ পদ্ধতি (অর্থাৎ যে ব্যক্তির মনকে অনুসন্ধান করা হচ্ছে তার মনে যা আসছে সেটাই বলতে তাকে উৎসাহিত করা) গ্রহণের যৌক্তিকতা বিশ্লেষণ করে সিগমুন্ড ফ্রয়েডের দেয়া বক্তৃতা সংবলিত ‘মনোবিশ্লেষণ’ শিরোনামের সুস্মিতা বন্দ্যোপাধ্যায় কৃত বাংলায় অনুদিত বইটি পড়তে পড়তে মনটা বিশ্লিষ্ট হয়ে গেলো দেশের বর্তমান প্রবহমান ঘটনাবলীর দিকে। ভাষার জন্য রক্ত দেয়া থেকে শুরু করে লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জনের গৌরবদীপ্ত যে জাতি, ধর্মনিরপেক্ষতা ছিলো যার উল্লেখযোগ্য তিলক, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বিক্ষোভে ফেটে রাস্তায় নেমে পড়ার ইতিহাস ধারণ করেও সে জাতির বুকে আজ জরুরি আইনকেও বুড়ো আঙুল দেখানোর দুঃসাহস নিয়ে ধর্মান্ধ মৌলবাদের দুঃসহ উত্থান, জাতির সংস্কৃতির ঐতিহ্যবাহী ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার দর্পিত ঘোষণা ও তা বাস্তবায়ন বা রাষ্ট্রের শীর্ষ ক্ষমতা ভোগ-দখলের স্বাদ নেয়া কোন নেত্রীর নির্লজ্জভাবে দুরভিসন্ধিমূলক চার চারটি জন্মতারিখের প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবহার কিংবা অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলা চরিত্রহীন রাষ্ট্রীয় সম্পদ আত্মসাৎকারীরা একে একে অনৈতিক ছাড়া পেয়ে ফুলের মালায় ভেসে যাওয়া ইত্যাদি ইত্যাদির প্রেক্ষিতেও জাতির এমন দুর্ভাগ্যজনক নির্লিপ্তির কারণ মনোসমীক্ষণের কোন্ পদ্ধতি দিয়ে বিশ্লেষণ করবো ! সংগ্রামী জাতি হিসেবে পরিচিত বাঙালির রক্ত কোন্ অবদমিত প্রভাবে এমন প্রতিবাদহীনতার তীব্র শীতলতায় আক্রান্ত হয়ে গেছে ?
মনোবিজ্ঞানে গণহিস্টিরিয়া নামে যে বিষয়টি রয়েছে তা হচ্ছে যুক্তিহীন সংবেদনশীলতায় দেখাদেখি শোনাশুনি হঠাৎ ফেটে পড়ার মতো এক ধরনের গোষ্ঠী প্রণোদনা। মনোবিজ্ঞানের পরিভাষায় এই প্রকাশভঙ্গি পজিটিভ গোত্রের অর্থাৎ প্রতিক্রিয়া প্রকাশিত বা দৃশ্যমান। কিন্তু কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয়ার মতো গণহিস্টিরিয়ার নেগেটিভ প্রকাশ ঘটে কিনা আমার জানা নেই। মনোসমীক্ষণের বিন্দু-বিসর্গও বুঝিনা যেহেতু, সৌখিন পাঠক হিসেবে কল্পনারাজ্যের বিস্তার দিয়ে তো আর কোন কিছুর ব্যাখ্যা করা চলে না। তবু মোটাবুদ্ধিতে নিজে নিজে ভাবি, এই জাতি বারে বারে দাগা খেতে খেতে বুঝি অথর্ব অনুভূতিশূন্যতার পর্যায়ে নেমে যাচ্ছে। তাই আর কোনো অন্যায়ই তার কাছে গুরুতর হয়ে সংবেদী হয়ে ওঠছে না। বরং নিজস্ব দুর্বলতা আর অসহায়তা নিয়ে অন্যায় অবিচার সয়ে যাওয়ার অভ্যস্ততায় একটা বোধশূন্যতার প্যাটার্ণ বুঝি পেয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। বহিঃস্থ সব প্রণোদনা থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে শুঁয়াপোকার মতো নিজের চারদিকে এমন একটা প্রতিরোধ বলয় তৈরি করে ফেলছে যা জাতির জন্য সত্যিই এক দুর্ভাগা আগামীর সম্ভাবনাকে প্রকট করে তুলছে। কিন্তু মনোবিশ্লেষক ফ্রয়েডও যখন এরকম একটা হতাশাজনক প্রেক্ষিত তুলে ধরেন, তখন আর সতর্ক না হয়ে পারা যায় না।
‘...এ রোগের উৎসের যত গভীরে যাওয়া যাবে ততই দেখা যাবে মানবমনের অন্যান্য সৃষ্টির সঙ্গে, এমন কি খুব মূল্যবান কিছুর সঙ্গেও, স্নায়ুরোগের সম্বন্ধ রয়েছে।... আমাদের সভ্যতার উচ্চমান এবং আভ্যন্তরীণ অবদমনের চাপের শিকার হয়ে আমরা অনেক সময় দেখি যে সাধারণত বাস্তব জগৎ মোটেই যথেষ্ট তৃপ্তিদায়ক নয়। সেই কারণেই এক কাল্পনিক জীবনকে আমরা প্রশ্রয় দিই, যে-জীবনে আমরা বাস্তবের ঘাটতিকে পূরণ করার চেষ্টা করি ইচ্ছা-পূরণের মাধ্যমে। এই কল্পনাগুলি রোগীর ব্যক্তিত্বের মূল সুর এবং তার অবদমিত আবেগেরই অনেকটা অবলম্বনে গঠিত হয়। সফল ও উদ্যমী মানুষ তাঁরাই, যাঁরা এই মনগড়া কল্পনাকে বাস্তবে রূপ দেন। যেখানে এটি বাইরের জগতের প্রতিবন্ধক বা রোগীর নিজস্ব দুর্বলতার জন্য ব্যর্থ হয়, সেখানে সে বাস্তব জগৎ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া শুরু করে এবং নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে কল্পনার তৃপ্তিদায়ক জগতে সরে যায়। এই কল্পনার বিষয়বস্তুগুলি রোগ-উপসর্গে পরিণত হয় যে ক্ষেত্রে সে মনোরোগের শিকার হয়। কিন্তু অনুকূল পরিবেশের ক্ষেত্রে সেই রোগপর্যায় থেকেও রোগীর পক্ষে কল্পনা থেকে এক বিকল্প পথে বাস্তবজীবনে ফিরে আসা সম্ভব হয়। তা না হলে শৈশবের দিকে পশ্চাদগমন করে বাস্তব থেকে স্থায়ীভাবে বিচ্যুত হয়ে যাবে সে।
এমন কোনো ব্যক্তির যদি শৈল্পিক সত্তা (যেটি এখনও একটি মনোবৈজ্ঞানিক বিস্ময়) থাকে, তাহলে সে তার কল্পনাগুলিকে উপসর্গের পরিবর্তে শৈল্পিক সৃজনশীলতায় রূপান্তরিত করতে পারে। এইভাবে সেই ব্যক্তি স্নায়ুরোগের পীড়ন থেকে রেহাই পেতে পারে এবং সেই সঙ্গে ঘোরালো পথে বাস্তবের সঙ্গে তার সম্পর্ককে আবার ফিরে পেতে পারে। যদি বাস্তবের সঙ্গে বিরোধ বজায় থাকে এবং যদি এই মহার্ঘ শৈল্পিক উপহারটি অনুপস্থিত থাকে বা অপ্রতুল হয়, তাহলে তার কামাবেগ (libido) কল্পনার উৎসে- শৈশবে- প্রত্যাবর্তনের পথ অবধারিতভাবে বেছে নেবে এবং শৈশবকালীন ইচ্ছার পুনরুত্থান অবশেষে স্নায়ুরোগে পর্যবসিত হবে। আজকের দিনে স্নায়ুরোগ হয়ে দাঁড়িয়েছে আশ্রম বা সঙ্ঘারামের মতো- যেগুলি জীবনে হতোদ্যম, হতাশ ও জীবনসংগ্রামের পক্ষে দুর্বল মানুষদের আশ্রয়ে পরিণত হয়েছে।’
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অভাবনীয় উৎকর্ষতার এই পর্যায়ে এসে মধ্যযুগীয় ধর্মান্ধ বর্বরতার গোষ্ঠীবদ্ধ যে নমূনাগুলো চারদিকে বিস্তারলাভ করছে, ফ্রয়েডীয় বক্তব্য দিয়ে ব্যাখ্যা করতে গেলে তো আমাদেরকে আঁৎকে উঠতে হয় ! এইসব অনাচারের বিরুদ্ধে নিশ্চুপ হয়ে যাওয়া আমাদের এককালের সরব সচেতন জনগোষ্ঠি যদি হতোদ্যম হতাশায় আক্রান্ত হয়ে এইরকম সঙ্ঘারামের আশ্রয়তলে নির্বান খুঁজে খুঁজে কামাবেগ বা লিবিডোর বিকল্প প্রকাশ হিসেবে ধর্মীয় উগ্রতার পুষ্টিবৃদ্ধি ঘটাতে থাকে, আমাদের স্বপ্নের আগামীর জন্য কী ভয়াল সংকট অপেক্ষা করছে তা কি ভেবে দেখছি আমরা ?
অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমরা কতটুকু সোচ্চার ? গবেষণার রীতিনীতি বিষয়ে সম্পূর্ণ অনভিজ্ঞতার দায় মাথায় নিয়ে এই পরীক্ষণ পদ্ধতি হাস্যকর হলেও উত্থিত প্রশ্নের দায় কি এড়াতে পারি আমরা ?
[Image: from internet]
[sachalayatan]
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment